অ্যাপলের ‘F1’ ছবির বিশাল সাফল্য: হলিউডে কি আরও গভীরভাবে পা ফেলবে প্রযুক্তি জায়ান্ট?

অ্যাপলের 'F1' ছবির বিশাল সাফল্য: হলিউডে কি আরও গভীরভাবে পা ফেলবে প্রযুক্তি জায়ান্ট?
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশঃ জুলাই 1, 2025 1:16 অপরাহ্ন

প্রযুক্তি জগতে দীর্ঘ সময়ের আধিপত্যের পর এবার সিনেমা জগতে জয়গান গাইতে শুরু করেছে অ্যাপল। ব্র্যাড পিট অভিনীত ‘F1’ ছবির বিশাল সাফল্য প্রমাণ করেছে যে অ্যাপল এখন শুধু হার্ডওয়্যার বা সফটওয়্যারেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং বড়পর্দাতেও তৈরি করছে তার নিজস্ব উপস্থিতি।

‘F1’ ছবির মাধ্যমে প্রথমবারের মতো অ্যাপল পেয়েছে এক বিশাল বাণিজ্যিক সাফল্য। ব্র্যাড পিট অভিনীত এই সিনেমাটি যেখানে একটি অবসরপ্রাপ্ত ফর্মুলা ওয়ান চালকের রেসে ফেরা নিয়ে গড়ে উঠেছে, সেখানে দর্শকদের আগ্রহ প্রমাণ করেছে—এই গল্পটা শুধু গতির নয়, আবেগেরও। মুক্তির প্রথম সপ্তাহান্তেই যুক্তরাষ্ট্রে ছবিটি আয় করে ৫৭ মিলিয়ন ডলার এবং বিশ্বব্যাপী আয় দাঁড়ায় ১৪৬.৩ মিলিয়ন ডলার।

🎬 বড় বাজেট, বড় প্রত্যাশা

প্রায় ২৫০ মিলিয়ন ডলার বাজেটের এই সিনেমা আদতে অ্যাপলের জন্য একটি উচ্চ ঝুঁকির বিনিয়োগ ছিল। কিন্তু এই শুভ সূচনার ফলে অ্যাপল এখন তাদের চলচ্চিত্র পরিকল্পনা নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে। দীর্ঘ ছয় বছরের চলচ্চিত্র অভিযাত্রায় ‘Killers of the Flower Moon’, ‘Napoleon’, ‘Fly Me to the Moon’ এবং ‘Argylle’-এর মতো ছবি চরমভাবে প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছিল। এর ফলে প্রতিষ্ঠানটি কয়েকটি আসন্ন প্রজেক্টের থিয়েট্রিক্যাল রিলিজ সীমিত করেছিল, যেমন—২০২৪ সালের ‘Wolfs’।

🍏 ‘F1’ সফল না হলে বন্ধ হয়ে যেত অ্যাপলের সিনেমা অধ্যায়?

অ্যাপলের অভ্যন্তরে একটি প্রবল উদ্বেগ ছিল: যদি ‘F1’-এর মতো একটি সম্ভাবনাময় প্রজেক্ট ব্যর্থ হয়, তাহলে প্রতিষ্ঠানটি সিনেমার বদলে শুধুমাত্র টিভি কনটেন্টেই মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করবে। কারণ অ্যাপল টিভি প্লাসে ‘Ted Lasso’ ও ‘Severance’-এর মতো সিরিজগুলো ইতিমধ্যেই উল্লেখযোগ্য সাফল্য পেয়েছে। তবে ‘F1’-এর দারুণ শুরু আপাতত সেই শঙ্কাকে দূর করেছে।

চলচ্চিত্র বিশ্লেষক ডেভিড এ. গ্রস বলেন, “এটা অ্যাপলের এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় বক্স অফিস হিট। তারা যেই মডেলটি নিয়ে কয়েক বছর ধরে কাজ করে আসছিল, সেটিই এখন বাস্তব রূপ নিচ্ছে।”

🎥 অ্যাপলের সামনে সম্ভাব্য চারটি পথ

‘F1’-এর পর অ্যাপল কী পথে এগোবে? বিশ্লেষকেরা বলছেন, চারটি সম্ভাব্য পথ রয়েছে:


🛣️ পথ ১: পুরোদমে থিয়েটারমুখী হওয়া

অ্যামাজন এমজিএমের মতো, অ্যাপল চাইলে বছরে ১২টিরও বেশি ছবি মুক্তি দেওয়ার পরিকল্পনা নিতে পারে। তবে এর জন্য তাদের আলাদা গ্লোবাল ডিস্ট্রিবিউশন টিম গঠন করতে হবে, যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল ও কাঠামোগতভাবে জটিল।

📌 সুবিধা: অ্যাপল পুরো প্রক্রিয়ার উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারবে, এবং থিয়েটার হিটগুলো অ্যাপল টিভি+ সাবস্ক্রিপশন ও হার্ডওয়্যার বিক্রিতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

⚠️ ঝুঁকি: এত বড় কাঠামো গড়ে তোলার খরচ ও অপারেশনাল চাপ বিশাল, এমনকি অ্যাপলের জন্যও।

🔮 সম্ভাবনা: স্বল্পমেয়াদে এই পথ গ্রহণের সম্ভাবনা কম।


🎯 পথ ২: নির্বাচিত প্যাশন প্রজেক্টে বিনিয়োগ

অ্যাপল হয়তো এক বা দুটি বড় প্রজেক্ট বেছে নিয়ে কাজ করতে পারে, যেখানে বিখ্যাত পরিচালক ও অভিনেতারা থাকবেন এবং প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনকে সামনে আনা হবে।

📌 সুবিধা: ব্যর্থ হলে আর্থিক ক্ষতি কম এবং অ্যাপলের ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ণ থাকে।

⚠️ ঝুঁকি: অ্যাপলকে অন্য স্টুডিওর উপর নির্ভর করতে হয় ডিস্ট্রিবিউশনের জন্য, এবং ব্যর্থ হলে সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

🔮 সম্ভাবনা: খুবই সম্ভাব্য, অন্তত আগামী কয়েক বছরের জন্য।


📺 পথ ৩: স্ট্রিমিং-ফোকাসড মডেল

নেটফ্লিক্সের মতো অ্যাপলও সরাসরি স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মে সিনেমা মুক্তির পথ বেছে নিতে পারে। যেমন ‘CODA’ অ্যাপলকে এনে দিয়েছিল অস্কার—থিয়েটারে নয়, অনলাইনে মুক্তির মাধ্যমেই।

📌 সুবিধা: বক্স অফিসের ব্যর্থতা নিয়ে ভাবতে হয় না। অ্যাপলের অভ্যন্তরীণ পারফরম্যান্স কাউকে জানাতেও হয় না।

⚠️ ঝুঁকি: বড় মাপের পরিচালকরা থিয়েটার রিলিজে আগ্রহী। আর থিয়েটার মালিকরাও অ্যাপলের সিনেমা চালাতে অনাগ্রহী হতে পারেন।

🔮 সম্ভাবনা: অল্প কিছু ক্ষেত্রে, তবে মূল ফোকাস সম্ভবত বড়পর্দাতেই থাকবে।


🏢 পথ ৪: পুরো স্টুডিও কিনে ফেলা

৩০ বিলিয়ন ডলারের ক্যাশ রিজার্ভ নিয়ে অ্যাপল চাইলে যেকোনো বড় হলিউড স্টুডিও কিনে ফেলতে পারে। যেমন লায়ন্সগেট বা ওয়ার্নার ব্রোস।

📌 সুবিধা: প্রচুর IP (মুভি/চরিত্র) অধিগ্রহণ করা যাবে। বড় লাইব্রেরি থেকেও লভ্যাংশ আসবে।

⚠️ ঝুঁকি: প্রতিষ্ঠান কেনার পর প্রশাসনিক ও সাংস্কৃতিক ঝক্কি রয়েছে। আর এমন বড় সিদ্ধান্ত অ্যাপলের স্বাভাবিক নীতির সঙ্গে যায় না বলে জানিয়েছেন টিম কুক।

🔮 সম্ভাবনা: নির্ভর করছে কোন স্টুডিও কতটা ‘অ্যাপলসুলভ’।


🔧 ভবিষ্যৎ কী বলছে?

‘F1’-এর পর অ্যাপলের দিক পরিবর্তন করার যথেষ্ট সুযোগ তৈরি হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটি হয়তো পুরোপুরি থিয়েটারমুখী হবে না, তবে তারা যে বড় বাজেটের সিনেমা নিয়ে আরও সাহসী পদক্ষেপ নিতে পারে, তা স্পষ্ট। ইতোমধ্যে রায়ান রেনল্ডস অভিনীত অ্যাকশন অ্যাডভেঞ্চার ‘Mayday’ এবং UFO-ভিত্তিক ছবি নির্মাণাধীন রয়েছে, যেগুলোও Apple Original Films-এর আগামী পরিকল্পনার অংশ।

শোনা যাচ্ছে, ‘F1’-এর সিক্যুয়েল নিয়েও অভ্যন্তরীণ আলোচনা শুরু হয়েছে।

শেষ কথা:
‘F1’ যেন অ্যাপলের সিনেমা-ভবনের এক নবজাগরণ সূচনা। তবে অ্যাপল কোন পথে এগোবে—সরাসরি বক্স অফিস, নাকি সংযত স্ট্রিমিং—তা এখনো নিশ্চিত নয়। তবে একটি বিষয় স্পষ্ট, অ্যাপল এখন শুধু আইফোন বানানোর কোম্পানি নয়, বরং হলিউডের নতুন পাওয়ার প্লেয়ার।

সম্পর্কিত-
0%
0%
0%
0%