এস্তোনিয়ার আকাশসীমা লঙ্ঘন, ন্যাটোর জরুরি পরামর্শ বৈঠকের আহ্বান

এস্তোনিয়ার আকাশসীমা লঙ্ঘনের অভিযোগে ন্যাটোর অন্যান্য সদস্য দেশের সঙ্গে জরুরি পরামর্শ বৈঠকের আহ্বান জানিয়েছে দেশটি। শুক্রবার সকালে রাশিয়ার তিনটি মিগ-৩১ যুদ্ধবিমান অনুমতি ছাড়া এস্তোনিয়ার আকাশসীমায় প্রবেশ করে এবং ১২ মিনিট অবস্থান করে বলে জানিয়েছে সরকার।
এ সময় ইতালি, ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের যুদ্ধবিমান ন্যাটোর পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্ত রক্ষার অংশ হিসেবে আকাশে উড়ে যায়। ন্যাটোর এক মুখপাত্র একে “রাশিয়ার বেপরোয়া আচরণের আরেকটি উদাহরণ” বলে উল্লেখ করেন এবং বলেন, এ ঘটনায় ন্যাটোর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ার সক্ষমতা প্রমাণিত হয়েছে।
রাশিয়ার অস্বীকার, উত্তেজনা বৃদ্ধি
রাশিয়া এ অভিযোগ অস্বীকার করে জানিয়েছে, তাদের বিমানগুলো নির্ধারিত ফ্লাইটে আন্তর্জাতিক আকাশসীমার নিয়ম মেনে চলেছে এবং কোনো দেশের সীমান্ত অতিক্রম করেনি। তবে এস্তোনিয়া বলছে, এটি চলতি বছরে রাশিয়ার পঞ্চমবারের মতো আকাশসীমা লঙ্ঘন।
সরকার জানায়, যুদ্ধবিমানগুলো উত্তর-পূর্ব দিক থেকে এস্তোনিয়ার আকাশে প্রবেশ করে। এরপর ফিনল্যান্ডের যুদ্ধবিমান এগুলোকে বাধা দেয় এবং এস্তোনিয়ার আকাশসীমায় প্রবেশের পর ইতালির এফ-৩৫ (F-35) বিমান এগুলোকে ন্যাটোর বাল্টিক এয়ার পলিসিং মিশনের আওতায় বাইরে নিয়ে যায়। রাশিয়ার বিমানগুলোর কোনো ফ্লাইট পরিকল্পনা ছিল না, ট্রান্সপন্ডার বন্ধ ছিল এবং তারা এস্তোনিয়ার এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি।
ন্যাটো চুক্তির ৪নং অনুচ্ছেদে পরামর্শ
এস্তোনিয়া ন্যাটো চুক্তির ৪নং অনুচ্ছেদ সক্রিয় করেছে, যার মাধ্যমে জোটভুক্ত দেশগুলো জরুরি বৈঠকে বসবে। চলতি মাসেই দ্বিতীয়বার কোনো সদস্য দেশ এ অনুচ্ছেদে বৈঠকের আহ্বান জানাল। এর আগে ১০ সেপ্টেম্বর পোল্যান্ড তাদের আকাশসীমায় রাশিয়ান ড্রোন প্রবেশের পর একই পদক্ষেপ নেয়।
এস্তোনিয়ার প্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টেন মিখাল বলেন, “ন্যাটোর প্রতিক্রিয়া ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী হওয়া জরুরি। আমাদের মিত্রদের সঙ্গে যৌথভাবে পরিস্থিতি মূল্যায়ন করা এবং পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারণ করা অত্যন্ত প্রয়োজন।”
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার বলেন, “আমি এটা ভালোভাবে নিচ্ছি না। এমন ঘটনা আমার পছন্দ নয়। বড় ধরনের বিপদ হতে পারে।”
তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, যদি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করা হতো, তবে পরিস্থিতি ভিন্ন হতে পারত। ২০১৫ সালে তুরস্কের আকাশসীমা লঙ্ঘনের ঘটনায় একটি রুশ যুদ্ধবিমান গুলি করে নামানো হয়েছিল, যা কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট তৈরি করলেও পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে গড়ায়নি। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে ট্রাম্প প্রশাসনের অবস্থান নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে।
রাশিয়ার কৌশল নিয়ে সতর্কতা
এস্তোনিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্গুস চাহকনা বলেন, রাশিয়া ধীরে ধীরে উসকানি বাড়াচ্ছে, যাতে ন্যাটো সরাসরি প্রতিক্রিয়া না দিলেও নিরাপত্তা ব্যবস্থায় চাপ তৈরি হয়। তিনি একে ‘ফুটন্ত পানিতে ব্যাঙের’ মতো ধীরে ধীরে ফাঁদে ফেলার কৌশল বলে অভিহিত করেন।
পোল্যান্ড ও রোমানিয়ার আকাশসীমায় রাশিয়ান ড্রোন প্রবেশের ঘটনাও সম্প্রতি উত্তেজনা বাড়িয়েছে। এ কারণে ন্যাটো পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্তে অতিরিক্ত যুদ্ধবিমান ও সেনা মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে। বর্তমানে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি ও ডেনমার্কের যুদ্ধবিমানও পোল্যান্ডের আকাশ প্রতিরক্ষায় অংশ নিচ্ছে।
সব মিলিয়ে এ ঘটনায় ইউরোপে এক ধরনের কৌশলগত অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, যা রাশিয়ার জন্য সুযোগ এবং ন্যাটোর জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তথ্যসূত্র: রয়টারস, বিবিসি