যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি: “আমরা এখন ইরানের আকাশের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে” – যুদ্ধের পথে যুক্তরাষ্ট্র?

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প
ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে চলমান ছয় দিনের সংঘাতের মধ্যেই উত্তেজনার পারদ আরও চড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের “নির্বিচার আত্মসমর্পণ” দাবি করেছেন এবং জানিয়েছেন, “আমরা এখন ইরানের আকাশের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছি।”
পেন্টাগনের পক্ষ থেকে আরও যুদ্ধবিমান মধ্যপ্রাচ্যে পাঠানো হয়েছে এবং ইতিমধ্যে মোতায়েনকৃত যুদ্ধবিমানগুলোর অবস্থানও দীর্ঘায়িত করা হয়েছে। মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী পিট হেক্সিথ জানিয়েছেন, এই পদক্ষেপগুলো মূলত মার্কিন সেনাদের সুরক্ষার জন্য নেওয়া হয়েছে।
ট্রাম্প অনলাইনে দেওয়া এক পোস্টে বলেছেন, “ইরানের কাছে উন্নত স্কাই ট্র্যাকারসহ প্রচুর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আছে, কিন্তু সেগুলো আমেরিকান নির্মিত সামরিক প্রযুক্তির সঙ্গে তুলনায় আসে না। কেউই যুক্তরাষ্ট্রের মতো ভালো করতে পারে না।”
মার্কিন-ইসরায়েল যৌথ অভিযান?
ওয়াশিংটন ডিসি থেকে সাংবাদিক ফিল ল্যাভেল জানিয়েছেন, ট্রাম্পের “আমরা” শব্দ ব্যবহারে অনুমান করা হচ্ছে যে, এখন ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র যৌথভাবে ইরানের ওপর বিমান অভিযানে নেতৃত্ব দিচ্ছে। এতদিন ইসরায়েল এককভাবে দাবি করছিল যে তারা ইরানের আকাশে আধিপত্য বজায় রেখেছে, যদিও যুক্তরাষ্ট্র ছিল পরোক্ষভাবে সহায়ক। কিন্তু এখন ট্রাম্প সরাসরি “আমরা” বলায় স্পষ্ট হচ্ছে যে দু’দেশের মধ্যে একটি কার্যকর সামরিক অংশীদারিত্ব গড়ে উঠেছে।
প্রেসিডেন্টের রাতভর পরামর্শ, হামলার প্রস্তুতি?
খবরে প্রকাশ, গত মঙ্গলবার ট্রাম্প তার শীর্ষ সামরিক উপদেষ্টাদের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেছেন, যেখানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর শীর্ষ কমান্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। ট্রাম্প এ সময় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গেও কথা বলেছেন, যদিও আনুষ্ঠানিক কোনো বিবরণ প্রকাশ করা হয়নি।
অ্যাক্সিয়াসের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, মার্কিন সামরিক কর্মকর্তারা ধারণা করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি সামরিক অভিযান এখন “কয়েক দিনের মধ্যেই” শুরু হতে পারে।
ট্রাম্প আরও হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “আমরা জানি আয়াতোল্লাহ খামেনি কোথায় আছেন। উস্কানি দিলে আমরাও প্রস্তুত।” বিশ্লেষকদের মতে, এ বক্তব্য ইঙ্গিত দিচ্ছে, ভবিষ্যতে ইরানের শীর্ষ নেতৃত্বকেও লক্ষ্যবস্তু করা হতে পারে।
অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব: রিপাবলিকান পার্টিতে বিভক্তি
যদিও ট্রাম্পের রিপাবলিকান পার্টিতে তার দখল সুপ্রতিষ্ঠিত, তথাপি ইরান ইস্যুতে দলটির মধ্যেই গভীর বিভাজন দেখা দিয়েছে। সেনেটর টেড ক্রুজ ও লিন্ডসে গ্রাহামের মতো হোকিশ (যুদ্ধপন্থী) নেতারা বলছেন, “এটাই সুযোগ, এখনই আঘাত হানতে হবে।”
অন্যদিকে, ‘মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন (MAGA)’ আন্দোলনের কিছু সদস্য বলছেন, “এই যুদ্ধ আমাদের নীতির পরিপন্থী। আমেরিকা ফার্স্ট—এই আদর্শেই থাকতে হবে।” উল্লেখ্য, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় ট্রাম্প ‘শান্তির দূত’ হিসেবে প্রচার চালিয়েছিলেন।
বর্তমানে কংগ্রেসের ৩২ জন সদস্য এই যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের জড়িত হওয়ার বিরোধিতা করছেন। যুক্তরাষ্ট্রে যুদ্ধ ঘোষণার ক্ষমতা একমাত্র কংগ্রেসের থাকলেও জরুরি ভিত্তিতে প্রেসিডেন্ট সাময়িক সামরিক অভিযান চালাতে পারেন। তবে আয়াতোল্লাহ খামেনির ওপর হামলা যুদ্ধ ঘোষণা হিসেবেই বিবেচিত হবে।
কূটনৈতিক প্রচেষ্টা স্থগিত?
যদিও একদিন আগেও গুঞ্জন ছিল, ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স এবং মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষ দূত স্টিভ হুইট তেহরানে আলোচনার জন্য যেতে পারেন, তবে বর্তমানে ট্রাম্প বলেছেন, তিনি কোনো আলোচনা করার মেজাজে নেই।
ফিল ল্যাভেলের ভাষায়, “গত ২৪ ঘণ্টায় পুরো পরিস্থিতি বদলে গেছে। এখন সবকিছু ইঙ্গিত দিচ্ছে সরাসরি সামরিক অভিযানের দিকে। তবে আগামীকাল আবার ভিন্ন কিছু হতে পারে। রাজনীতিতে একদিনেই অনেক কিছু বদলে যায়।”
বিশ্লেষণ:
যুক্তরাষ্ট্র যদি ইরানে সরাসরি সামরিক অভিযান চালায়, তাহলে তা শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, পুরো বিশ্ব রাজনীতির জন্যই এক ভয়ঙ্কর মোড় নিতে পারে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন প্রশাসন যুদ্ধের দিকে এগোচ্ছে কি না—তা স্পষ্ট হবে খুব শিগগিরই। তবে এই সিদ্ধান্ত ট্রাম্পের রাজনৈতিক ভবিষ্যত এবং রিপাবলিকান পার্টির অভ্যন্তরীণ স্থিতির ওপরও গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।
তথ্যসূত্র: আল জাজিরা, ট্রুথ সোশ্যাল