রাশিয়ার দুটি বৃহৎ তেল কোম্পানির ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নিষেধাজ্ঞা ঘোষণাশান্তি আলোচনায় চাপ বাড়াতে ট্রাম্পের পদক্ষেপ

রাশিয়ার ওপর নতুন করে অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করতে রাশিয়ার দুই শীর্ষ তেল কোম্পানি— রসনেফট ও লুকওইল-এর বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
ওয়াশিংটন জানিয়েছে, ইউক্রেনে শান্তি চুক্তি আলোচনায় মস্কোকে রাজি করাতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
বুধবার হোয়াইট হাউসে ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুটে-এর সঙ্গে বৈঠকের পর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন,
“প্রতিবার ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে কথা বললে আলাপ ভালোই হয়, কিন্তু কোথাও গড়ায় না। কোথাও না।”
এই নিষেধাজ্ঞা ঘোষণার একদিন আগেই ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছিলেন, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন-এর সঙ্গে হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে নির্ধারিত বৈঠক অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়েছে।
এর কয়েক ঘণ্টা আগেই রাশিয়া ইউক্রেনে ভয়াবহ গোলাবর্ষণ চালায়, যাতে অন্তত সাতজন নিহত হন, যাদের মধ্যে শিশুও ছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বলেন, পুতিনের যুদ্ধ থামানোর অস্বীকৃতির কারণে এই নিষেধাজ্ঞা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে।
“এখন হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করার সময়। অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি দরকার,” — বলেন বেসেন্ট।
তিনি আরও বলেন, “এই দুই তেল কোম্পানিই ক্রেমলিনের যুদ্ধযন্ত্রকে অর্থায়ন করে।”
ট্রাম্প বলেন,
“আমরা অনেক অপেক্ষা করেছি। এখন সময় এসেছে। এই নিষেধাজ্ঞা প্যাকেজ বিশাল— এবং আমি আশা করি রাশিয়া যুদ্ধ থামালে এগুলো দ্রুত প্রত্যাহার করা হবে।”
রুটেও ট্রাম্পের পদক্ষেপের প্রশংসা করেন।
“পুতিনের ওপর আরও চাপ দেওয়া দরকার ছিল, আজ ট্রাম্প সেটাই করেছেন,” — বলেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি যুক্তরাজ্য ও ইউরোপের পদক্ষেপ
এর আগেই যুক্তরাজ্য রসনেফট ও লুকওইল-এর ওপর একই ধরনের নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেছে।
ব্রিটিশ অর্থমন্ত্রী রেচেল রিভস বলেন,
“বিশ্ববাজারে রুশ তেলের কোনো স্থান নেই।”
এদিকে লন্ডনে রাশিয়ার দূতাবাস এক বিবৃতিতে দাবি করেছে, এই নিষেধাজ্ঞা বিশ্বজুড়ে জ্বালানির সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটাবে এবং দাম আরও বাড়াবে।
তারা সতর্ক করেছে,
“এই চাপ কেবল শান্তি আলোচনাকে জটিল করবে এবং আরও উত্তেজনা সৃষ্টি করবে।”
রাশিয়ার এই দুটি কোম্পানি প্রতিদিন প্রায় ৩.১ মিলিয়ন ব্যারেল তেল রপ্তানি করে, যেখানে শুধু রসনেফট-ই রাশিয়ার মোট উৎপাদনের প্রায় অর্ধেক নিয়ন্ত্রণ করে— যা বৈশ্বিক সরবরাহের ৬ শতাংশ বলে জানিয়েছে যুক্তরাজ্য সরকার।
রাশিয়ার তেল ও গ্যাসই তার সবচেয়ে বড় রপ্তানি আয়। দেশটির প্রধান ক্রেতা হলো চীন, ভারত ও তুরস্ক।
ট্রাম্প ইতোমধ্যেই এসব দেশকে রুশ তেল কেনা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে ক্রেমলিনের ওপর অর্থনৈতিক চাপ বাড়ে।
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইভেট কুপার মার্কিন নিষেধাজ্ঞাকে “দৃঢ় ও স্বাগতযোগ্য” বলে অভিহিত করেছেন।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের নতুন নিষেধাজ্ঞা প্যাকেজ
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লায়েন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করে জানান, তিনি বেসেন্টের সঙ্গে ফোনে রাশিয়ার “শান্তি প্রক্রিয়ায় অনীহা” নিয়ে কথা বলেছেন।
তিনি জানান, ইউরোপীয় ইউনিয়নও বুধবার তাদের উনবিংশ নিষেধাজ্ঞা প্যাকেজ অনুমোদন করেছে, যাতে রুশ তরল গ্যাস আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
“আমাদের ট্রান্সঅ্যাটলান্টিক ঐক্যের এই বার্তা স্পষ্ট— আগ্রাসীর ওপর যৌথ চাপ অব্যাহত থাকবে,” — বলেন ভন ডার লায়েন।
আলোচনার ভবিষ্যৎ ও যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব
ইউরোপীয় ন্যাটো মিত্র ও ইউক্রেনের যৌথভাবে প্রণীত একটি ১২ দফা শান্তি পরিকল্পনা নিয়েও বুধবার হোয়াইট হাউসে আলোচনা হয়।
পরিকল্পনাটিতে রয়েছে—
- বর্তমান যুদ্ধসীমা স্থির রাখা,
- বন্দি বিনিময়,
- ইউক্রেনে যুদ্ধোত্তর পুনর্গঠন তহবিল,
- ইউক্রেনকে ইউরোপীয় ইউনিয়নে যুক্ত করার পথনির্দেশ,
- এবং কিয়েভের জন্য আরও সামরিক ও অর্থনৈতিক সহায়তা।
তবে রাশিয়া এখনো যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়নি।
ক্রেমলিন মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন,
“রাশিয়ার অবস্থান অপরিবর্তিত— ইউক্রেনীয় বাহিনীকে ডনবাস অঞ্চল ছাড়তে হবে।”
ট্রাম্প এর আগে বলেছেন,
“যুদ্ধের সীমারেখাতেই কাট দাও। সবাই বাড়ি ফিরে যাক, যুদ্ধ থামাও, মানুষ হত্যা বন্ধ করো।”
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকও বাতিল করা হয়েছে। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, ফোনালাপ ফলপ্রসূ হওয়ায় বৈঠকটি আর প্রয়োজন মনে করা হয়নি।
পটভূমি
ট্রাম্প ও পুতিনের সর্বশেষ সরাসরি বৈঠক হয় আলাস্কায়।
সে সময় হোয়াইট হাউস আশা করেছিল, ওই বৈঠক ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানে সহায়ক হবে।
কিন্তু যুদ্ধ এখনো চলমান, এবং নতুন নিষেধাজ্ঞা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এবার আরও কঠোর অবস্থান নিল।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে রসনেফট ও লুকওইল-এর ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা ইউক্রেনের শান্তি আলোচনায় রাশিয়ার ওপর চাপ বাড়াবে বলে আশা করছে পশ্চিমা দেশগুলো।
তবে মস্কো বলছে, এসব পদক্ষেপ উল্টো বৈশ্বিক জ্বালানি বাজারে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করবে এবং শান্তির পথে আরও বাধা হয়ে দাঁড়াবে।
তথ্যসূত্র: বিবিসি
