জুলাই সনদে সই না করলেও আইনি আলোচনায় থাকছে এনসিপি

আইনি ভিত্তি না থাকায় সই করেনি দলটি, তবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত থাকবে

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশঃ 18 অক্টোবর 2025, 07:34 অপরাহ্ন
জুলাই সনদে সই না করলেও আইনি আলোচনায় থাকছে এনসিপি

আলোচিত জুলাই সনদে সই না করলেও আইনি জটিলতা নিরসন এবং সনদটিকে একটি যথাযথ আইনি ভিত্তি দিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাবে জাতীয় নাগরিক পার্টি । দলটি জানিয়েছে, আইনি ভিত্তি ও বৈধতা–সংক্রান্ত বিষয়গুলো স্পষ্টভাবে নিশ্চিত হলেই তারা জুলাই সনদে সই করবে।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (১৮ অক্টোবর) এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব (দপ্তর) সালেহ উদ্দিন সিফাত স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়। এর এক দিন আগে, শুক্রবার সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের উপস্থিতিতে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করে ২৪টি রাজনৈতিক দল। তবে জুলাই অভ্যুত্থানে সামনের সারিতে থাকা তরুণদের গড়া দল এনসিপি সেই অনুষ্ঠানে অংশ নেয়নি।

কেন সই করেনি এনসিপি

বিবৃতিতে এনসিপি জানায়,

“জুলাই সনদের আইনগত ভিত্তি ও বৈধতা নিশ্চিত না করে এবং বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া সম্পর্কে জাতিকে স্বচ্ছ ধারণা না দিয়েই সরকার সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে। কোনো আইনি ভিত্তি না থাকা, বাস্তবায়ন আদেশের খসড়া প্রকাশ না করা এবং বাস্তবায়ন পদ্ধতির পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা জাতির সামনে উন্মোচন না করায় কেবল আনুষ্ঠানিকতার জন্য আমরা সই করিনি।”

বিজ্ঞাপন

দলটি আরও উল্লেখ করে, প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এনসিপি ‘বাহাত্তরের ফ্যাসিবাদী বন্দোবস্ত’ বিলোপ করে একটি নতুন গণতান্ত্রিক সংবিধানের দাবি জানিয়ে আসছে। তারা সারা দেশে জনসংযোগ কার্যক্রম চালানোর পাশাপাশি ঐকমত্য কমিশনের মাধ্যমেও রাষ্ট্রের কাঠামোগত সংস্কারের তাগিদ দিয়ে আসছে।

জুলাই সনদের আইনি ঘাটতি নিয়ে এনসিপির উদ্বেগ

বিবৃতিতে এনসিপি অভিযোগ করে, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে জাতিকে “ধোঁয়াশায়” রাখা হয়েছে। তারা দাবি করে—

  • সনদে ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ’ নামে কোনো আইনি ভিত্তির উল্লেখ নেই,
  • অভ্যুত্থান-পরবর্তী বন্দোবস্তের নৈতিক ও আইনি ভিত্তি হিসেবে জনগণের ‘সার্বভৌম ও গাঠনিক ক্ষমতা’ স্বীকৃত হয়নি।

বিবৃতিতে বলা হয়,

“সব রাজনৈতিক দল গণভোটে সম্মত হলেও তার আইনি কাঠামো বা বাস্তবায়ন আদেশের উল্লেখ নেই। ফলে এই সনদের কার্যকারিতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়েছে।”

এনসিপি আরও জানায়, জুলাই সনদে রাজনৈতিক দলগুলো সংবিধানের এমন কিছু অনুচ্ছেদ পরিবর্তনের বিষয়ে একমত হয়েছে, যা বর্তমান সংবিধানের তথাকথিত ‘বেসিক স্ট্রাকচার’ বা মৌলিক কাঠামোর অংশ।

“ফলে বাহাত্তরের সাংবিধানিক কাঠামোর অধীনে থেকে ওই কাঠামো লঙ্ঘন করলে ভবিষ্যতে আদালতে এই প্রক্রিয়া চ্যালেঞ্জড হয়ে বাতিল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এভাবে সনদ পাস হলে তা জনগণের সঙ্গে এক ধরনের সাংবিধানিক প্রতারণা হবে,”—বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

‘বাস্তবায়ন আদেশ’ জারির দাবি

গণভোটের আগে জনগণের সার্বভৌম ইচ্ছার প্রতিফলন হিসেবে এনসিপি সরকারপ্রধান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ’ জারির দাবি জানিয়েছে। দলটি বলেছে, এই আদেশে সনদের আইনি ভিত্তি, বৈধতা এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকা প্রয়োজন।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়,

“ফ্যাসিবাদবিরোধী অনেক রাজনৈতিক দল আশাবাদ নিয়ে সনদে সই করেছে যে, শিগগিরই সনদটির আইনি ভিত্তি দেওয়া হবে। ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে, এবং আগামী কয়েক দিনের আলোচনায় এই দলগুলোও আমাদের পাশে থাকবে বলে আশা করি।”

এনসিপি হুঁশিয়ারি দেয়,

“জুলাই সনদকে কোনোভাবেই জুলাই ঘোষণাপত্রের মতো আইনি ভিত্তিহীন রাজনৈতিক সমঝোতা বা ‘জেন্টেলম্যান’স অ্যাগ্রিমেন্ট’-এ পরিণত করা যাবে না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জুলাই অভ্যুত্থানের মূল চেতনা ধারণ করে সনদের আইনি ভিত্তি ও বাস্তবায়নে কার্যকর উদ্যোগ নেবে—আমরা সেই প্রত্যাশাই করি।”


‘জুলাই যোদ্ধাদের ওপর হামলার নিন্দা’

এনসিপির বিবৃতিতে সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের আগে ‘জুলাই যোদ্ধাদের’ ওপর হামলার তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে। দলটির ভাষায়,

“জুলাইয়ের শহীদ পরিবার ও আহত যোদ্ধারা কিছু ন্যায্য দাবি নিয়ে অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। তাঁদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ঐকমত্য কমিশন সনদের অঙ্গীকারনামার পঞ্চম দফা সংশোধনের ঘোষণা দেয়। কিন্তু কমিশন শুরুতেই বিষয়টি আমলে নিলে তাদের রাজপথে নামতে হতো না।”

এনসিপি আহতদের ওপর হামলার ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করে জানায়,

“জুলাইয়ের শহীদ ও আহতদের আত্মত্যাগের কারণেই আজকের জুলাই সনদ সম্ভব হয়েছে। অথচ তাঁদের ওপর হামলা চালিয়ে এবং অসম্মান করে এই সনদকে ‘পাওয়ার এলিটদের সেটেলমেন্টে’ পরিণত করার চেষ্টা করা হয়েছে।”

দলটি অভিযোগ করে, সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত শহীদ পরিবারগুলোও প্রাপ্য সম্মান পাননি। বিবৃতিতে বলা হয়,

“শহীদ পরিবাররাই এই অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ হওয়া উচিত ছিল। অথচ তাঁদের মঞ্চ থেকে দূরে বসিয়ে প্রশাসন তাঁদের সঙ্গে অমর্যাদাকর আচরণ করেছে—যা গভীরভাবে দুঃখজনক।”


0%
100%
0%
0%