পাকিস্তান সীমান্তে সংঘর্ষে উত্তেজনা: তালেবান জানাল ‘প্রতিশোধমূলক হামলা’, নিহত ৫৮ পাকিস্তানি সেনা দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশঃ 12 অক্টোবর 2025, 06:21 অপরাহ্ন
পাকিস্তান সীমান্তে সংঘর্ষে উত্তেজনা: তালেবান জানাল ‘প্রতিশোধমূলক হামলা’, নিহত ৫৮ পাকিস্তানি সেনা দাবি

আফগানিস্তানের তালেবান সরকার স্বীকার করেছে যে তারা পাকিস্তানি সেনাদের ওপর একাধিক স্থানে হামলা চালিয়েছে। তালেবান মুখপাত্র জবিহুল্লাহ মুজাহিদ জানিয়েছেন, আফগানিস্তান–পাকিস্তান উত্তর সীমান্তের দুর্গম পার্বত্য এলাকাগুলোতে এই সংঘর্ষ হয় এবং এতে ৫৮ পাকিস্তানি সেনা নিহত ও প্রায় ৩০ জন আহত হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

তালেবান দাবি করেছে, পাকিস্তান তাদের আকাশসীমা লঙ্ঘন করে বৃহস্পতিবার আফগান ভূখণ্ডের ভেতর এক বাজারে বোমা হামলা চালায়—এরই প্রতিশোধ হিসেবে এই হামলা চালানো হয়েছে।

অন্যদিকে, পাকিস্তান ওই সংখ্যাকে ‘বাড়িয়ে বলা’ বলে দাবি করে জানায়, তাদের ২৩ জন সেনা নিহত২৯ জন আহত হয়েছে, আর পাল্টা অভিযানে তারা ২০০ তালেবান ও সংশ্লিষ্ট সন্ত্রাসীকে “নিষ্ক্রিয়” করেছে

পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহসিন নকভি বলেছেন, “আফগান বাহিনী বিনা উসকানিতে হামলা চালিয়েছে এবং বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্য করেছে। পাকিস্তান এর জবাবে ইটের বদলে পাথর ছুড়বে।”

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, আফগানিস্তান “রক্ত ও আগুনের খেলা খেলছে”—যা আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন।


সীমান্তে গোলাগুলি ও আর্টিলারি হামলা

বিবিসির তথ্য অনুযায়ী, আফগান ও পাকিস্তানি উভয় বাহিনীই কুনার-কুররম সীমান্ত অঞ্চলে ছোট অস্ত্র এবং আর্টিলারি ব্যবহার করেছে। পাকিস্তানি সেনা সূত্র জানায়, সংঘর্ষ হয়েছে অঙ্গুর আড্ডা, বাজউর, কুররম, দির, চিত্রাল ও বারামচা এলাকাজুড়ে।

কুররম জেলার জিরো পয়েন্ট সংলগ্ন এক পুলিশ কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেন, স্থানীয় সময় রাত ১০টার দিকে আফগান দিক থেকে ভারী অস্ত্র নিক্ষেপ শুরু হয় এবং সীমান্তজুড়ে তীব্র গোলাগুলির খবর আসে।


উভয় পক্ষের বক্তব্য

তালেবান মুখপাত্র জবিহুল্লাহ মুজাহিদ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, পাকিস্তানের হামলায় নয়জন তালেবান যোদ্ধা নিহত ও ১৬ থেকে ১৮ জন আহত হয়েছেন।

অন্যদিকে, পাকিস্তান সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তালেবান ও তাদের সহযোগী বাহিনীর শত শত যোদ্ধা হতাহত হয়েছে।

আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি ভারতের নয়াদিল্লিতে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “আমাদের পাকিস্তানের জনগণ বা নেতৃত্বের সঙ্গে কোনো সমস্যা নেই, তবে কিছু গোষ্ঠী আছে যারা পরিস্থিতি নষ্ট করার চেষ্টা করছে। আফগানিস্তানের নিজের ভূখণ্ড ও সীমান্ত রক্ষার অধিকার আছে, এবং সেই অধিকার প্রয়োগ করেই প্রতিশোধ নেওয়া হয়েছে।”


সীমান্ত বন্ধ, বাণিজ্য স্থবির

সংঘর্ষের পর পাকিস্তান-আফগানিস্তানের প্রধান দুটি সীমান্ত ক্রসিং—তোরখাম ও চামান—বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এতে শত শত পণ্যবাহী ট্রাক দুই পাশে আটকা পড়েছে।

পাকিস্তানি সামরিক মুখপাত্র জানিয়েছেন, “আমরা পাকিস্তানি জনগণের জীবন ও সম্পদ রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব।”


হামলার পেছনের প্রেক্ষাপট

গত বৃহস্পতিবার আফগানিস্তানের পাকতিকা প্রদেশে পাকিস্তানি বোমা হামলায় একটি বেসামরিক বাজার ধ্বংস হয় বলে অভিযোগ করেছে তালেবান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। স্থানীয় বাসিন্দারা বিবিসিকে জানান, বাজারের একাধিক দোকান ধ্বংস হয়েছে।

পাকিস্তানের এক জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তা অভিযোগ করেছেন, আফগানিস্তান এখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কার্যক্রমের ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছে।

ইসলামাবাদ দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ করে আসছে যে আফগান তালেবান পাকিস্তান তালেবান (টিটিপি)-কে আশ্রয় ও সহযোগিতা দিচ্ছে—যারা পাকিস্তানে কঠোর ইসলামি শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে লড়ছে। তবে কাবুলের তালেবান সরকার সব সময় এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।


কূটনৈতিক প্রেক্ষাপট

এই উত্তেজনার সময়েই আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি ইতিহাসের প্রথমবারের মতো ভারতের সরকারি সফরে গিয়েছেন। নয়াদিল্লি ঘোষণা দিয়েছে, তারা কাবুলে চার বছর পর আবার দূতাবাস খুলবে।

পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নকভি সতর্ক করে বলেছেন, “আফগানিস্তানকেও ভারতের মতোই জবাব দেওয়া হবে, যাতে ভবিষ্যতে পাকিস্তানের দিকে খারাপ দৃষ্টিতে তাকানোর সাহস না পায়।”


আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

সৌদি আরব, যারা সম্প্রতি পাকিস্তানের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি করেছে, দুই দেশের মধ্যে সংযম ও উত্তেজনা এড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে।

কাতারও একইভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, ইসলামাবাদ ও কাবুলকে “সংলাপ, কূটনীতি ও সংযমকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।”


তথ্যসূত্র: বিবিসি

0%
0%
0%
0%