দক্ষিণ আফ্রিকায় ঘৃণামূলক বক্তব্যে দোষী সাব্যস্ত জুলিয়াস মালেমা

দক্ষিণ আফ্রিকার সমতা আদালত দেশটির বিরোধী রাজনীতিবিদ জুলিয়াস মালেমাকে ঘৃণামূলক বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করেছে। তিনি ২০২২ সালে এক সমাবেশে এমন বক্তব্য দেন যা আদালতের মতে সহিংসতা উসকে দেওয়ার শামিল।
জুলিয়াস মালেমা ইকোনমিক ফ্রিডম ফাইটারস (ইএফএফ) দলের নেতা। তিনি প্রায়ই বিতর্কিত বক্তব্য দেন। ১৯৯৪ সালে বর্ণবাদী শাসন শেষ হলেও দক্ষিণ আফ্রিকায় এখনো জাতিগত উত্তেজনা বিরাজ করছে।
কী ঘটেছিল
একজন শ্বেতাঙ্গ ব্যক্তি নাকি ইএফএফের এক সদস্যকে মারধর করেছিলেন। এর পর মালেমা জনসমাবেশে বলেন:
“কোনো শ্বেতাঙ্গ মানুষ আমাকে মারতে পারবে না… কখনো হত্যা করতে ভয় পাওয়া উচিত নয়। এক সময় বিপ্লবের জন্য হত্যাও প্রয়োজন হয়ে পড়ে।”
আদালতের রায়
আদালতের মতে—
- বর্ণবাদী আচরণের সমালোচনা গ্রহণযোগ্য হতে পারে।
- কিন্তু কাউকে হত্যার আহ্বান জানানো চরম সহিংসতার উসকানি।
দুটি অভিযোগ আনা হয়েছিল মালেমার বিরুদ্ধে—একটি দক্ষিণ আফ্রিকার মানবাধিকার কমিশনের পক্ষ থেকে, অপরটি এক ব্যক্তির পক্ষ থেকে যিনি দাবি করেছিলেন, ওই বক্তব্যের কারণে তিনি হুমকি পেয়েছেন।
ইএফএফ-এর প্রতিক্রিয়া
ইএফএফ এক বিবৃতিতে জানায়—
- আদালতের রায় ভুল ব্যাখ্যার উপর ভিত্তি করে।
- বক্তৃতার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও বিপ্লবী ভাষাকে উপেক্ষা করা হয়েছে।
- একজন সচেতন শ্রোতা সহজেই বুঝবেন, মালেমা বাস্তবে হত্যার আহ্বান করেননি, বরং প্রতীকী ভাষা ব্যবহার করেছেন।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
- ২০২৪ সালের জুনে যুক্তরাজ্য মালেমাকে প্রবেশে বাধা দেয়। ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ জানায়, তিনি জনস্বার্থবিরোধী।
- অভিযোগ করা হয়, তিনি হামাসকে প্রকাশ্যে সমর্থন করেছেন এবং ক্ষমতায় গেলে সংগঠনটিকে অস্ত্র দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
- তিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্বেতাঙ্গদের হত্যাকে ভবিষ্যতে গ্রহণযোগ্য বিকল্প হিসেবে ইঙ্গিত করেছেন।
- ইএফএফ এই সিদ্ধান্তকে কাপুরুষতা আখ্যা দিয়ে গণতান্ত্রিক মত প্রকাশ দমনের চেষ্টা হিসেবে উল্লেখ করে।
এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসার সঙ্গে বৈঠকে মালেমার সমালোচনা করেন। তিনি এক ভিডিও চালান যেখানে মালেমাকে একটি পুরনো বর্ণবাদবিরোধী প্রতিবাদী গান গাইতে দেখা যায়।
বিতর্কিত গান
মালেমা প্রায়ই একটি পুরনো গান গেয়ে থাকেন যাতে লাইন আছে—
“বুরকে হত্যা কর; কৃষককে হত্যা কর।”
শ্বেতাঙ্গ কৃষক সংগঠনগুলো গানটি নিষিদ্ধ করতে চাইলেও দক্ষিণ আফ্রিকার সর্বোচ্চ আদালত জানায়—
- এটি আসলে একটি ঐতিহাসিক প্রতিবাদের গান,
- এর আক্ষরিক অর্থ নেওয়া উচিত নয়, বরং প্রতীকী প্রতিবাদ হিসেবেই বোঝা উচিত।
প্রেক্ষাপট
- দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্বেতাঙ্গ সংখ্যালঘু শাসনের অবসান ঘটে ১৯৯৪ সালে।
- নেলসন ম্যান্ডেলার নেতৃত্বে দেশটি গণতন্ত্রে প্রবেশ করে।
- তবে এখনো দেশটিতে জাতিগত বৈষম্য ও উত্তেজনা রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
তথ্যসূত্র: BBC