থাইল্যান্ডে ফের প্রধানমন্ত্রীর পতন, আদালতের রায়ে পদচ্যুত পেতংটার্ন শিনাওয়াত্রা

থাইল্যান্ডে ফের প্রধানমন্ত্রীর পতন, আদালতের রায়ে পদচ্যুত পেতংটার্ন শিনাওয়াত্রা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশঃ আগস্ট 29, 2025 4:55 অপরাহ্ন

থাইল্যান্ডের সাংবিধানিক আদালত আবারও কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। শুক্রবারের রায়ে প্রধানমন্ত্রী পেতংটার্ন শিনাওয়াত্রাকে পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছে। এর ফলে দেশটিতে আবারও রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

আদালতের নয় সদস্যের মধ্যে সাতজন রায় দেন যে, গত জুনে কম্বোডিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী হুন সেনের সঙ্গে এক ফোনালাপে পেতংটার্ন নৈতিক মানদণ্ড ভঙ্গ করেছেন। ওই ফোনালাপে তাকে সীমান্ত বিরোধ নিয়ে হুন সেনের প্রতি নমনীয় মনোভাব দেখাতে এবং সেনাবাহিনীর এক শীর্ষ কর্মকর্তার সমালোচনা করতে শোনা যায়। হুন সেন পরে সেই কথোপকথন ফাঁস করেন।

পেতংটার্ন ব্যাখ্যা করেছিলেন, তিনি কূটনৈতিক অগ্রগতি অর্জনের জন্য ব্যক্তিগত সম্পর্ক কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু ফাঁস হওয়া কথোপকথন তার দল ফিউ থাইয়ের জন্য বড় ধাক্কা হয়ে আসে। প্রধান জোটসঙ্গী দল সরকার থেকে সরে দাঁড়ায়, সংসদে তার সংখ্যাগরিষ্ঠতা দুর্বল হয়ে পড়ে।

এর আগে জুলাইয়ে আদালত তাকে সাময়িকভাবে স্থগিত করেছিল, তখনই অনেকে ধরে নিয়েছিলেন তিনি তার চার পূর্বসূরির মতো একই পরিণতির মুখে পড়বেন। ফলে শুক্রবারের সিদ্ধান্তকে অপ্রত্যাশিত বলা যাচ্ছে না।

বিজ্ঞাপন

এ নিয়ে টানা পাঁচ প্রধানমন্ত্রীকে সরিয়ে দিল আদালত—তাদের সবাই শিনাওয়াত্রা পরিবারের ঘনিষ্ঠ দলগুলোর নেতৃত্বে ছিলেন। ফলে দেশে ব্যাপকভাবে বিশ্বাস জন্মেছে যে আদালত প্রায়শই রাজতন্ত্রপন্থী রক্ষণশীল শক্তির প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে রায় দিয়ে থাকে।

আদালত ইতিমধ্যেই ১১২টি রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করেছে, যার মধ্যে আছে ফিউ থাইয়ের দুটি পূর্ববর্তী সংস্করণ এবং ২০২৩ সালের নির্বাচনে জয়ী সংস্কারবাদী দল মুভ ফরওয়ার্ড।

কেন হুন সেন শিনাওয়াত্রা পরিবারের সঙ্গে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক ভেঙে দিলেন, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে পেতংটার্নের একটি মন্তব্য—যেখানে তিনি কম্বোডিয়ার নেতৃত্বকে সীমান্ত ইস্যুতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকে ‘অপেশাদার’ বলেন—হুন সেনকে ক্ষুব্ধ করে তোলে। তিনি একে ‘অভূতপূর্ব অপমান’ আখ্যা দিয়ে কথোপকথন ফাঁস করেন। এর পর দুই দেশের সীমান্তে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এবং পাঁচ দিনের সংঘাতে অন্তত ৪০ জন নিহত হন।

এখন সংবিধান অনুযায়ী সংসদ সদস্যদের নতুন প্রধানমন্ত্রী বেছে নিতে হবে। প্রতিটি দল নির্বাচনের আগে তিনজন প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছিল। ফিউ থাই ইতিমধ্যেই দুই প্রার্থী হারিয়েছে—গত বছর স্রেত্থা থাভিসিন এবং এবার পেতংটার্ন। তৃতীয় প্রার্থী চাইকাসেম নিতিসিরি বয়স ও অসুস্থতার কারণে শক্ত প্রার্থী নন। অন্যদিকে সম্ভাব্য বিকল্প ভূমজাইথাই দলের অনুতিন চার্নভিরাকুল, যিনি সম্প্রতি জোট থেকে বেরিয়ে গেছেন।

অন্যদিকে, ভেঙে যাওয়া মুভ ফরওয়ার্ডের প্রাক্তন এমপিরা ‘দ্য পিপলস পার্টি’ নামে নতুন দল গঠন করেছেন। তারা ঘোষণা দিয়েছে, নতুন নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত তারা কোনো জোটে যোগ দেবে না।

যদিও নির্বাচনই সবচেয়ে যৌক্তিক সমাধান বলে মনে হচ্ছে, ফিউ থাই তা চায় না। কারণ দুই বছর ক্ষমতায় থেকেও তারা অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। তাদের আলোচিত ডিজিটাল ওয়ালেট প্রকল্প, যেখানে প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিককে ১০ হাজার বাত দেওয়ার কথা ছিল, তা কার্যত ভেস্তে গেছে। ক্যাসিনো বৈধকরণ কিংবা “ল্যান্ড ব্রিজ” প্রকল্পও আলোর মুখ দেখেনি।

সাম্প্রতিক সীমান্ত যুদ্ধের কারণে জাতীয়তাবাদী মনোভাব চাঙ্গা হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে শিনাওয়াত্রা পরিবারের কম্বোডিয়ার হুন সেনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা এখন তাদের বিরুদ্ধে সন্দেহ আরও বাড়িয়েছে।

একসময় থাইল্যান্ডের রাজনীতিতে অপ্রতিরোধ্য শক্তি ছিল ফিউ থাই। কিন্তু এখন দলটির জনপ্রিয়তা কমতে শুরু করেছে। পর্যবেক্ষকদের মতে, তাদের আগের মতো আধিপত্য ফিরে পাওয়া খুবই কঠিন হয়ে গেছে।


তথ্যসূত্র: BBC

সম্পর্কিত- আইন - আদালত
0%
0%
0%
0%

এই বিভাগের আরও খবর