পর্তুগাল বনাম জার্মানি ম্যাচে রোনালদোর জাদু, পরাজয়ের বেদনায় বিদ্ধ স্বাগতিক জার্মানি

রোনালদো
পর্তুগাল বনাম জার্মানি ম্যাচে এক ঝড়ো সন্ধ্যার মধ্য দিয়ে শুরু হয় Nations League-এর গুরুত্বপূর্ণ সেমিফাইনাল ম্যাচ। আবহাওয়ার পূর্বাভাস আগেই সতর্ক করেছিল, দেরিতে শুরু হওয়া খেলায় হয়তো গোলও আসবে দেরিতে। তবে এ রাতটি হওয়ার কথা ছিল জার্মান অধিনায়ক জোশুয়া কিমিখের জন্য বিশেষ। দেশের জার্সিতে এটি ছিল তাঁর ১০০তম ম্যাচ, তাও আবার ঘরের মাঠ আলিয়ানৎস অ্যারেনায়।
ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে কিমিখের চমৎকার লব থেকে ফ্লোরিয়ান ভার্টজ গোল করে জার্মানিকে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে দেন। কিন্তু পর্তুগাল যেন অন্য কিছুই পরিকল্পনা করে রেখেছিল। ফ্রান্সিসকো কনসেইসাও-এর অসাধারণ কার্লিং শট এবং তারপর ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর নির্ভুল ফিনিশিংয়ে ২-১ ব্যবধানে ম্যাচ ঘুরিয়ে দেয় পর্তুগাল। এই জয়ের মাধ্যমে তারা পৌঁছে যায় Nations League ফাইনালে, আর কিমিখের শততম ম্যাচটি পরিণত হয় হতাশায়।

কিমিখ
১০০ ম্যাচ, কিন্তু শতভাগ প্রস্তুতি নয়
ম্যাচ শেষে হতাশ কণ্ঠে কিমিখ বলেন,
“আমাদের বুঝতে হবে, আমরা যদি ১০০ শতাংশ না দিই, তবে যে কোনো প্রতিপক্ষের বিপক্ষে লড়াই কঠিন।”
তিনি আক্ষেপ করে উল্লেখ করেন, জামাল মুসিয়ালা এবং আন্তোনিও রুডিগার-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়দের ইনজুরি জার্মানির ছন্দে বড় প্রভাব ফেলেছে।
“১-০ তে এগিয়ে যাওয়ার পরও আমার মনে হয়নি আমরা ফাইনালে যাওয়ার মতো খেলে যাচ্ছিলাম। আমরা বলের সাথে ও ছাড়া, দু’ভাবেই যথেষ্ট সক্রিয় ছিলাম না। মাঠে সেই উন্মাদনা, সেই শক্তি আনতে পারিনি,” — বলেন কিমিখ।
তবে তিনি আশাবাদী, দল এখন আগের তুলনায় বেশি ঐক্যবদ্ধ। ২০১৬ সালে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরু করা কিমিখ ২০১৭ সালে কনফেডারেশনস কাপ জিতলেও বিশ্বকাপ বা ইউরো কোনো বড় শিরোপা জিততে পারেননি। জার্মানির ইতিহাসে তিনিই প্রথম খেলোয়াড় যিনি ১০০টি ম্যাচ খেলে একটিও বিশ্বকাপ জেতেননি।
রোনালদোর জবাব – ২২০তম ম্যাচে ইতিহাস
যেখানে কিমিখ উদযাপন করছিলেন নিজের শততম ম্যাচ, সেখানে প্রতিপক্ষ ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো খেলছিলেন তাঁর ২২০তম আন্তর্জাতিক ম্যাচ। ম্যাচ শেষে পর্তুগাল কোচ রবার্তো মার্টিনেজ বলেন,
“কিমিখকে অভিনন্দন। ১০০ ম্যাচ বড় অর্জন। তবে রোনালদো? তার চেয়ে দ্বিগুণ খেলেছে! সেটা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন।”
৪০ বছর বয়সেও রোনালদোর ক্ষুধা মেটেনি। প্রথমার্ধে বেশ কিছু সুযোগ নষ্ট করলেও, ৬৮ মিনিটে গোল করে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন তিনি। গর্জন করছিল মিউনিখের স্টেডিয়াম— স্বাগতিকদের বিদ্রুপ আর দর্শকদের চিৎকারের মাঝেই রোনালদো যেন সেরা হয়ে উঠেন। এটি ছিল তার ১৩৭তম আন্তর্জাতিক গোল, যা বিশ্ব রেকর্ড।
“মানবিকভাবেই জয়ী হলে অনেক সময় পরদিন উদ্যম কমে যায়। কিন্তু রোনালদোর বেলায় সেটা হয় না,” — বলেন কোচ মার্টিনেজ।
রোনালদো ৯০তম মিনিটে বদলি হয়ে মাঠ ছাড়েন, দর্শকদের অভিবাদনের মাঝেই।
শেষ মুহূর্তের হতাশা, কিমিখের ভুলে শেষ চেষ্টা ব্যর্থ
রোনালদোর মাঠ ছাড়ার পরও একের পর এক আক্রমণ চালায় জার্মানি। শেষ মুহূর্তে এক ঝটপট কন্ট্রার অ্যাটাকের সময় গোলের সুযোগ তৈরি হয়, কিন্তু সেই মুহূর্তেই কিমিখের পাসে ভুল — যার ফলে শেষ সুযোগটাও ম্লান হয়ে যায়। গ্যালারিতে ভেসে ওঠে হতাশার দীর্ঘশ্বাস।
এই রাতটা হওয়ার কথা ছিল জোশুয়া কিমিখের, কিন্তু সেটি পরিণত হলো ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর আরেকটি ঐতিহাসিক রাত হিসেবে।