ফরিদপুর বিভাগে শরীয়তপুর অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাবের বিরুদ্ধে উত্তাল জেলা
পদ্মা সেতুর টোলপ্লাজা অবরোধে এক ঘণ্টা স্থবির দক্ষিণাঞ্চল

প্রস্তাবিত ফরিদপুর বিভাগে শরীয়তপুর জেলার নাম অন্তর্ভুক্ত না করার দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠেছে পুরো শরীয়তপুর।
মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) সকাল থেকেই জেলার সর্বত্র বিক্ষোভ, মানববন্ধন ও স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে পরিবেশ।
সবচেয়ে বড় কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয় জাজিরা উপজেলার নাওডোবায় পদ্মা সেতুর দক্ষিণ টোলপ্লাজা এলাকায়,
যেখানে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত সেতুটি অবরোধ করে রাখে স্থানীয় সংগঠন ‘জাগো শরীয়তপুর’ ও হাজারো সাধারণ মানুষ।
এক ঘণ্টাব্যাপী এই অবরোধে দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই সেতুতে যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়।
দুই প্রান্তে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়, ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রী ও পরিবহনকর্মীরা।
এসময় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এলাকা জুড়ে, পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশও সতর্ক অবস্থান নেয়।
হাজারো মানুষের স্লোগান: “শরীয়তপুর ছিল, আছে, থাকবে ঢাকায়!”
বিক্ষোভে অংশ নেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠনের সদস্যরা।
বক্তব্য রাখেন সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সরদার একেএম নাসিরউদ্দিন কালু,
‘জাগো শরীয়তপুর’-এর আহ্বায়ক আমিন মোহাম্মদ জিতু,
জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জাকির হোসেন হাওলাদার,
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক আহ্বায়ক ইমরান আল নাজির,
এবং জাতীয় যুবশক্তির সংগঠক আকরাম হোসেন প্রমুখ।
নেতারা একক কণ্ঠে বলেন —
“শরীয়তপুর ছিল, আছে, থাকবে ঢাকায়।
ফরিদপুর বিভাগের নামে শরীয়তপুরকে টানার চেষ্টা করলে
আমরা পদ্মা সেতু অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেব।”
তাদের ভাষায়, “এটি কেবল একটি প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নয়, এটি শরীয়তপুরবাসীর আত্মমর্যাদা ও অস্তিত্বের লড়াই।”
তারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, এই মাটি কোনো রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে বিক্রি হবে না।
প্রয়োজনে নদী থেকে সড়ক, গ্রাম থেকে শহর—সবখানেই আন্দোলনের আগুন জ্বলে উঠবে।
এক দশকেরও বেশি সময়ের দাবি, আবার জেগে উঠেছে শরীয়তপুরবাসী
‘জাগো শরীয়তপুর’-এর নেতারা জানান, এই আন্দোলন কোনো হঠাৎ আবেগের ফল নয়—
এক দশকেরও বেশি সময় ধরে চলা দাবির ধারাবাহিকতা।
২০১৫ সালে প্রথম যখন ফরিদপুর বিভাগ ঘোষণার উদ্যোগ নেওয়া হয়,
তখন থেকেই শরীয়তপুরবাসী তীব্র আন্দোলনে ফেটে পড়ে।
এরপর ২০২২ সালে ‘পদ্মা বিভাগ’ নামে নতুন প্রস্তাব এলেও
নিকার (NEC) বৈঠকে অনুমোদন না পাওয়ায় তা বাস্তবায়িত হয়নি।
সম্প্রতি গত ৮ সেপ্টেম্বর প্রি-নিকার বৈঠকে ফরিদপুর ও কুমিল্লাকে নতুন বিভাগ করার প্রাথমিক সিদ্ধান্তের পর
শরীয়তপুরে আবারও প্রতিবাদের আগুন ছড়িয়ে পড়ে।
এর ধারাবাহিকতায় ১২ সেপ্টেম্বর বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও ছাত্র সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে
আন্দোলনের কর্মসূচি নির্ধারণ করা হয়।
২৪ সেপ্টেম্বর প্রধান উপদেষ্টা ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়,
আর ২৯ সেপ্টেম্বর শহরের দুবাই প্লাজায় এক সংবাদ সম্মেলনে ‘জাগো শরীয়তপুর’ ঘোষণা দেয় —
“যদি শরীয়তপুরের নাম ফরিদপুর বিভাগে তোলা হয়,
তবে পদ্মা সেতুসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চল অচল করে দেওয়া হবে।”
এরপর থেকেই জেলায় টানা অবরোধ, বিক্ষোভ, গণসমাবেশ ও মানববন্ধন কর্মসূচি চলছে।
নেতাদের কঠোর ঘোষণা
দিনের শেষদিকে নেতৃবৃন্দ ঘোষণা দেন —
“আমরা চাই প্রশাসন লিখিতভাবে জানাক—
শরীয়তপুর ফরিদপুর বিভাগের অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে না।
অন্যথায় এই আন্দোলন আরও ভয়াবহ রূপ নেবে,
আর শরীয়তপুরবাসী রাজপথেই চূড়ান্ত জবাব দেবে।”
বিক্ষোভকারীরা বলেন,
“এটি শুধু একটি জেলার প্রশাসনিক দাবি নয়, এটি আমাদের পরিচয়, ইতিহাস ও গৌরবের প্রশ্ন।”
শরীয়তপুরবাসী এক সুরে বলছে—
“আমাদের মাটি, আমাদের মর্যাদা — কোনোভাবেই ফরিদপুরের সঙ্গে নয়।”
