যুক্তরাষ্ট্র থেকে দক্ষিণ সুদানে ৮ জনকে ফেরত পাঠানো হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের রায়ে পথ প্রশস্ত

যুক্তরাষ্ট্র একাধিক দেশ থেকে আগত ৮ জন অপরাধীকে বিতাড়িত করে দক্ষিণ সুদানে পাঠিয়েছে। দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর অবশেষে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে এই বিতাড়নের অনুমতি মেলে।
এই আটজনের মধ্যে কেবল একজনই দক্ষিণ সুদানের নাগরিক। বাকিরা মিয়ানমার, কিউবা, ভিয়েতনাম, লাওস ও মেক্সিকোর নাগরিক হলেও তাদের নিজ নিজ দেশ গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে বলে জানিয়েছে মার্কিন কর্তৃপক্ষ।
দণ্ডপ্রাপ্ত এই ব্যক্তিরা হত্যাকাণ্ড, যৌন নিপীড়ন ও ডাকাতির মতো গুরুতর অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন। এদের কেউ কেউ ইতোমধ্যে শাস্তির মেয়াদ পূর্ণ করেছেন, কেউ বা শেষ পর্যায়ে ছিলেন।
মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ থেকে CBS নিউজকে সরবরাহ করা একটি ছবিতে দেখা যায়, বন্দিদের হাত-পা শৃঙ্খলাবদ্ধ অবস্থায় বিমানে তোলা হয়েছে।
প্রথমে গত মে মাসে তাদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয়, কিন্তু ম্যাসাচুসেটসের জেলা বিচারক ব্রায়ান মারফির এক আদেশে ফ্লাইটটি জিবুতিতে নামানো হয়। বিচারক বলেন, তৃতীয় দেশে বিতাড়নের আগে সংশ্লিষ্টদের অবগত করার পাশাপাশি অভিবাসন কর্মকর্তা বা অ্যাসাইলাম অফিসারের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ দিতে হবে।
তবে গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষে রায় দেয় এবং বিচারক মারফির আদেশ বাতিল করে। এরপর বৃহস্পতিবার আদালত নিশ্চিত করে যে, বিচারক আর এসব বিষয়ে বাধা দেওয়ার এখতিয়ার রাখেন না। ফলে বিতাড়নের প্রক্রিয়া শুরু হয়।
আইনজীবীরা পরে আরেক বিচারকের হস্তক্ষেপ চাইলেও তিনি জানান, এ বিষয়ে কেবল বিচারক মারফিরই এখতিয়ার রয়েছে। পরে মারফি নিজেই বলেন, সুপ্রিম কোর্টের “বাধ্যতামূলক” রায়ের কারণে তিনি আর এই বিতাড়ন থামানোর ক্ষমতা রাখেন না।
হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের মুখপাত্র ট্রিসিয়া ম্যাকলাফলিন এই বিতাড়নকে “অ্যাক্টিভিস্ট বিচারকদের” বিরুদ্ধে একটি “বিজয়” হিসেবে বর্ণনা করেন।
এদিকে, দক্ষিণ সুদান এখনও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মধ্যেই রয়েছে এবং দেশটি পুনরায় গৃহযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে বলে সতর্ক করেছে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট। দেশটিতে ভ্রমণ সম্পর্কে সতর্ক করে বলা হয়েছে, সেখানে “অপরাধ, অপহরণ ও সশস্ত্র সংঘর্ষ”ের ঝুঁকি রয়েছে।
দক্ষিণ সুদান সরকার এই আটজনকে গ্রেপ্তার করেছে কি না বা তাদের ভাগ্যে কী ঘটবে—তা এখনো স্পষ্ট নয়।
এর আগে এ বছরের শুরুতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও দক্ষিণ সুদান সরকারকে চাপ দিতে দেশটির পাসপোর্টধারীদের সকল ভিসা বাতিল করেছিলেন। কারণ, দেশটি আগেও যুক্তরাষ্ট্রের বিতাড়িত নাগরিকদের গ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল।
ট্রাম্প প্রশাসন বর্তমানে বিতাড়নের নীতিতে পরিবর্তন এনে তৃতীয় দেশগুলোতেও বিতাড়নের পরিকল্পনা করছে। ইতিমধ্যে এল সালভাদর ও কোস্টারিকায় অপরাধী পাঠানো হয়েছে। রুয়ান্ডা এই বিষয়ে আলোচনা করেছে বলেও জানানো হয়েছে। পাশাপাশি বেনিন, অ্যাঙ্গোলা, ইকুয়েটোরিয়াল গিনি, এসোয়াতিনি ও মলডোভাকে সম্ভাব্য গন্তব্য দেশ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে বিভিন্ন মিডিয়া প্রতিবেদনে।
এই ঘটনাটি যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতিতে চলমান পরিবর্তনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তথ্যসূত্র: BBC