বাংলাদেশের গণভোট কী ?

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশঃ 1 নভেম্বর 2025, 08:58 পূর্বাহ্ন
বাংলাদেশের গণভোট কী ?

বাংলাদেশে গণভোট বলতে বোঝায় এমন একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া, যেখানে কোনও গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় সিদ্ধান্ত বা সংবিধান–সংক্রান্ত পরিবর্তন সরাসরি সাধারণ জনগণের ভোটের মাধ্যমে নির্ধারিত হয়। অর্থাৎ, সংসদ বা সরকারের সিদ্ধান্তের পাশাপাশি জনগণের মতামতই হয় চূড়ান্ত।

বিজ্ঞাপন

সংবিধানের ১১‐তম সংশোধনের মাধ্যমে গণভোট পদ্ধতি বাংলাদেশে যুক্ত হয়েছিল। বাংলাদেশের ইতিহাসে গণভোট খুবই বিরল ঘটনা। স্বাধীনতার পর দেশটিতে তিন ধরনের বড় গণভোট অনুষ্ঠিত হয়—১৯৭৭ সালের রাষ্ট্রপতি আস্থা গণভোট, ১৯৮৫ সালের সামরিক শাসনের সময়ের গণভোট এবং ১৯৯১ সালের সাংবিধানিক গণভোট। প্রতিটি গণভোটের পেছনে ছিল ভিন্ন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এবং জাতীয় সিদ্ধান্ত নেওয়ার গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত।

১৯৭৭ সালের আস্থা গণভোট অনুষ্ঠিত হয় রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের প্রতি জনগণের আস্থা যাচাই করার লক্ষ্যে। স্বাধীনতার পর রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং নেতৃত্ব পরিবর্তনের ধারাবাহিকতার মধ্যে এই গণভোট আয়োজন করা হয়। তৎকালীন সামরিক শাসকের হাতে রাষ্ট্রক্ষমতার বৈধতা প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টায় এটি ছিল গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। সরকার দাবি করে, বিপুল ভোটার এতে অংশ নিয়েছিল এবং জনগণ নেতৃত্বের প্রতি সমর্থন জানিয়েছিল, যদিও বিরোধী মতামত বলছিল—গণভোটের পরিবেশ ছিল নিয়ন্ত্রিত ও বিতর্কিত।

এরপর ১৯৮৫ সালে সামরিক শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আমলে আরও একটি গণভোট অনুষ্ঠিত হয়। এরশাদের ক্ষমতা গ্রহণ ও সামরিক শাসনের বৈধতা তুলে ধরতে জনগণের মতামত নেওয়ার কথা বলা হয়। সরকার ফলাফল হিসেবে বিপুল জনসমর্থনের কথা জানায়, তবে বিরোধী দলগুলো দাবি করে, এটি ছিল অনিয়ম ও চাপের মাধ্যমে সাজানো একটি রাজনৈতিক বৈধতা অর্জনের প্রক্রিয়া। এই গণভোটও দেশজুড়ে বিতর্কের জন্ম দেয় এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা কমায়নি।

বিজ্ঞাপন

সবশেষে ১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক গণভোট। এর মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়—দেশ কি সংসদীয় ব্যবস্থা নেবে, নাকি প্রেসিডেন্টশাসিত ব্যবস্থা থাকবে। জনগণ বিপুলভাবে সংসদীয় গণতন্ত্রের পক্ষে রায় দেয়, এবং এর ভিত্তিতেই বাংলাদেশ পুনরায় সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে আসে।

গণভোট কেন করা হয়?

গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় প্রশ্নে:

  • সংবিধান সংশোধন
  • রাষ্ট্র পরিচালনার মূল কাঠামো বদলের প্রস্তাব
  • জাতীয় নীতি ও দিকনির্দেশনা পরিবর্তন
  • জনগণের মতামত স্পষ্টভাবে জানা

এসব ক্ষেত্রে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতেই গণভোট ব্যবহৃত হয়।

ভোট দেওয়ার যোগ্যতা

অন্যান্য নির্বাচনের মতোই:

  • দেশের নাগরিক
  • ভোটার তালিকাভুক্ত
  • নির্ধারিত বয়স (১৮+) সম্পূর্ণ হতে হয়

গণভোটে সিদ্ধান্ত কীভাবে গৃহীত হয়?

ভোটের অধিকাংশ জনগণ যে সিদ্ধান্তে একমত হয়, সেটিই রাষ্ট্রীয়ভাবে গ্রহণ করা হয়। সাধারণত:

  • ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ ভোটের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বাংলাদেশে বর্তমান অবস্থা

বাংলাদেশের সংবিধানে গণভোটের বিধান থাকলেও দীর্ঘ সময়ে এটি ব্যবহার করা হয়নি। দেশে বড় কোনো নীতি পরিবর্তন বা সাংবিধানিক সংশোধনের ক্ষেত্রে আলোচনা উঠলে গণভোটের প্রসঙ্গ সামনে আসে। তবে বাস্তবে এখনও পর্যন্ত নতুন কোনো গণভোটের ঘোষণা নেই।

সম্পর্কিত- নির্বাচন
0%
0%
0%
0%