এক দিনে ২৬ ব্যাংক থেকে ৩৫৩ মিলিয়ন ডলার কেনার কারণ জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ডলার বাজার স্থিতিশীল রাখতে প্রতিদিন পর্যবেক্ষণ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক

বাংলাদেশ ব্যাংক এখন প্রতিদিন দেশের প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদারদের মুদ্রার ওঠানামার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ বাজারে ডলারের যোগান, চাহিদা ও দামের প্রবণতা পর্যবেক্ষণ করছে।
মানি লন্ডারিং দমন কার্যক্রমের প্রভাব পড়ায় প্রবাসী আয়ে (রেমিট্যান্স) ও রপ্তানি আয় বেড়েছে। এতে বাজারে ডলারের সরবরাহও বৃদ্ধি পেয়েছে। সাধারণত এ অবস্থায় ডলারের দাম কমে যাওয়ার কথা থাকলেও বাংলাদেশ ব্যাংক বাজার স্থিতিশীল রাখতে অতিরিক্ত ডলার কিনে নিচ্ছে।
সোমবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২৬টি বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ৩৫ কোটি ৩০ লাখ ডলার কিনেছে, প্রতি ডলারের বিনিময় হার ধরা হয়েছে ১২১ টাকা ৭৫ পয়সা। চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক ১৭৪ কোটি ডলারের বেশি কিনে নিয়েছে। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়েছে, তবে ডলারের দাম এখনও ১২০ টাকার ওপরে রয়েছে।
প্রতিদিন সকালে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলারের একটি রেফারেন্স রেট প্রকাশ করে। বাজারে হার সেই মানদণ্ডের নিচে নামলে নিলামের মাধ্যমে ব্যাংকগুলো থেকে ডলার কিনে নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। জুলাই থেকে নিয়মিতভাবে এই প্রক্রিয়ায় ব্যাংকগুলোর উদ্বৃত্ত ডলার কেনা হচ্ছে। এতে কার্যত ডলারের দাম বাজারনির্ধারিত হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্তগুলোর একটি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, রিজার্ভ বর্তমানে আইএমএফের ঋণ কর্মসূচির ন্যূনতম শর্তের চেয়ে বেশি পর্যায়ে রয়েছে।
২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্ববাজারে জোগান সংকট ও চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশে ডলারের দাম ৮৫ টাকা থেকে ১২২ টাকায় পৌঁছে যায়। এতে দেশে মূল্যস্ফীতি তীব্র আকার ধারণ করে। গত তিন অর্থবছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি রিজার্ভ থেকে বিক্রি করেছে জ্বালানি, সার ও খাদ্য আমদানির বিল মেটাতে।
তবে ২০২৪ সালের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রিজার্ভ তলানিতে নেমে যাওয়ায় সরকারী আমদানি খাতে ডলার সরবরাহ বন্ধ করতে বাধ্য হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মার্চ ২০২৫ থেকে রিজার্ভ পুনরুদ্ধার হতে শুরু করলে বাংলাদেশ ব্যাংক আবারও বাজার থেকে ডলার কেনা শুরু করে।
এ সময়ে রেমিট্যান্স সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। ২০২৪–২৫ অর্থবছরে প্রবাসী আয় দাঁড়ায় ৩০.৩২ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ২৭ শতাংশ বেশি। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) রেমিট্যান্স এসেছে প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ১৮.৪১ শতাংশ বেশি।
অন্যদিকে, গত অর্থবছরে রপ্তানি আয় বেড়েছে ৭.৭২ শতাংশ, আর আমদানি ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৬৮.৩৫ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ২.৪৪ শতাংশ বেশি।
তথ্যসূত্র: বাংলাদেশ ব্যাংক