জনমুখী ও বাস্তবভিত্তিক বাজেট দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে: অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ

জনমুখী ও বাস্তবভিত্তিক বাজেট দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে: অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশঃ জুন 4, 2025 12:16 অপরাহ্ন

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, সর্বোচ্চ সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও একটি বাস্তবভিত্তিক, বাস্তবমুখী ও বাস্তবায়নযোগ্য বাজেট উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। বাজেটকে জনমুখী এবং ব্যবসাবান্ধব রাখাই ছিল মূল লক্ষ্য।

মঙ্গলবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বাজেট-পরবর্তী এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে ছিলেন সরকারের অন্যান্য উপদেষ্টা ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা।

ড. সালেহউদ্দিন বলেন, “বিভিন্ন প্রতিকূলতার মাঝেও আমরা সামনে এগিয়ে যেতে চাই সবার সহযোগিতায়। আমরা চাই মানুষের জীবনমান উন্নয়ন করতে এবং দেশকে এমন অবস্থানে নিয়ে যেতে, যাতে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে একটি দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়ায়।”

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মোহাম্মদ ফউজুল কবির খান, বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন, মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আবদুর রশিদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর, অর্থসচিব মো. খৈরুজ্জামান মুজমদার এবং এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান।

এর আগে সোমবার ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ প্রাক-রেকর্ডকৃত টেলিভিশন বক্তৃতার মাধ্যমে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার জাতীয় বাজেট উন্মোচন করেন।

তিনি বলেন, “চলতি অর্থবছরের (২০২৪-২৫) তুলনায় আসন্ন অর্থবছরের বাজেট কিছুটা কম, যা দেশের ইতিহাসে প্রথম। মূল্যস্ফীতি, জ্বালানি সংকট, ব্যাংক খাত ও রাজস্ব সংগ্রহে চ্যালেঞ্জের মুখে এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।”

তিনি বলেন, “বছরের পর বছর আমরা শুধু প্রবৃদ্ধির গল্প শুনেছি, কিন্তু সেই প্রবৃদ্ধির সুফল সাধারণ মানুষের হাতে পৌঁছায়নি। এখন আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে মানুষের জীবনমান উন্নয়ন, ক্রয়ক্ষমতা বাড়ানো, আইনশৃঙ্খলা পুরোপুরি পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা এবং বাণিজ্য-বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি করা।”

“আমাদের পথ খুব সহজ নয়, বরং কঠিন। তবু আমরা স্থানীয় ও বৈদেশিক উৎস থেকে অর্থ সংগ্রহ করছি। রাজস্ব বোর্ড ও কর ব্যবস্থার পুনর্গঠন করেছি। আন্তর্জাতিক সহযোগিতাও বাড়ানোর চেষ্টা চলছে,”—যোগ করেন তিনি।

ড. সালেহউদ্দিন বলেন, “এই বাজেট প্রচলিত অর্থে ‘সাধারণ’ নয়। এতে নীতির ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে। রাতারাতি বিপ্লবী বাজেট দেওয়া সম্ভব নয়। তবে ট্যাক্সে ছাড়, রাজস্ব শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা, নীতিগত ধারাবাহিকতা—এই সাহসী পদক্ষেপগুলো নেওয়া হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, বাজেট চূড়ান্ত করার আগে প্রাপ্ত পরামর্শ ও মতামত গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হবে। দেশবাসী ও সংবাদমাধ্যমের প্রতি বাজেট বাস্তবায়নে সহযোগিতার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “ইতিবাচক সমালোচনার মাধ্যমে আমাদের পথ আরও সুগম হবে।”

অপ্রদর্শিত অর্থ সাদা করার সুযোগ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ড. সালেহউদ্দিন বলেন, “চুরি করা অর্থ উদ্ধার করা সহজ নয়। যারা টাকা পাচার করে, তারা অনেক চতুর। লেয়ারিংয়ের মাধ্যমে টাকা পাচার করা হয়। তবে সরকার এসব শনাক্ত করছে, যদিও এতে কিছুটা সময় লাগবে।”

তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, “নাইজেরিয়ার ২০ বছর লেগেছে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে। আমরা ইতোমধ্যেই সে প্রক্রিয়া শুরু করেছি। যদি আমরা পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে পারতাম, তাহলে বাজেট সাপোর্ট বা আইএমএফের সহায়তা লাগত না।”

তিনি আরও বলেন, “যদি আমরা ট্যাক্স আদায় বাড়াতে পারতাম, কর ফাঁকি বন্ধ করতে পারতাম, দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারতাম, তাহলে বাজেট ঘাটতির প্রয়োজন হতো না।”

দেশের বিশাল সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমরা এখন গ্রামীণ সড়ক পেরিয়ে মহাসড়কের পথে এগোচ্ছি। এই সড়ক আরও প্রশস্ত হবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে।”

ড. সালেহউদ্দিন বলেন, “সীমিত সম্পদের বিপরীতে বিভিন্ন খাতে বিপুল চাহিদা থাকায় বাজেট তৈরির সময় সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল দেশীয় ও বৈদেশিক উৎস থেকে অর্থায়নের ভারসাম্য তৈরি করা।”

তিনি আরও জানান, “পূর্ববর্তী সরকারের সময়ে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান ধ্বংসপ্রাপ্ত হওয়ায় আমাদের আইনশৃঙ্খলা ও অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করাও একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। সেই কঠিন বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে স্থানীয় ও বৈদেশিক সহায়তার ওপর ভিত্তি করে আমরা এই বাজেট তৈরি করেছি।”

0%
0%
0%
0%