গাজীপুরে মুফতি মুহিব্বুল্লাহর অপহরণের নাটক: নিজেই স্বীকার করলেন খতিব

গাজীপুরের টঙ্গীর টিঅ্যান্ডটি কলোনি জামে মসজিদের খতিব মুফতি মুহিব্বুল্লাহ মিয়াজী (৬০) স্বীকার করেছেন, তিনি নিজেই অপহরণের নাটক সাজিয়েছিলেন। কালের কণ্ঠে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছে, গত রাতে আতাউর রহমান বিক্রমপুরীর ফেসবুক লাইভে তিনি বিষয়টি স্বীকার করেন।
গত রাত ১২টার দিকে লাইভ চলাকালে মুহিব্বুল্লাহর মেয়েকে ফোনে সংযুক্ত করা হয়। সেখানে মেয়েটি জানান, তার বাবা নিজেই স্বীকার করেছেন সব কিছু নিজের ইচ্ছায় করেছেন।
রাত আড়াইটার দিকে বিক্রমপুরী আবার লাইভে আসেন। তখন পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগের পর তাকে জানানো হয়, মসজিদের ভেতরে যেতে চাইলে সর্বোচ্চ একজন মুরিদ সঙ্গে নিতে পারবেন। তবে বিক্রমপুরী ওই শর্তে ভেতরে যেতে রাজি হননি। ঠিক তখনই তার মোবাইলে ফোন আসে মুফতি মুহিব্বুল্লাহর ছোট ছেলের কাছ থেকে। ফোনে মুহিব্বুল্লাহ নিজেই বলেন, “আমি নিজেই সব করেছি। নিজের পরিকল্পনায় পঞ্চগড়ে গিয়েছি, গুম হওয়ার অভিনয় করেছি, ঘটনাটি ভাইরাল করেছি। তাই তোমরা আর এই বিষয় নিয়ে বাড়াবাড়ি করো না।”
মুহিব্বুল্লাহ মিয়াজী সামাজিক মাধ্যমে মাওলানা মুফতি মুহিব্বুল্লাহ মাদানী নামেই বেশি পরিচিত। তিনি এর আগে দাবি করেছিলেন, গত ২২ অক্টোবর সকাল ৭টার দিকে টঙ্গীর শিলমুন এক্সিস লিংক সিএনজি ফিলিং অ্যান্ড কনভার্সন সেন্টারের সামনে থেকে তাকে অপহরণ করা হয় এবং একটি অ্যাম্বুলেন্সে তুলে নেওয়া হয়। পরদিন পঞ্চগড়ে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় উদ্ধারের কথাও নিজেই সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছিলেন।
তিনি আরও দাবি করেছিলেন, অপহরণের আগে টানা কয়েকদিন একের পর এক উড়ো চিঠির মাধ্যমে হুমকি পেয়েছিলেন এবং অপহরণের পর একটি পুরো দিন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
তবে আল জাজিরার অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়েরের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সংশ্লিষ্ট এলাকার সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে মুহিব্বুল্লাহর অপহরণের কোনো প্রমাণ নেই। সকাল ৬টা ৫২ মিনিট ৪০ সেকেন্ডে তিনি বাসা থেকে বের হন। বের হওয়ার সময় তিনি বাম হাতে দরজা খুলে বের হন, পেছনে ফিরে তাকাননি এবং টিনের দরজাটি স্বাভাবিকভাবে বন্ধ হয়ে যায়।
সকাল ৬টা ৫৩ মিনিট ২৫ সেকেন্ডে তিনি মসজিদ ত্যাগ করেন এবং প্রায় ৬টা ৫৪ মিনিটে টঙ্গী-কালীগঞ্জগামী আঞ্চলিক সড়কে কালীগঞ্জের দিকে রওনা হন। ফুটেজ বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সকাল ৭টা ১৮ মিনিটে মুহিব্বুল্লাহ ফিলিং স্টেশনের সামনে দিয়ে একাই দ্রুত হেঁটে যাচ্ছেন। পুলিশের স্থাপন করা সামনের সেতুর ক্যামেরার ফুটেজেও তাকে একা হাঁটতে দেখা গেছে।
ফিলিং স্টেশনের ব্যবস্থাপক মো. সোলেইমান জানিয়েছেন, “তিন দফায় পুলিশের বিভিন্ন শাখা আমাদের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করেছে এবং আমাদের স্টেশনের সামনে থেকে মুহিব্বুল্লাহকে অপহরণ করা হয়নি।”
এই অনুসন্ধান থেকে স্পষ্ট যে মুহিব্বুল্লাহ মিয়াজীর অপহরণের দাবি মূলত তার নিজের পরিকল্পিত অভিনয় ছিল।
তথ্যসূত্র: কালের কণ্ঠ, জুলকারনাইন সায়ের ,মুফতি মুহিব্বুল্লাহ
