ফেসবুকের বিরুদ্ধে ৮০০ কোটি ডলারের মামলা, শুনানি শুরু যুক্তরাষ্ট্রে

ফেসবুকের বিরুদ্ধে ৮০০ কোটি ডলারের মামলা, শুনানি শুরু যুক্তরাষ্ট্রে
নিজস্ব প্রতিবেদক
সংশোধনঃ জুলাই 17, 2025 2:51 অপরাহ্ন

যুক্তরাষ্ট্রে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের বিরুদ্ধে বড় ধরনের এক আইনি লড়াই শুরু হয়েছে। ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠান মেটার বিরুদ্ধে অবৈধভাবে ব্যবহারকারীর তথ্য সংগ্রহ এবং বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগে দায়ের করা হয়েছে ৮০০ কোটি মার্কিন ডলারের ক্ষতিপূরণ মামলা। বুধবার (১৬ জুলাই) ডেলাওয়্যার আদালতে এই মামলার আট দিনের শুনানি শুরু হয়েছে।

মামলা করেছেন মেটার বিনিয়োগকারীরা। তাঁদের অভিযোগ, ফেসবুক ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য অবৈধ ও অনৈতিকভাবে সংগ্রহ করে তা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়েছে। এই তথ্য কেলেঙ্কারির দায় মেটা নয়, বরং প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মার্ক জাকারবার্গ এবং অন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিতে হবে বলে দাবি তাঁদের।

কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা কেলেঙ্কারির প্রসঙ্গ

বিনিয়োগকারীরা অভিযোগে উল্লেখ করেন, ২০১৮ সালে কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা নামের একটি রাজনৈতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান লাখো ফেসবুক ব্যবহারকারীর তথ্য সংগ্রহ করে। পরে এই তথ্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রচারে ব্যবহার করা হয়।

এই ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ট্রেড কমিশন (FTC) ফেসবুককে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার জরিমানা করে। এর আগেও, ২০১২ সালে একবার চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগে ফেসবুককে ৫০০ কোটি ডলার জরিমানা দিতে হয়। উভয় ক্ষেত্রেই জরিমানার টাকা মেটার তহবিল থেকে পরিশোধ করা হলেও, বিনিয়োগকারীদের দাবি, এর দায়ভার ব্যক্তিগতভাবে জাকারবার্গ ও সংশ্লিষ্টদের নিতে হবে।

বিনিয়োগকারীদের দাবি ও অভিযোগ

নতুন মামলায় বিনিয়োগকারীরা দাবি করেছেন, ফেসবুকের তথ্য জানার পর জাকারবার্গ নিজের শেয়ার বিক্রি করে ১ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি লাভ করেন। তাঁদের অভিযোগ, অভ্যন্তরীণ তথ্যের ভিত্তিতে এই শেয়ার বিক্রি করা হয়েছে, যা সরাসরি ভিত্তিহীন এবং প্রতারণামূলক কার্যক্রম হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

তবে মেটার আইনজীবীরা এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাঁদের দাবি, জাকারবার্গ কোনো অভ্যন্তরীণ বা গোপন তথ্যের ভিত্তিতে শেয়ার বিক্রি করেননি।

মামলার শুনানি ও সম্ভাব্য পরিণতি

এই মামলার শুনানি ডেলাওয়্যার আদালতের বিচারক ক্যাথালিন ম্যাকরমিকের অধীনে চলছে। মামলার রায় এবং ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত পেতে কয়েক মাস সময় লাগতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই মামলার ফলাফল মেটা এবং এর শীর্ষ কর্মকর্তাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে। প্রমাণিত হলে জাকারবার্গকে ব্যক্তিগতভাবে বিপুল অঙ্কের অর্থ ফেরত দিতে হতে পারে, যা মেটার ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা হবে।

এদিকে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীদের তথ্য সুরক্ষা নিয়ে বিশ্বজুড়ে চলমান বিতর্কে এই মামলা নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তথ্য অধিকার, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণ এবং কর্পোরেট জবাবদিহিতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে প্রযুক্তি খাতের জায়ান্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকা নিয়ে।

সম্পর্কিত-
0%
0%
0%
0%