বাংলাদেশে আসছে Realme P4 Pro: মিড-রেঞ্জ বাজেটে ফ্ল্যাগশিপ এক্সপেরিয়েন্স

Realme P4 Pro Photo
বাংলাদেশের স্মার্টফোন বাজারে শিগগিরই আসছে Realme P4 Pro। পারফরম্যান্স সেন্টার সিরিজের এই নতুন স্মার্টফোনটি ইতিমধ্যেই ভারতসহ বিভিন্ন বাজারে আলোচনায় রয়েছে। বাংলাদেশে লঞ্চ হলে এর সম্ভাব্য দাম হতে পারে প্রায় ৩৫ হাজার টাকা।
ফোনটিতে থাকছে শক্তিশালী Snapdragon 7s Gen 4 প্রসেসর, যার AnTuTu স্কোর প্রায় ১১ লাখ। গেমিং প্রেমীদের জন্য রয়েছে আলাদা আকর্ষণ— অফিসিয়ালি BGMI গেমে 90FPS সাপোর্ট থাকলেও Realme–এর ডুয়াল AI চিপ ও হাইপার মোশন টেকনোলজি ব্যবহার করে গেমপ্লে 144Hz পর্যন্ত বুস্ট করা যাবে।
ডিজাইন ও বিল্ড: হালকা কিন্তু শক্তিশালী
Realme P4 Pro–এর ডিজাইন নিয়ে আলাদা করে না বললেই নয়। এর ব্যাকপ্যানেলে রয়েছে উডেন ফিনিশ ডিজাইন, যা সাধারণ গ্লাস বা প্লাস্টিক বডির ফোনের ভিড়ে একে আলাদা করে তুলেছে। বিশেষ করে “Bridge Wood Color Variant” ব্যবহারকারীদের কাছে প্রিমিয়াম ফিল দেবে।
ফোনটির ওজন মাত্র ১৯০ গ্রাম এবং থিকনেস মাত্র ৭.৬ মিমি। আশ্চর্যজনক বিষয় হলো, এত বড় ৭০০০ এমএএইচ ব্যাটারি থাকার পরও ফোনটি হাতে একেবারেই ভারী মনে হয় না। যদিও এটি সম্পূর্ণ জলরোধী নয়, তবে IP65/IP66 রেটিং থাকায় ধুলো ও পানি ছিটকে পড়ার বিরুদ্ধে কিছুটা সুরক্ষা পাওয়া যাবে।
ডিসপ্লে: চোখ ধাঁধানো কার্ভড AMOLED
স্মার্টফোনটির অন্যতম আকর্ষণীয় দিক এর ডিসপ্লে। এখানে ব্যবহার করা হয়েছে 4D কার্ভড AMOLED প্যানেল, যার রেজোলিউশন 1.5K এবং সর্বোচ্চ উজ্জ্বলতা ৬৫০০ নিটস। ফলে তীব্র রোদেও স্ক্রিনে কোনো সমস্যা হবে না।
এছাড়া এতে রয়েছে বিশেষ Hyper Vision Chip, যা সাধারণ ভিডিওকেও HDR কোয়ালিটিতে কনভার্ট করতে পারে। অর্থাৎ ইউটিউব, Netflix বা Hotstar–এ কনটেন্ট দেখার অভিজ্ঞতা হবে আরও সমৃদ্ধ। সঙ্গে রয়েছে AI Hyper Boost ও MEMC প্রযুক্তি, যা ভিডিওকে ১২০FPS পর্যন্ত আপস্কেল করতে পারে। ফলে ভিডিও হবে আরও মসৃণ ও সিনেমাটিক।
সফটওয়্যার ও AI ফিচার: স্মার্ট এক্সপেরিয়েন্স
ফোনটি চলছে সর্বশেষ Android 15–এ, যার উপর রয়েছে Realme UI। কোম্পানি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে ৩ বছরের বড় সফটওয়্যার আপডেট ও ৪ বছরের সিকিউরিটি আপডেট।
AI ফিচারের ক্ষেত্রেও Realme এবার বড়সড় চমক দিয়েছে। ফোনটিতে রয়েছে:
- AI Eraser → অবাঞ্ছিত অবজেক্ট মুছে ফেলতে
- AI Unblur → ঝাপসা ছবি পরিষ্কার করতে
- AI Reflection Tool → ফটো এডিটিং-এ আরও সৃজনশীলতা আনতে
- Circle to Search → গুগল লেন্সের মতো সার্চ সুবিধা
- AI Genie → টেক্সট জেনারেশন ও কনটেন্ট সাজেশন
পারফরম্যান্স: নতুন প্রজন্মের পাওয়ারহাউস
Realme P4 Pro চালিত হচ্ছে Snapdragon 7s Gen 4 প্রসেসর–এ। AnTuTu বেঞ্চমার্কে এর স্কোর প্রায় ১১ লাখ, যা এই বাজেট সেগমেন্টে অসাধারণ। ফোনটিতে ব্যবহৃত হয়েছে LPDDR4X RAM ও UFS 3.1 স্টোরেজ, ফলে মাল্টিটাস্কিং, হাই-স্পিড অ্যাপ লোডিং কিংবা বড় গেম চালানো সবকিছুই হবে দ্রুত ও মসৃণ।
গেমিং পারফরম্যান্স: মোবাইল গেমারদের স্বপ্ন
গেমারদের জন্য Realme P4 Pro একটি বিশেষ উপহার হতে পারে। অফিসিয়ালি BGMI গেমে 90FPS সাপোর্ট থাকলেও, ফোনে ব্যবহৃত ডুয়াল AI চিপ ও Hyper Motion ফিচার ব্যবহার করে গেমপ্লে 144Hz পর্যন্ত বুস্ট করা সম্ভব।
টেস্টে দেখা গেছে, 144Hz মোডে গেম খেলার অভিজ্ঞতা ছিল একেবারে ল্যাগ-ফ্রি, ফ্রেম ড্রপ ছাড়াই। তাই গেমিং স্মার্টফোন খুঁজছেন এমন ব্যবহারকারীদের জন্য এটি নিঃসন্দেহে একটি গেম-চেঞ্জার ডিভাইস হতে পারে।
ক্যামেরা: ফটোগ্রাফিতে নতুন মাত্রা
Realme P4 Pro–এর ক্যামেরা সেটআপও যথেষ্ট আকর্ষণীয়।
- পিছনে রয়েছে ৫০ মেগাপিক্সেল Sony IMX মেইন সেন্সর এবং ৮ মেগাপিক্সেল আল্ট্রা-ওয়াইড সেন্সর।
- সামনে রয়েছে বিশাল ৫০ মেগাপিক্সেল সেলফি ক্যামেরা।
ডে-লাইটে ছবি তুললে ডিটেইলস স্পষ্ট এবং কালার আউটপুট প্রাণবন্ত। তবে অনেক সময় ছবিতে কিছুটা বেশি স্যাচুরেশন দেখা যায়। পোর্ট্রেট মোডে এজ-ডিটেকশন নিখুঁত, যা DSLR-এর মতো ইফেক্ট দেয়। লো-লাইটে কিছুটা স্কিন টোন ডার্ক হয়ে গেলেও, সামগ্রিক পারফরম্যান্স প্রশংসনীয়।
ভিডিওগ্রাফির ক্ষেত্রে ফোনটি আরও এগিয়ে। কারণ, মেইন এবং ফ্রন্ট উভয় ক্যামেরাই 4K 60FPS ভিডিও রেকর্ডিং সাপোর্ট করে।
ব্যাটারি ও চার্জিং: সর্বোচ্চ ব্যাকআপ
ফোনটিতে রয়েছে বিশাল 7000 mAh ব্যাটারি, যা সহজেই দুই দিনের বেশি ব্যাকআপ দিতে সক্ষম। শুধু তাই নয়, এর সঙ্গে থাকছে 80W ফাস্ট চার্জিং, যা মাত্র ২৫ মিনিটে ৫০% চার্জ করে ফেলতে পারে। স্ক্রিন-অন টাইম প্রায় ১১–১২ ঘণ্টা, যা একে পাওয়ার ইউজারদের জন্য আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে।
অন্যান্য ফিচার
- ডুয়াল স্টেরিও স্পিকার
- ইন-ডিসপ্লে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর
- ডুয়াল 5G সাপোর্ট
- সাইলেন্ট কল রেকর্ডিং সুবিধা
- আইআর সেন্সর
মিড-রেঞ্জে ফ্ল্যাগশিপ এক্সপেরিয়েন্স
সব দিক মিলিয়ে বলা যায়, Realme P4 Pro বাংলাদেশের বাজারে আসলে ৩০–৩৫ হাজার টাকার মধ্যে এটি হবে একটি দুর্দান্ত চয়েস। যারা দীর্ঘ ব্যাটারি ব্যাকআপ চান, প্রিমিয়াম কার্ভড ডিসপ্লে পছন্দ করেন, নিয়মিত গেম খেলেন এবং ভালো ক্যামেরা চান— তাদের জন্য এটি নিঃসন্দেহে ফ্ল্যাগশিপ-লেভেল অভিজ্ঞতা এনে দেবে।
বাংলাদেশি তরুণ ব্যবহারকারীদের মধ্যে ফোনটি বড়সড় সাড়া ফেলবে বলেই মনে হচ্ছে।