এইচ-১বি ভিসায় বছরে ১ লাখ ডলার ফি, ট্রাম্পের নতুন নির্বাহী আদেশ

এইচ-১বি ভিসায় বছরে ১ লাখ ডলার ফি, ট্রাম্পের নতুন নির্বাহী আদেশ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশঃ সেপ্টেম্বর 20, 2025 8:32 অপরাহ্ন

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক নির্বাহী আদেশে ঘোষণা দিয়েছেন, দক্ষ বিদেশি কর্মীদের জন্য এইচ-১বি ভিসা প্রোগ্রামে আবেদনকারীদের এখন থেকে প্রতি বছর ১ লাখ ডলার যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১ কোটি ২১ লক্ষ ৭২ হাজার ৪৭ টাকা ফি দিতে হবে।

বিজ্ঞাপন

হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, ভিসা ব্যবস্থার “অপব্যবহার” ঠেকাতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ফি না দিলে নতুন আবেদন গ্রহণ করা হবে না। আগামী ২১ সেপ্টেম্বর থেকে এ আদেশ কার্যকর হবে।

কোম্পানির জন্য বড় চাপ

মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লাটনিক বলেন, “একটি কোম্পানিকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে— ওই কর্মী এতটাই মূল্যবান কি না যে তার জন্য সরকারকে প্রতি বছর ১ লাখ ডলার যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১ কোটি ২১ লক্ষ ৭২ হাজার ৪৭ টাকা দিতে হবে, নইলে দেশীয় কর্মী নিয়োগ করতে হবে।” তিনি দাবি করেন, “সব বড় বড় কোম্পানি এ নিয়মে রাজি আছে।”

আগে এইচ-১বি ভিসার বিভিন্ন প্রশাসনিক ফি মিলিয়ে সর্বোচ্চ প্রায় ১,৫০০ ডলার দিতে হতো। বর্তমানে এ ভিসার বার্ষিক কোটার সংখ্যা ৮৫ হাজার।

বিজ্ঞাপন

প্রযুক্তি খাতে প্রভাব

সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, সর্বশেষ অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি এইচ-১বি ভিসা পেয়েছে অ্যামাজন, এরপর টাটা, মাইক্রোসফট, মেটা, অ্যাপল ও গুগল। তবে এবার নতুন নিয়মে কোম্পানিগুলোকে প্রতিটি ভিসার জন্য টানা ছয় বছর একই পরিমাণ অর্থ প্রদান করতে হবে।

অ্যামাজন ইতোমধ্যেই তাদের এইচ-১বি ভিসাধারী কর্মীদের সতর্ক করে বলেছে, যারা যুক্তরাষ্ট্রে আছেন তারা যেন সেখানেই থাকেন। যারা বিদেশে আছেন, তারা যেন দ্রুত দেশে ফেরেন, নইলে নতুন নিয়ম কার্যকর হওয়ার পর পুনরায় প্রবেশ ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।

ভারতের সবচেয়ে বড় ক্ষতি

ভারতীয় বাণিজ্য সংস্থা নাসকম এ সিদ্ধান্তে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সংস্থাটি বলছে, হঠাৎ এক দিনের সময়সীমা ব্যবসা, পেশাজীবী ও শিক্ষার্থীদের জন্য ভীষণ অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, গত বছর অনুমোদিত এইচ-১বি ভিসার ৭১ শতাংশই ভারতীয় আবেদনকারীদের ছিল। দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল চীন (১১.৭%)।

ছোট কোম্পানির জন্য ধ্বংসাত্মক

ওয়াটসন ইমিগ্রেশন ল’ এর প্রতিষ্ঠাতা তাহমিনা ওয়াটসন বলেন, “প্রায় সবাই এ থেকে বাদ পড়বে। বছরে ১ লাখ ডলার প্রবেশমূল্য ছোট ও মাঝারি কোম্পানির জন্য ধ্বংসাত্মক হবে।”

তিনি বলেন, বেশিরভাগ কোম্পানি বিদেশি কর্মী নিয়োগ করে তখনই, যখন তারা দেশীয়ভাবে যোগ্য কর্মী খুঁজে পায় না।

সমালোচনা ও আশঙ্কা

ইমিগ্রেশন বিশেষজ্ঞ জর্জ লোপেজ মনে করেন, এই ফি প্রযুক্তি খাতসহ সব শিল্পে মার্কিন প্রতিযোগিতাকে পিছিয়ে দেবে। অনেক প্রতিষ্ঠান হয়তো বিদেশে অফিস স্থাপনের কথা ভাববে, যদিও তা বাস্তবে সহজ নয়।

“গোল্ড কার্ড” ঘোষণা

একই সঙ্গে ট্রাম্প আরেকটি নির্বাহী আদেশে নতুন “গোল্ড কার্ড” চালু করেছেন, যাতে নির্দিষ্ট কিছু অভিবাসী দ্রুত ভিসা পেতে পারবেন। তবে এর জন্য শুরুতেই কমপক্ষে ১ মিলিয়ন পাউন্ড ফি দিতে হবে।

পূর্বের অবস্থান ও নীতিগত দ্বন্দ্ব

ট্রাম্প প্রশাসনের ভেতর এইচ-১বি ভিসা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই দ্বন্দ্ব রয়েছে। ২০১৭ সালে দায়িত্বের শুরুতে ট্রাম্প ভিসা আবেদনগুলোতে কঠোরতা আরোপ করেন, যার ফলে ২০১৮ অর্থবছরে আবেদন প্রত্যাখ্যানের হার ২৪%-এ পৌঁছায়— যা ইতিহাসে সর্বোচ্চ।

তবে একইসঙ্গে তিনি একাধিকবার প্রযুক্তি খাতে প্রতিভা আকর্ষণের প্রয়োজনীয়তার কথাও বলেছেন। এমনকি নির্বাচনী প্রচারে তিনি মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকদের জন্য সরাসরি গ্রিন কার্ড দেওয়ার প্রস্তাবও দিয়েছিলেন।


তথ্যসূত্র: বিবিসি,রয়টারস

0%
0%
0%
0%