আহমাদ মানাসরার মুক্তি: নয় বছর পর কারামুক্ত ফিলিস্তিনি তরুণ

ছবিঃ সংগ্রহকৃত
একজন ফিলিস্তিনি তরুণ, যে মাত্র ১৩ বছর বয়সে ছুরি হামলার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন, নয় বছরেরও বেশি সময় কারাভোগ করার পর অবশেষে মুক্তি পেয়েছেন। কারাবন্দি অবস্থায় তিনি গুরুতর মানসিক সমস্যায় ভুগলেও বারবার তার আগাম মুক্তির আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল।
আহমাদ মানাসরা, বর্তমানে ২৩ বছর বয়সী, বৃহস্পতিবার মুক্তি পান বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবী খালেদ জাবারকা।
পূর্ব জেরুজালেমের বাসিন্দা আহমাদ ২০১৫ সালে অবৈধ ইসরায়েলি বসতি পিসগাত জ়িইভ এলাকায় তার চাচাতো ভাই হাসান মানাসরার সঙ্গে থাকার অভিযোগে দণ্ডিত হন।
১৫ বছর বয়সী হাসান ঘটনাস্থলে ইসরায়েলি এক ব্যক্তির গুলিতে নিহত হন। অন্যদিকে আহমাদ ইসরায়েলিদের দ্বারা বেধড়ক মারধরের শিকার হন এবং একজন ইসরায়েলি চালকের গাড়িচাপায় গুরুতর আহত হন। তার মাথায় মারাত্মক চোট ও অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ হয়।
ঘটনার একটি গ্রাফিক ভিডিও, যেখানে আহমাদ রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় পড়ে আছেন এবং ইসরায়েলিরা তাকে ব্যঙ্গ করছে—মিলিয়ন মিলিয়ন বার দেখা হয়েছিল।
যদিও আহমাদ কাউকে ছুরি মারেননি এবং আদালতও তা স্বীকার করেছিল, তবুও তার বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ আনা হয়।
২০২১ সালের নভেম্বর থেকে আহমাদকে একাকী সেলে রাখা হয়, এক বন্দির সঙ্গে হাতাহাতির পর। পরের বছর তার পরিবার ও আইনজীবীরা জানান, তাকে দিনে ২৩ ঘণ্টা ছোট একটি সেলে বন্দি রাখা হয়, এবং সে ভয় ও বিভ্রমে ভুগত, ঘুমাতে পারত না। তার আইনজীবী জানান, আহমাদ আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন।
পরিবার জানায়, কিছু মাস অন্তর তাকে অন্য একটি কারাগারের মানসিক রোগীদের ওয়ার্ডে স্থানান্তর করা হতো, যেখানে তাকে স্থিতিশীল রাখার জন্য ইনজেকশন দেওয়া হতো।
২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে, কারাবন্দির পর প্রথমবারের মতো ‘ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস’ (MSF) সংগঠনের একজন বহিরাগত চিকিৎসক তাকে দেখার অনুমতি পান। ওই চিকিৎসক জানান, আহমাদ সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত এবং কারাবাস চালিয়ে গেলে তার মানসিক স্বাস্থ্যের স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে।
‘বিরাট স্বস্তি’
আহমাদের মুক্তির জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাতিসংঘসহ বহু দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থা বহুবার আবেদন জানিয়ে আসছিল।
তবে তার বয়স ও মানসিক অবস্থার কথা বিবেচনায় না নিয়েই ইসরায়েলি আদালত তাকে আগাম মুক্তির অযোগ্য ঘোষণা করে, কারণ তার বিরুদ্ধে ‘সন্ত্রাসবাদ’-এর অভিযোগ আনা হয়েছিল।
আহমাদের দণ্ড ঘোষণার আগেই ইসরায়েলি আইন পরিবর্তন করে ১২ বছর বয়সী শিশুদেরও ‘সন্ত্রাসী অপরাধে’ দোষী সাব্যস্ত করার অনুমতি দেওয়া হয়।
জাবারকা জানান, ইসরায়েলি কারা কর্তৃপক্ষ তাকে নাফহা কারাগার থেকে মুক্ত না দিয়ে একাকী একটি ফাঁকা এলাকায় ছেড়ে দেয়, যাতে তার পরিবার তাকে গ্রহণ করতে না পারে।
একজন পথচারী তাকে দক্ষিণ নেগেভ অঞ্চলের বিয়ার শেভা এলাকায় খুঁজে পান এবং তার পরিবারকে খবর দেন। পরে পরিবারের সঙ্গে পুনর্মিলন ঘটে।
জাবারকা নিশ্চিত করেন, আহমাদ বর্তমানে তার বাবা-মায়ের কাছে ফিরে এসেছেন।
“আমরা জানি, তিনি জেলে খুব অসুস্থ ছিলেন। এখন তার স্বাস্থ্য সম্পর্কে আরও জানার অপেক্ষায় আছি,” বলেন জাবারকা।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের আঞ্চলিক পরিচালক হেবা মোরায়েফ আহমাদের মুক্তিকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, “এটি তার এবং তার পরিবারের জন্য বিরাট স্বস্তি।”
“তবে যে অন্যায়, নির্যাতন, ট্রমা এবং দুর্ব্যবহার তিনি জেলের মধ্যে সহ্য করেছেন, তা কোনো কিছু দিয়েই পূরণ করা সম্ভব নয়,” —বলেন মোরায়েফ।