বনানীতে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পারভেজকে ছুরিকাঘাতে হত্যা: হাসাহাসির অভিযোগ, নাকি পেছনে অন্য রহস্য?

বনানীতে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পারভেজকে ছুরিকাঘাতে হত্যা:
নিজস্ব প্রতিবেদক
সংশোধনঃ এপ্রিল 23, 2025 6:44 পূর্বাহ্ন

রাজধানীর বনানীতে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম পারভেজকে ছুরিকাঘাতে হত্যার ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। অভিযোগ, পারভেজ দুই নারী শিক্ষার্থীকে দেখে হাসাহাসি করায় এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। তবে প্রশ্ন উঠছে—শুধু হাসাহাসির অভিযোগেই কি এমন নৃশংস হত্যা সম্ভব, নাকি ঘটনার পেছনে রয়েছে আরও গভীর কোনো রহস্য?

ঘটনার সূত্রপাত ১৯ এপ্রিল বিকেলে। পরীক্ষা শেষে বনানীর একটি দোকানে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলেন পারভেজ। অভিযোগ অনুযায়ী, পাশের দোকানে থাকা দুই নারী শিক্ষার্থীকে দেখে হেসে ফেলেন তিনি। এরপর ওই দুই শিক্ষার্থী তাদের বয়ফ্রেন্ডদের ডেকে আনেন। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে ক্যাম্পাসের জুনিয়রদের সঙ্গে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে ছুরিকাঘাতে মারাত্মকভাবে আহত হন পারভেজ।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, পারভেজকে ইভটিজিংয়ের অভিযোগ ভিত্তিহীন ছিল। একজন প্রত্যক্ষদর্শীর ভাষ্য, “যদি অন্য কেউ হতো, আমরা হয়তো ভাবতাম ইভটিজিং করেছে, কিন্তু পারভেজ ভাইয়ের ক্ষেত্রে এটা বিশ্বাসযোগ্য না।”

জানা গেছে, অভিযুক্ত তিন তরুণ সম্প্রতি ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছেন। তাদের আচরণ ছিল হঠাৎ আগ্রাসী এবং তারা স্থানীয় প্রভাব খাটিয়ে দাপট দেখিয়ে যাচ্ছিল। এমনকি কিশোর গ্যাংয়ের সাহায্য নিয়ে তারা পারভেজের ওপর হামলা চালায় বলে অভিযোগ উঠেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টোরিয়াল বডি ঘটনার কিছুটা মীমাংসাও করে দেয়। পারভেজ সরি বলায় ঘটনাটি সেখানে শেষ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তারপরও হামলা থেকে রেহাই পাননি তিনি।

নিহত পারভেজের সহপাঠীরা বলছেন, ঘটনাটি পূর্বপরিকল্পিত এবং সেখানে স্থানীয় গ্যাং সদস্যদের হাত রয়েছে। দুই নারী শিক্ষার্থীর পরিচয় পাওয়া গেছে—তারা ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্স-এর শিক্ষার্থী। একজনের নাম ফাতেমা তাহসিন ঐশী, অন্যজন ফারিয়া হক টিনা। ঘটনার পর থেকে তারা উধাও। মোবাইল বন্ধ, ক্যাম্পাসে অনুপস্থিত। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের সাময়িক বহিষ্কার করেছে।

প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী মাহাতীর নিয়াজ তোষার, এলএলবি বিভাগের পিয়াস ও বিবিএর মেহরাজসহ আরও কয়েকজনের নাম সিসি ক্যামেরার ফুটেজে শনাক্ত হয়েছে। জানা গেছে, ঐশীর বয়ফ্রেন্ড পিয়াসও এই হামলার সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

ঘটনার সঙ্গে জড়িত তিনজনকে ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। বাকি অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন পারভেজের সহপাঠী ও শিক্ষকরা।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, “যেই জড়িত থাকুক না কেন, তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। তদন্ত চলছে, বাকিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।”

এই নির্মম হত্যাকাণ্ড ঘিরে শিক্ষার্থী সমাজে শোক ও ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। প্রশ্ন উঠছে, পারভেজ কি কেবল একটি ভুল বোঝাবুঝির শিকার, নাকি এর পেছনে আছে ক্ষমতার অপব্যবহার এবং অপরাধচক্রের ছায়া? তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত উত্তরের অপেক্ষায় থাকবে গোটা জাতি।

সম্পর্কিত-
0%
0%
0%
0%