ইউরোপিয়ান নেশনস লিগে পর্তুগাল বনাম স্পেন ফুটবল ম্যাচে স্পেনকে হারিয়ে পর্তুগালের শিরোপা জয়

ইউরোপিয়ান নেশনস লিগে পর্তুগাল বনাম স্পেন ফুটবল ম্যাচে স্পেনকে হারিয়ে পর্তুগালের শিরোপা জয়
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশঃ জুন 9, 2025 7:44 পূর্বাহ্ন

ইউরোপিয়ান নেশনস লিগে ফাইনালে পর্তুগাল বনাম স্পেন ফুটবল ম্যাচে অসাধারণ এক ম্যাচে টাইব্রেকারে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী স্পেনকে হারিয়ে ইউরোপিয়ান নেশনস লিগের শিরোপা জয় করলো পর্তুগাল। এ নিয়ে জাতীয় দলের হয়ে তৃতীয়বারের মতো শিরোপা ঘরে তুললেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। ম্যাচশেষে আবেগাপ্লুত হয়ে কেঁদে ফেলেন এই পর্তুগিজ মহাতারকা।

অবশ্য রোনালদো ছিলেন না মাঠে ম্যাচের শেষ অংশে। ৮৮তম মিনিটে বদলি হন তিনি। কিন্তু এর আগেই ম্যাচে নিজের দায়িত্ব পালন করে গেছেন। ম্যাচের ৬১তম মিনিটে দুর্দান্ত এক ক্লোজ-রেঞ্জ ফিনিশে তিনি গোল করে ম্যাচে সমতা আনেন (২-২)। এটি ছিল তাঁর আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ১৩৮তম গোল—যা তাঁকে এই রেকর্ডে আরও এগিয়ে দিলো। চলতি নেশনস লিগে এটি ছিল তাঁর নবম ম্যাচে অষ্টম গোল—শুধু সুইডেনের ভিক্টর গিয়োকারেস এর চেয়ে এগিয়ে।

রোনালদোর এই সাফল্য আরো বিস্ময়কর, কারণ তিনি বর্তমানে ৪০ বছর বয়সী এবং গত আড়াই বছর ধরে সৌদি ক্লাব আল-নাসরের হয়ে খেলছেন।

🟥 স্পেনের হোঁচট, পর্তুগালের উত্থান

নেশনস লিগে আগেরবার (২০২৩) চ্যাম্পিয়ন হওয়া স্পেন ইউরো ২০২৪-এও ছিল দুর্দান্ত। এবার সেমিফাইনালে ফ্রান্সকে ৫-৪ গোলে হারিয়ে ফাইনালে পৌঁছায় তারা। কিন্তু ফাইনালে এসে রোনালদো এবং তাঁর দলকেই থামাতে পারেনি তারা।

ম্যাচে দারুণ পারফর্ম করেছেন তরুণ ডিফেন্ডার নুনো মেন্ডেস। স্পেনের ১৭ বছর বয়সী বিস্ময়বালক লামিন ইয়ামালকে পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় করে রাখার পাশাপাশি নিজেও একটি গোল করেন মেন্ডেস।

🎙️ ম্যাচশেষে রোনালদোর প্রতিক্রিয়া

রোনালদো বলেন, “পর্তুগালের হয়ে জয় মানেই বিশেষ কিছু। আমি ক্লাব পর্যায়ে অনেক শিরোপা জিতেছি, কিন্তু দেশের হয়ে জয়টাই সবচেয়ে বড় আনন্দ। এটা চোখের পানি, এটা দায়িত্ব পালন, এবং এটা আনন্দের মুহূর্ত।”

ম্যাচ-পূর্ব সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, “কেবল রোনালদো বনাম কাউকে ভাবলে হবে না। এটা দল বনাম দল।”

এদিন ম্যাচে তাঁর গোলটি আসে নুনো মেন্ডেসের ডিফ্লেক্টেড ক্রস থেকে, যা তিনি নিখুঁতভাবে জালে পাঠান। এটি ছিল তাঁর ক্যারিয়ারের ৯৩৮তম গোল।

🎤 বিশেষজ্ঞদের প্রশংসা

আইটিভির বিশ্লেষক আন্দ্রোস টাউনসেন্ড বলেন, “এই জন্যই রোনালদো মাঠে থাকেন। তিনি বক্সে একজন শিকারি। মানুষ তাঁকে বারবার অবমূল্যায়ন করেছে, কিন্তু আজও তিনি তাঁর জাত চিনিয়েছেন।”

বিশ্লেষক ক্যারেন কার্নি বলেন, “৩০ পার হলেই ফুটবলে সবাই বলে, ‘বুড়ো’। এই মানুষটা ৪০ বছর বয়সেও আমাদের ভুল প্রমাণ করে চলেছেন।”

রোনালদো পুরো ম্যাচে মাত্র ২২ বার বল স্পর্শ করলেও বারবার ডিফেন্সে ফিরে বল কেড়ে নিয়েছেন, এমনকি ইয়ামালের কাছ থেকেও।

🛑 লামিন ইয়ামালের স্তব্ধতা

স্পেনের তরুণ উইঙ্গার ইয়ামাল, যিনি সেমিফাইনালে দুই গোল করেছিলেন, এই ম্যাচে ছিলেন প্রায় অদৃশ্য। চারটি শট নিয়েও গোল পাননি। ইউরোপীয় ফুটবল বিশ্লেষক গুইলেম বালাগু বলেন, “আজকের রাত ইয়ামালের জন্য বড় শিক্ষা। তাঁকে এখন ভাবতে হবে কীভাবে এমন পরিস্থিতি মোকাবেলা করবেন।”

👔 কোচ মার্টিনেজের প্রথম আন্তর্জাতিক শিরোপা

পর্তুগাল কোচ রবার্তো মার্টিনেজের জন্য এটি প্রথম আন্তর্জাতিক ট্রফি। আগের দল বেলজিয়ামের সোনালী প্রজন্মের সঙ্গে ব্যর্থ হলেও এবার পর্তুগালের হয়ে সফল হলেন। ২০১৩ সালে উইগানের হয়ে এফএ কাপ জেতার পর এটি তাঁর প্রথম শিরোপা।

মার্টিনেজ ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে কোচ হিসেবে দায়িত্ব নেন এবং ২০২৬ বিশ্বকাপ পর্যন্ত চুক্তিবদ্ধ। তাঁর ভবিষ্যৎ নিয়ে গুঞ্জন থাকলেও এই শিরোপা জয়ে তা থেমে যেতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

⚡ মেন্ডেসের জাদু

২২ বছর বয়সী নুনো মেন্ডেস ছিলেন পুরো ম্যাচের সেরা। গোল, ডিফেন্স, অ্যাসিস্ট—সবকিছুতেই ছিলেন অনবদ্য। সেমিফাইনালেও অ্যাসিস্ট করেন তিনি। ইউরোপিয়ান ফুটবল পর্যবেক্ষকরা বলছেন, “সে আক্রমণে ও রক্ষণে সমান দক্ষ। এই টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত পারফর্ম করেছে।”

  • ৪টি সফল ড্রিবল (দলের মধ্যে সর্বোচ্চ)
  • ৭টি ডুয়েল জয় (সবার সমান)
  • ৫টি ট্যাকল জয় (দলের মধ্যে সর্বোচ্চ)
  • ১৬টি পাস ফাইনাল থার্ডে (সর্বোচ্চ)
  • ম্যাচসেরা (ম্যান অব দ্য ম্যাচ)

পর্তুগালকে আবারও আন্তর্জাতিক শিরোপা এনে দিলেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। নতুন তারকারা যেমন নুনো মেন্ডেস, তেমনি অভিজ্ঞ রোনালদো একসঙ্গে দলকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। আর কোচ মার্টিনেজ এবার প্রমাণ করলেন, তাঁর ওপর আস্থা রাখা ভুল ছিল না।

একটা বিষয় নিশ্চিত—রোনালদো এখনো থেমে যাননি। ৪০ বছরেও তিনি রয়ে গেছেন পর্তুগালের ‘গেম চেঞ্জার’।

সম্পর্কিত-
0%
0%
0%
0%