ট্রাম্পের ট্যারিফ পরিকল্পনা আইনি ধাক্কায় মুখ থুবড়ে পড়ার পথে, প্রশাসনের মরিয়া চেষ্টা চলমান

ট্রাম্পের ট্যারিফ পরিকল্পনা আইনি ধাক্কায় মুখ থুবড়ে পড়ার পথে, প্রশাসনের মরিয়া চেষ্টা চলমান
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশঃ মে 30, 2025 12:32 পূর্বাহ্ন

যুক্তরাষ্ট্রের একটি ফেডারেল আদালত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অনেকগুলো আমদানি শুল্ক (tariffs) অবৈধ ঘোষণা করার একদিন পরই প্রশাসন হন্যে হয়ে উঠেছে তাদের এই ট্রেড কৌশলের প্রাণভোমরাকে বাঁচাতে। বৃহস্পতিবার (স্থানীয় সময়) ট্রাম্প প্রশাসন নতুন করে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করে যেন আদালতের আদেশ স্থগিত রেখে এসব শুল্ক অব্যাহত রাখা যায়।

ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ট্রাম্প একটি বিশেষ জাতীয় জরুরি ক্ষমতার আইনের আশ্রয়ে বিভিন্ন দেশের ওপর উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ করে আসছিলেন, বা অন্তত সেগুলোর হুমকি দিয়ে বাণিজ্যিক সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করছিলেন। তবে বুধবার রাতে যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড কোর্টের তিন সদস্যবিশিষ্ট এক দ্বিদলীয় বিচারক প্যানেল – যার একজন ছিলেন ট্রাম্পেরই মনোনীত – রায় দিয়েছেন যে এই আইন প্রেসিডেন্টকে “সীমাহীন ক্ষমতা” দেয় না।

আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল

বিচারকদের এই সিদ্ধান্তের পরপরই প্রশাসন আদালতের আদেশ বাস্তবায়নে স্থগিতাদেশ চেয়ে ফেডারেল সার্কিট আপিল কোর্টে আবেদন করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ বলেছে, আদালতের এই রায় “আইনি ভুলে ভরা” এবং এটি প্রেসিডেন্টের “বিপুল বাণিজ্য ঘাটতি দূর ও বৈশ্বিক অর্থনীতিকে ভারসাম্যপূর্ণ করতে চাওয়া” প্রচেষ্টাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে রায়ে চীন, কানাডা ও মেক্সিকোর ওপর আরোপিত শুল্কগুলো বাতিল হয়ে যেতে পারে, যদিও আদালতের চূড়ান্ত রায় না হওয়া পর্যন্ত এই শুল্কগুলো আপাতত বলবৎ থাকবে।

হোয়াইট হাউসের প্রতিক্রিয়া ও সমালোচনা

হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট বৃহস্পতিবার বলেন, “আমাদের সংবিধান ও দেশের স্বার্থে সুপ্রিম কোর্টকে এ অবস্থা বন্ধ করতে হবে।” তিনি অভিযোগ করেন, বিচারকরা “তাদের বিচারিক ক্ষমতার নির্লজ্জ অপব্যবহার” করেছেন।

এর আগে ইলিনয়ের একটি শিক্ষণীয় খেলনা কোম্পানির করা আরেকটি মামলায় পৃথক এক ফেডারেল বিচারক প্রেসিডেন্টের ট্যারিফ স্থগিত রাখার আদেশ দেন, যদিও সেই আদেশ কার্যকর হতে ১৪ দিন সময় দিয়েছেন।

আন্তর্জাতিক অস্থিরতা ও আলোচনায় প্রভাব

বিশ্বজুড়ে ট্রাম্প প্রশাসনের এই আইনি ধাক্কা বাণিজ্য আলোচনায় অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে সাম্প্রতিক আলোচনায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ৫০% শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছিলেন, যদি উভয় পক্ষ কোনো চুক্তিতে না পৌঁছায়। কিন্তু এই রায় আলোচনার টেবিলে সেই হুমকিকে নিষ্ক্রিয় করে দিয়েছে।

বিশ্লেষক উইলিয়াম রেইনশ বলেন, “অত্যন্ত স্বল্প মেয়াদে এটি আলোচনাকে থমকে দেবে। কারণ কোনো দেশ এমন হুমকির বিরুদ্ধে আলোচনা করবে কেন, যার আইনগত ভিত্তিই অবৈধ বলে ঘোষণা করা হয়েছে?”

তবে তিনি আরও বলেন, আপিল প্রক্রিয়ার কারণে “অনেক বিভ্রান্তি” সৃষ্টি হতে পারে এবং দেশগুলো আপাতত আলোচনায় থাকবে।

শেয়ারবাজারের প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা

রায়ের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর ওয়াল স্ট্রিটে প্রাথমিকভাবে বাজার ঊর্ধ্বমুখী হয়, তবে কিছু সময় পর আবার পতন দেখা যায়। S&P 500 সূচক শুরুতে ০.৫% বাড়লেও পরে নিম্নমুখী হয়, কারণ বিনিয়োগকারীরা রায়ের আসল প্রভাব বোঝার চেষ্টা করছিলেন।

ট্যারিফের প্রকৃত অবস্থা ও ভবিষ্যৎ

যদিও বিচারকরা প্রেসিডেন্টের অনেক ট্যারিফ অবৈধ ঘোষণা করেছেন, তবে তারা সরকারকে ১০ দিনের সময় দিয়েছেন এসব শুল্ক আদায় বন্ধ করতে। এই সময়ের মধ্যে ট্রাম্প প্রশাসন যদি আদালত থেকে স্থগিতাদেশ আদায় করতে পারে, তাহলে শুল্কের হার সাময়িকভাবে অপরিবর্তিত থাকবে। পুরো বিষয়টি এখন সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়াতে পারে।

তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অন্যান্য কিছু ট্যারিফ এই মামলার আওতায় পড়েনি, যেমন – স্টিল, অ্যালুমিনিয়াম, গাড়ি এবং ফার্মাসিউটিক্যাল ও সেমিকন্ডাক্টরের ওপর নির্ধারিত শুল্ক। এসব অন্য আইনের অধীনে আরোপ করা হয়েছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের ট্যারিফ হার কতটা কমবে?

ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট ল্যাবের অর্থনীতিবিদ আর্নি টেডেস্কি বলেন, প্রেসিডেন্টের সর্বোচ্চ শুল্কগুলো বাতিল হলে দেশের কার্যকর ট্যারিফ হার ১৮% থেকে কমে ৭%-এ নেমে আসবে, যা এখনো ১৯৬৯ সালের পর সর্বোচ্চ। তিনি বলেন, “এটি বাণিজ্যে বড়সড় এক ধাক্কা হলেও, অবশিষ্ট ট্যারিফগুলো এখনো অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ধীর করে দেবে এবং ভোক্তাদের জন্য পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেবে।”


সংক্ষিপ্ত মন্তব্য:
যুক্তরাষ্ট্রের আদালতের এই রায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বহুল আলোচিত বাণিজ্য যুদ্ধের কৌশলকে আইনি ও কৌশলগতভাবে এক বড় চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। এখন দেখার বিষয়, প্রশাসন কি সত্যিই এই ধাক্কা সামলে উঠতে পারে এবং শুল্ককে আলোচনার হাতিয়ার হিসেবে আগের মতো ব্যবহার করতে পারে কিনা।

সম্পর্কিত-
0%
0%
0%
0%