বিশ্বকাপের মাঠে বাংলাদেশি নারী ক্রীড়াবিদদের পদচারণা, ক্রীড়া উন্নয়নে কাতারের সঙ্গে সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত

ছবিঃ সংগ্রহকৃত
কাতারের রুসাই স্টেডিয়াম—যেখানে ইতিহাস গড়ে আর্জেন্টিনা জিতেছিল বিশ্বকাপ ফাইনাল—সেই ঐতিহাসিক ভেন্যুতে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের চার নারী ক্রীড়াবিদের চোখে ছিল বিস্ময় ও গর্বের ছাপ। সেই ড্রেসিং রুম, যেখানে বিশ্বকাপের রাতে মেসিরা উদযাপন করেছিলেন জয়ের আনন্দ, সেখানে দাঁড়িয়ে নিজেদের উপস্থিতিকে অবিশ্বাস্য ও অকল্পনীয় বলেই মনে হয়েছে তাদের।
বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে গেল সপ্তাহে কাতারে অনুষ্ঠিত আর্থানা শীর্ষ সম্মেলন-এ অংশ নেন বাংলাদেশের চার উদীয়মান নারী ক্রীড়াবিদ। ক্রিকেটার সুমাইয়া আক্তার ও শারমিন সুলতানা এবং ফুটবলার আফিদা খন্দকার ও শাহেদা আক্তার ছিলেন সেই প্রতিনিধি দলে।
তাদের সম্মানজনক এই সফরে রয়াল ফ্যামিলির বসার জায়গা থেকে শুরু করে বিশ্বকাপের মাঠ ঘুরে দেখার সুযোগও হয়। যা সাধারণ কারো পক্ষে কল্পনাও করা সম্ভব নয়। একজন ক্রীড়াবিদের ভাষায়, “প্রথমবার বিশ্বকাপ মাঠে ঢোকার অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন, আমাদের বিশেষভাবে যত্ন নেওয়া হয়েছে।”
সফরের মূল উদ্দেশ্য ছিল ক্রীড়া সংলাপ ও সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা। কাতারের ক্রীড়া উন্নয়নের মডেল থেকে বাংলাদেশ কীভাবে উপকৃত হতে পারে, সেই প্রশ্নে উঠে এসেছে সম্ভাবনার নতুন অধ্যায়। কাতারের রিহ্যাব সেন্টার, যেখানে বিশ্বের নামি দামি অ্যাথলেটরা ইনজুরি পরবর্তী পুনর্বাসনে যান, এমন সুবিধা বাংলাদেশেও তৈরি করার আশ্বাস দিয়েছে কাতার ফাউন্ডেশন।
বাংলাদেশি নারী ক্রীড়াবিদদের অভিজ্ঞতা ও সমস্যা শুনে মুগ্ধ হন কাতার ফাউন্ডেশনের প্রধান। তারা জানিয়েছেন, বাংলাদেশের নারী ক্রীড়াবিদদের জন্য একটি ডেডিকেটেড ডরমিটরি ও বিশেষ জিমনেশিয়াম তৈরি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা চলছে। এতে দেশের নারী ক্রীড়াঙ্গনের অন্যতম প্রধান সমস্যা—আবাসন ও প্রশিক্ষণ সুবিধার অভাব অনেকটাই কাটিয়ে ওঠা যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে ক্রীড়া সহযোগিতা শুধু একমুখী নয়। কাতারে ক্রিকেট জনপ্রিয়তা পাচ্ছে এবং সেখানে খেলাটি প্রসারে বাংলাদেশের সাহায্য নিতে চায় তারা। এই সফরের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে একটি যৌথ ক্রীড়া উন্নয়ন উদ্যোগের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হলো বলে মত বিশ্লেষকদের।
এই সফর শুধুমাত্র একজন ক্রীড়াবিদ হিসেবে নয়, বরং বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের প্রতিনিধিত্বে অংশগ্রহণ করে আন্তর্জাতিক মঞ্চে দেশের সম্মান বাড়িয়েছেন সুমাইয়া, শারমিন, আফিদা ও শাহেদা। এই উদ্যোগ আগামী দিনের নারী ক্রীড়া উন্নয়নে একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।