ওয়াশিংটনে জেলেনস্কি–ট্রাম্প বৈঠক: আশার বদলে হতাশা, অনিশ্চয়তার ছায়া

যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বহুল প্রতীক্ষিত বৈঠক শেষ হয়েছে। জেলেনস্কি নিজে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বৈঠককে “তীক্ষ্ণ” হিসেবে বর্ণনা করেছেন। এক শব্দেই বোঝা যায়, বৈঠকটি ইউক্রেনের প্রত্যাশার চেয়ে অনেক ভিন্ন আকার নিয়েছে।
শুরুতে উচ্চ প্রত্যাশা
জেলেনস্কির সফরের আগে ইউক্রেনীয় শিবিরে ছিল আশা আর উচ্ছ্বাসের ঢেউ। সংসদের স্পিকার রুসলান স্তেফানচুক বলেছিলেন, এই সফর একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত এবং যুক্তরাষ্ট্র বুঝবে যে রাশিয়ার ওপর নির্ভর করা যায় না। আশাবাদ ছিল, মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে শক্তিশালী সমর্থন, দীর্ঘপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার অনুমোদন এবং ভবিষ্যতের নিরাপত্তা গ্যারান্টি পাওয়া সম্ভব হবে।
আকাশে ওঠার পর চিত্র পাল্টে গেল
কিন্তু জেলেনস্কির বিমান আকাশে উঠতেই খবর আসে—ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের মধ্যে দুই ঘণ্টারও বেশি সময়ের ফোনালাপ হয়েছে এবং তাদের মধ্যে নতুন শীর্ষ বৈঠক হওয়ার ঘোষণা এসেছে। ওয়াশিংটনে অবতরণের পর ইউক্রেনীয় প্রতিনিধিদলকে সীমিত ও শান্ত অভ্যর্থনা দেওয়া হয়। আগের আশাব্যঞ্জক উচ্ছ্বাস তখন অনেকটাই নিভে গেছে।
বৈঠকের মূল বক্তব্য
বৈঠকে ট্রাম্প যুদ্ধ স্থগিত করার পক্ষপাতিত্ব দেখিয়েছেন এবং এটিকে দুই নেতার ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব হিসেবে তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, দুই পক্ষই বর্তমান যুদ্ধরেখায় থাকাকালীন পরিবারের কাছে ফিরে যাক। জেলেনস্কি সতর্ক কূটনীতির সঙ্গে ট্রাম্পের প্রচেষ্টা ও শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রশংসা করেছেন, কিন্তু স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন যে রাশিয়া এখনও শান্তির জন্য প্রস্তুত নয়।
কিয়েভবাসীর দৃষ্টিভঙ্গি
কিয়েভের আশপাশে রুশ ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় দেখা গেছে—লোকজন এখনো নিজেদের ঘরবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান মেরামত করছেন। এক দোকানমালিক বলেন, এখনই যদি শান্তি চুক্তি করা হয়, রাশিয়া নতুনভাবে আরও পেশাদার যুদ্ধের প্রস্তুতি নেবে। তাই তার মতে, রাশিয়ার আগ্রাসন প্রতিহত করতে প্রস্তুতি ও প্রতিরক্ষা বজায় রাখা জরুরি।
অন্য একজন বলেন, অস্ত্র ও কৌশলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত তাদের সেনাবাহিনীই নেবে। যুক্তরাষ্ট্র সহায়তা করলে ভালো, নাহলে নিজস্ব সামর্থ্যেই লড়াই চালানো হবে। চার বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা এই সংঘর্ষে তারা টিকে রয়েছে এবং লড়াই চালিয়ে যেতে প্রস্তুত।
মূল চাওয়াগুলো পূরণ হয়নি
জেলেনস্কির প্রধান লক্ষ্য ছিল—যুক্তরাষ্ট্রের থেকে দীর্ঘপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার অনুমোদন এবং ভবিষ্যতের শান্তি চুক্তির জন্য নিরাপত্তা গ্যারান্টি। কিন্তু এই সফর থেকে তিনি কোনোটিই অর্জন করতে পারেননি। ফলে কিয়েভে ফিরে আনিশ্চয়তা এবং হতাশা বিরাজ করছে।
ওয়াশিংটন সফর জেলেনস্কির প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। ট্রাম্প যুদ্ধ স্থগিত করার আহ্বান দিলেও, ইউক্রেন মনে করে এখনই এই প্রস্তাব মঞ্জুর করলে ভবিষ্যতে রাশিয়ার পুনরায় আগ্রাসনের সুযোগ তৈরি হবে। জনগণ হতাশ হলেও লড়াই চালিয়ে যাওয়ার সংকল্প অটল। এই সফর আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে সতর্কতা ও প্রয়োজনীয় সমর্থনের গুরুত্বকে আরও স্পষ্ট করে দিয়েছে, যেখানে অস্ত্র, নিরাপত্তা এবং স্থায়ী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছাড়া বাস্তব সমাধান কঠিন।
তথ্যসূত্র: বিবিসি
