লস অ্যাঞ্জেলসে বিক্ষোভে উত্তাল পরিস্থিতি, ট্রাম্পের সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত ঘিরে বিতর্ক

লস এ্যঞ্জালেসে পুলিশের সাথে ভিক্ষক কারীদের সংঘর্ষের দৃশ্য
যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলস শহরে তৃতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ সহিংসতায় রূপ নিয়েছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে বিশৃঙ্খলা উসকে দিচ্ছেন। শহরের কেন্দ্রস্থলে সহিংস বিক্ষোভে পুলিশের টিয়ার গ্যাস, রাবার বুলেট ছোঁড়া এবং রাস্তা অবরোধ ও গাড়ি পোড়ানোর মতো ঘটনাগুলো পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তুলেছে।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইমিগ্রেশন বিভাগের অভিযান এবং বেআইনি অভিবাসীদের আটক করার ঘটনাকে কেন্দ্র করেই বিক্ষোভের সূত্রপাত। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই পরিস্থিতিতে জাতীয় নিরাপত্তার অজুহাতে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের নির্দেশ দেন, যা ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসম এবং লস অ্যাঞ্জেলসের মেয়র কারেন ব্যাস-এর মতের বিরুদ্ধে।
লস অ্যাঞ্জেলস পুলিশ বিভাগ (LAPD) জানায়, সিভিক সেন্টার এলাকায় ‘অবৈধ সমাবেশ’ ঘোষণা করে মোবাইল ফোনে সতর্কবার্তা পাঠানো হয়েছে। ব্যবসায়ীরা লুটপাটের অভিযোগ করেছেন। বিবিসির জন সাডওয়ার্থ জানান, শহরের প্রধান সড়ক হাইওয়ে ১০১-এ বিক্ষোভকারীরা উঠে এলে পুলিশ তা পরিষ্কার করে। একপর্যায়ে একজন পুলিশ সদস্যকে রাবার বুলেট ছুঁড়তে দেখা যায়, যা পরিস্থিতির ভঙ্গুরতা বোঝায়।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, “আমরা যদি আমাদের দেশের ও নাগরিকদের জন্য বিপদের আশঙ্কা দেখি, তাহলে কঠোরভাবে আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখব।” তবে অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, এটি জননিরাপত্তা নয়, বরং একটি ভিন্ন রাজনৈতিক এজেন্ডার অংশ।
উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে জাতীয় রক্ষীবাহিনীর ভূমিকা বিতর্কিত
গভর্নর নিউসম বলছেন, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ ক্যালিফোর্নিয়ার অভ্যন্তরীণ সিদ্ধান্তের উপর হস্তক্ষেপ। তিনি হুমকি দিয়েছেন যে, এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। এদিকে সেনাবাহিনী এখনো পর্যন্ত মূলত ফেডারেল ডিটেনশন সেন্টার প্রহরায় নিয়োজিত এবং সরাসরি বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে নেই।
ইমিগ্রেশন অভিযানকে কেন্দ্র করে উদ্বেগ
একজন অভিবাসী বিক্ষোভকারী জানান, “অনেক মানুষ ন্যূনতম মজুরিও পাচ্ছে না, অথচ কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে। ট্রাম্প যদি বলেন ‘আমার ম্যান্ডেট আছে’, আমি বলি, ঈশ্বরই একমাত্র বস।”
ক্যালিফোর্নিয়ায় বৃহৎ সংখ্যায় অভিবাসী ও অনিবন্ধিত জনগোষ্ঠী বাস করে, ফলে অভিবাসনবিরোধী অভিযান সরাসরি এই সম্প্রদায়কে আঘাত করেছে। আর ট্রাম্পের সেনা মোতায়েন সেই ক্ষোভকেই আগুনে ঘি ঢালার মতো করেছে।
আইনি দ্বন্দ্বের সম্ভাবনা
গভর্নর নিউসম স্পষ্ট করেছেন যে, ক্যালিফোর্নিয়া ন্যাশনাল গার্ডের মোতায়েন রাজ্য সরকারের এখতিয়ারে পড়ে, ফেডারেল সরকারের নয়। ফলে আসন্ন সময়ে ফেডারেল ও রাজ্য সরকারের মধ্যে এই ইস্যুতে আইনি লড়াই শুরু হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বর্তমানে লস অ্যাঞ্জেলসে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ ও সহিংসতার এক মিশ্র চিত্র তৈরি হয়েছে। ন্যাশনাল গার্ডের উপস্থিতি পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত করেছে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যেখানে আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখার তাগিদ দিচ্ছেন, সেখানে রাজ্য ও স্থানীয় নেতারা বলছেন, এই পদক্ষেপ অবৈধ ও অযাচিত। পরিস্থিতি যে কোন সময় আরও জটিল রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।