নির্ধারিত সময় ফেব্রুয়ারিতেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে: প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশঃ 16 অক্টোবর 2025, 08:23 পূর্বাহ্ন
নির্ধারিত সময় ফেব্রুয়ারিতেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে: প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস পুনরায় স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

বিজ্ঞাপন

বুধবার ১৫ অক্টোবর সন্ধ্যায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এক বৈঠকে তিনি বলেন, “আমরা বারবার বলেছি— নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতেই হবে… এবং উৎসবমুখর পরিবেশেই হবে।”

তিনি আরও বলেন, “এই নির্বাচন জুলাই জাতীয় সনদের অংশ, যা কমিশন প্রস্তুত করেছে। উভয় বিষয় একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কিত। আমরা আগেই যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, সেটি আমাদের রাখতে হবে। উৎসবমুখর নির্বাচনের জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করব— এ বিষয়ে কোনো আপস হবে না।”

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে জুলাই সনদ প্রণয়ন করেছে, এখন সরকারের দায়িত্ব সেই ঐক্যের ধারাবাহিকতায় নির্বাচন আয়োজন করা।
“যদি আমরা সবাইকে নিয়ে এই নির্বাচন সফলভাবে আয়োজন করতে পারি, তবেই আমাদের প্রচেষ্টা সার্থক হবে,” তিনি যোগ করেন।

বিজ্ঞাপন

রাজনৈতিক রূপান্তর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আপনারা আলোচনায় যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, আমরা সেই অনুযায়ী একটি সন্তোষজনক পরিবর্তনের পথে এগোব। আপনাদের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা যেন বাস্তবে রূপ নেয়, সেটিই আমাদের প্রত্যাশা।”

বৈঠকে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিুর রহমান আকমা, ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টির সদস্য সচিব আখতার হোসেন, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মঞ্জু, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, বিপ্লবি ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক এবং জাসদ নেত্রী তানিয়া রবসহ অন্যান্য রাজনৈতিক নেতা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকের শুরুতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রিয়াজ স্বাগত ভাষণ দেন এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।

জুলাই সনদ প্রসঙ্গে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “এটি শুধু বাংলাদেশের ইতিহাসে নয়, বিশ্ব রাজনীতির ইতিহাসেও এক অনন্য অর্জন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে সংলাপ ও ধৈর্যের মাধ্যমে যে ঐক্য গড়ে উঠেছে, তা প্রমাণ করেছে— আলোচনাই বিভেদ দূর করতে পারে।”

তিনি উপস্থিত সকল রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “আপনারা অক্লান্ত পরিশ্রম ও নিষ্ঠার মাধ্যমে অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন। অনেকে ভাবেননি যে জুলাই সনদ বাস্তবায়িত হবে— কিন্তু আপনারা সেটি করেছেন।”

প্রধান উপদেষ্টা কমিশনের সকল সদস্য, বিশেষ করে সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রিয়াজসহ সহকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, “আপনাদের অবদান জাতি চিরকাল মনে রাখবে।”

তিনি বলেন, জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষরের দিনটি বাংলাদেশের ইতিহাসে “স্বর্ণাক্ষরে লেখা এক অধ্যায়” হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে, যা ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় নতুন সংস্কার অধ্যায়ের সূচনা করবে।
“এটি কোনো সমাপ্তি নয়, বরং বহু নতুন অধ্যায়ের সূচনা,” উল্লেখ করেন তিনি।

অধ্যাপক ইউনূস আরও জানান, সনদের মূল বিষয়গুলো দেশের স্কুল, কলেজ ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে, যেন প্রতিটি নাগরিক এর ভাবনা ও উদ্দেশ্য বুঝতে পারে।

তিনি বলেন, “জুলাই সনদ আমাদের জাতীয় সম্পদ। যেসব কলম দিয়ে এই সনদ স্বাক্ষর করা হবে, তা জাদুঘরে সংরক্ষণ করা হবে।”

তিনি আরও জানান, কমিশনের কার্যক্রম, আলোচনা ও বিতর্কসমূহের দলিলপত্র সংরক্ষণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে— যা প্রকাশনা ও ভিডিও আকারে জাতীয় ঐতিহ্য হিসেবে রাখা হবে।

বক্তৃতার শেষে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “শুক্রবার জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় অনুষ্ঠিতব্য জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান হবে এক জাতীয় উৎসব। আমরা সবাই একসঙ্গে সেখানে যাব, উৎসবমুখর পরিবেশে সনদে স্বাক্ষর করব, এবং পুরো জাতির সঙ্গে এই ঐতিহাসিক মুহূর্ত ভাগ করে নেব।”

তথ্যসূত্র: বাসস

0%
0%
0%
0%