ফেরারি আসামিদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা: বড় পালাবদলের ইঙ্গিত ইসির নতুন উদ্যোগে
ফেরারি আসামীদের প্রার্থীতা বাতিল, অনলাইন মনোনয়ন বন্ধসহ ৪৫টি সংশোধনী প্রস্তাব করেছে নির্বাচন কমিশন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে ফের এক বড় পালাবদলের ইঙ্গিত দিচ্ছে নির্বাচন কমিশনের নতুন উদ্যোগ। আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ -এর খসড়া চূড়ান্ত করেছে ইসি। এতে যুক্ত হয়েছে নতুন বিধান—আদালত কর্তৃক ফেরারি আসামী ঘোষিত কোন ব্যক্তি সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না।
এই বিধান কার্যকর হলে গত বছরের ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে আত্মগোপনে থাকা বা বিদেশে পালিয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগের বহু শীর্ষ নেতা কার্যত ত্রয়দশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে ছিটকে যাবেন। শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাসহ অনেকে আদালতের মামলায় হাজির না হওয়ায় ফেরারি ঘোষিত হয়েছেন এবং ইতোমধ্যে আদালতে উপস্থিত হওয়ার বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশিত হয়েছে।
নতুন বিধান অনুযায়ী শুধু সাজাপ্রাপ্ত নন, বরং মামলার রায় ঘোষণার আগেই শুনানিতে অনুপস্থিত থেকে ফেরারি হলে তারাও অযোগ্য হবেন। একইসঙ্গে অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সুযোগ বাতিল করে প্রার্থী বা তার সমর্থককে সরাসরি রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এতে আত্মগোপনে থাকা নেতাদের জন্য প্রার্থী হওয়ার পথ আরও কঠিন হয়ে গেল।
ফেরারি আসামীদের অযোগ্য করার বিধানকে ইতিবাচক ও নেতিবাচক উভয় দিক থেকে দেখছেন সাবেক নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য জেসপিন টুলি। তিনি মনে করেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে এমন বিধান থাকলেও এবার সংসদ নির্বাচনের আইনে যুক্ত হওয়ায় রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ তৈরি হবে। তবে প্রশাসন ও পুলিশের প্রভাব খাটানো হলে নিরীহ অনেকেই হয়রানির শিকার হতে পারেন বলে তিনি সতর্ক করেছেন।
খসড়া প্রস্তাবে অন্তত ৪৫টি সংশোধনী আনা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—
- একক প্রার্থী না থাকলে ‘না ভোট’-এর সুযোগ রাখা,
- সেনা, নৌ, আকাশ ও কোস্টগার্ডকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত করা,
- প্রার্থীর দেশি-বিদেশি সম্পদ হলফনামায় উল্লেখ বাধ্যতামূলক করা,
- মিথ্যা তথ্য দিলে সংসদ সদস্য পদ বাতিল,
- জামানত ২০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা নির্ধারণ,
- নিজ এলাকার ভোটারকে এজেন্ট করার শর্ত,
- পুরো আসনের ভোট বাতিলের ক্ষমতা পুনরায় ইসির হাতে ফিরিয়ে আনা।
ইভিএম সংক্রান্ত সব ধারা বাদ দিয়ে খসড়াটি এখন আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। অধ্যাদেশ আকারে জারি হলে নতুন বিধান কার্যকর হবে, যা আওয়ামী লীগের পলাতক নেতাদের নির্বাচনী ভবিষ্যতের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলবে।
তথ্যসূত্র: নির্বাচন কমিশন