জুলাই সনদে সই না করার কারণ জানাল এনসিপি

আলোচিত জুলাই গণঅভ্যুত্থান থেকে জন্ম নেওয়া প্রধান রাজনৈতিক শক্তি জাতীয় নাগরিক পার্টি আলোচিত জুলাই সনদে সই করেনি। শুধু তাই নয়—দলটি সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অংশও নেয়নি।
শনিবার (১৮ অক্টোবর) রাজধানীতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি স্পষ্টভাবে তুলে ধরেন এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন। তিনি বলেন,
“জুলাই সনদের কোনো আইনিভিত্তি নেই, তাছাড়া বাস্তবায়নের সুনির্দিষ্ট পদ্ধতিও নেই। তাই আমরা এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করিনি এবং অনুষ্ঠানেও যাইনি।”
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামসহ শীর্ষ নেতারা। তারা জানান, সনদে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত হঠাৎ নয়—দীর্ঘ আলোচনা, মূল্যায়ন ও দলের অভ্যন্তরীণ মতামতের ভিত্তিতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এর আগে শুক্রবার এনসিপির পক্ষ থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়,
“জুলাই সনদকে আমরা কেবল রাজনৈতিক সমঝোতার দলিল বা ফাঁকা প্রতিশ্রুতি মনে করি না। আমাদের কাছে এটি বাংলাদেশের রাষ্ট্রব্যবস্থার স্বৈরাচারী ভিত্তি ভেঙে দিয়ে গণতান্ত্রিক রূপান্তরের ঘোষণাপত্র। কিন্তু সেই কাজ সম্পন্ন করতে হলে সনদের অবশ্যই একটি স্পষ্ট আইনি ও সাংবিধানিক ভিত্তি থাকতে হবে।”
দলটির দাবি, সনদে স্বাক্ষর করার আগে তারা চায় বাস্তবায়ন আদেশ, পদ্ধতি ও কাঠামোর পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা দেখতে।
গতকাল দেওয়া আরেক বিবৃতিতে এনসিপি জানিয়েছে, বিগত এক বছর ধরে রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নিয়ে জুলাই সনদ ও তার বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে একমত হয়েছে। ঐকমত্য অনুযায়ী—
- জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য প্রথমে থাকবে জুলাই সনদ আদেশ,
- এরপর গণভোট, এবং
- সর্বশেষ সংবিধানের মৌলিক পরিবর্তনে সক্ষম নতুন সংসদ, যা দ্বৈত ভূমিকা পালন করবে।
কিন্তু এনসিপির অভিযোগ,
“সনদের অঙ্গীকারনামায় কোথাও এই বাস্তবায়ন পদ্ধতির উল্লেখ নেই। এমন অবস্থায় সনদে সই করা মানে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করা। কারণ, অতীতে রাজনৈতিক দলগুলো নিজেরাই তাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে।”
দলটির পক্ষ থেকে আরও বলা হয়,
“আমরা জুলাই সনদের আদর্শ ও উদ্দেশ্যের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। তবে বাস্তবায়নের আইনি নিশ্চয়তা ও সুস্পষ্ট প্রক্রিয়া না দেখা পর্যন্ত এনসিপি এই সনদে স্বাক্ষর করবে না।”
সংবাদ সম্মেলনের শেষে আখতার হোসেন বলেন,
“জুলাই সনদ কেবল একটি দলিল নয়, এটি জনগণের ভবিষ্যতের প্রশ্ন। তাই জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকেই আমরা সতর্কভাবে এগোচ্ছি।”
