অন্টারিও সরকারের বিজ্ঞাপন নিয়ে ক্ষুব্ধ ট্রাম্প, কানাডার সঙ্গে সব বাণিজ্য আলোচনা বন্ধ ঘোষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশঃ 24 অক্টোবর 2025, 07:27 অপরাহ্ন
অন্টারিও সরকারের বিজ্ঞাপন নিয়ে ক্ষুব্ধ ট্রাম্প, কানাডার সঙ্গে সব বাণিজ্য আলোচনা বন্ধ ঘোষণা

যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প কানাডার সঙ্গে চলমান সব বাণিজ্য আলোচনা তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ ঘোষণা করেছেন। কারণ, কানাডার অন্টারিও প্রাদেশিক সরকারের পক্ষ থেকে প্রকাশিত এক বিজ্ঞাপনে তার আরোপিত শুল্কনীতি নিয়ে সমালোচনামূলক বার্তা প্রচার করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

অন্টারিও সরকারের স্পন্সর করা ওই বিজ্ঞাপনে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রপতি ও রিপাবলিকান দলের আদর্শিক নেতা রোনাল্ড রিগ্যানের একটি উদ্ধৃতি ব্যবহার করা হয়, যেখানে তিনি বলেন— “শুল্ক আরোপ আসলে প্রতিটি আমেরিকানকেই ক্ষতিগ্রস্ত করে।”

এ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ট্রাম্প সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, “ওই বিজ্ঞাপনটি ভুয়া এবং অগ্রহণযোগ্য।” তিনি আরও জানান, “এখন থেকে সব বাণিজ্য আলোচনা আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ।”

৩৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক, সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত অন্টারিও

ট্রাম্প প্রশাসন বর্তমানে কানাডার বহু পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছে। এর মধ্যে গাড়ি ও লোহার শিল্পে বিশেষভাবে লক্ষ্যভিত্তিক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। অন্টারিও প্রদেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এই শুল্কের কারণে।

বিজ্ঞাপন

তবে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকোর মধ্যে প্রথম মেয়াদে স্বাক্ষরিত মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির আওতায় থাকা পণ্যগুলো এই শুল্ক থেকে অব্যাহতি পাচ্ছে।

রিগ্যানের কণ্ঠে বাণিজ্যবিরোধী বার্তা

গত সপ্তাহে প্রকাশিত মিনিটখানেকের বিজ্ঞাপনটিতে রিগ্যানের ১৯৮৭ সালের এক জাতীয় রেডিও ভাষণ থেকে অংশবিশেষ ব্যবহার করা হয়। ওই ভাষণে তিনি বলেন,

“যখন কেউ বলে ‘বিদেশি আমদানিতে শুল্ক বসাও’, তখন মনে হয় তারা আমেরিকান চাকরি ও শিল্পকে রক্ষা করছে। কিন্তু এটি কেবল অল্প সময়ের জন্য কাজ করে। দীর্ঘমেয়াদে এসব বাণিজ্য বাধা প্রতিটি আমেরিকানকেই ক্ষতিগ্রস্ত করে।”

বিজ্ঞাপনে রিগ্যান আরও সতর্ক করেছিলেন যে, উচ্চ শুল্ক আরোপের ফলে বিদেশি দেশগুলো প্রতিশোধমূলক শুল্ক আরোপ করে, যা শেষ পর্যন্ত বাজার সংকুচিত করে, শিল্প-কারখানা বন্ধ হয়ে যায় এবং লক্ষ লক্ষ মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ে

রিগ্যান ফাউন্ডেশনের প্রতিবাদ

রোনাল্ড রিগ্যান ফাউন্ডেশন, যা সাবেক রাষ্ট্রপতির উত্তরাধিকার সংরক্ষণ করে, বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে জানায়— বিজ্ঞাপনটি রিগ্যানের বক্তব্যকে “বাছাইকৃত ও বিকৃতভাবে উপস্থাপন করেছে” এবং অন্টারিও সরকার তার অনুমতি ছাড়াই বক্তব্য সম্পাদনা করেছে। ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, তারা এখন আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করছে

ট্রাম্পের পাল্টা দাবি

রিগ্যান ফাউন্ডেশনের এই বিবৃতি উল্লেখ করে ট্রাম্প লিখেছেন, “এই ভিডিওটি মার্কিন সুপ্রিম কোর্টে আসন্ন নভেম্বরের রায়কে প্রভাবিত করার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে।”
উক্ত রায়ে আদালত নির্ধারণ করবে ট্রাম্প প্রশাসনের আরোপিত বৈশ্বিক শুল্কনীতি আইনসম্মত কিনা। এই রায় ট্রাম্পের রাষ্ট্রপতি হিসেবে অর্থনৈতিক ক্ষমতার সবচেয়ে বড় পরীক্ষা হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা যুক্তরাষ্ট্রকে বিলিয়ন ডলারের শুল্ক ফেরত দিতে বাধ্য করতে পারে।

ট্রাম্প আরও বলেন, “রোনাল্ড রিগ্যান শুল্ক পছন্দ করতেন না— এটা ভুল। আসলে তিনি আমাদের দেশ ও জাতীয় নিরাপত্তার জন্য শুল্ককে ভালোবাসতেন।

প্রচার অভিযান

এই বিজ্ঞাপনটি যুক্তরাষ্ট্রের মূলধারার টেলিভিশনে প্রচার করা হয়েছে। অন্টারিও প্রিমিয়ার ডাগ ফোর্ড এক পোস্টে লিখেছেন, “আমরা কখনোই কানাডার ওপর আরোপিত মার্কিন শুল্কের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলা বন্ধ করব না।”

চীনের দূতাবাসও এর আগেও ট্রাম্পের বৈশ্বিক শুল্কনীতির সমালোচনায় রিগ্যানের একই ক্লিপ ব্যবহার করেছিল।

অন্টারিওর পাল্টা অবস্থান

অন্টারিও, যা কানাডার সবচেয়ে জনবহুল প্রদেশ ও বৃহত্তম আঞ্চলিক অর্থনীতি, যুক্তরাষ্ট্রের এই শুল্কে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর আগে ফোর্ড ট্রাম্পের শুল্ক হুমকির জবাবে বলেছিলেন, “প্রয়োজনে আমরা যুক্তরাষ্ট্রে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেব।”
তিনি আরও বলেন, “ওয়াশিংটন আমাদের ওপর এমনভাবে আঘাত করেছে, যেন তারা একটি ছুরি আমাদের শরীরে ঢুকিয়ে দিয়েছে।”

শুল্কের প্রভাব

ট্রাম্পের সেক্টরভিত্তিক শুল্কের মধ্যে লোহা ও ধাতুতে ৫০ শতাংশ এবং গাড়িতে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত কর আরোপ করা হয়েছে। এতে কানাডায় বহু প্রতিষ্ঠান চরম ক্ষতির মুখে পড়েছে, বন্ধ হয়েছে কারখানা, এবং হাজার হাজার শ্রমিক চাকরি হারিয়েছে।

কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি ও অন্টারিও প্রিমিয়ার ডাগ ফোর্ড— দুজনেই এখনো ট্রাম্পের এই নতুন ঘোষণার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।

এটি দ্বিতীয়বারের মতো ট্রাম্প কানাডার সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা বন্ধের ঘোষণা দিলেন। এর আগে, কানাডা যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর ওপর ডিজিটাল কর আরোপের ঘোষণা দিলে ট্রাম্প একইভাবে আলোচনা বন্ধ করেন। পরবর্তীতে কানাডা কর প্রত্যাহার করলে, হোয়াইট হাউস দাবি করে— “কার্নি ট্রাম্পের চাপের মুখে নতি স্বীকার করেছেন।

তথ্যসূত্র: বিবিসি

0%
0%
0%
0%