ফার্মগেটে মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে শরীয়তপুরের আবুল কালামের মৃত্যু

রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকায় ফার্মগেটের সেই দুপুরটা ছিল একদমই স্বাভাবিক। হঠাৎ এক মুহূর্তে বদলে গেল সবকিছু। মেট্রোরেলের একটি পিলার থেকে খুলে পড়ল ভারী বিয়ারিং প্যাড, আর তার নিচেই হাঁটছিল শরীয়তপুরের নড়িয়ার ঈশ্বরকাঠি গ্রামের সন্তান—আবুল কালাম। কয়েক সেকেন্ডেই থেমে গেল এক তরুণ পিতার জীবন।
আবুল কালাম বয়সে মাত্র পঁয়ত্রিশ। স্ত্রী আর দুই ছোট সন্তান নিয়ে থাকতেন নারায়ণগঞ্জের পাঠানটুলীতে। প্রতিদিনের মতোই সে দিন সকালে অফিসে বের হয়েছিলেন। কেউ ভাবেনি, সেই সকালটা হবে তাঁর জীবনের শেষ সকাল।
ফার্মগেটের পথচারীরা বলেন, বিকট শব্দে কিছু একটা পড়ে যায়। মুহূর্তেই দেখা যায়, রক্তে ভিজে মাটিতে লুটিয়ে পড়েছেন একজন মানুষ। লোকজন ছুটে আসে, হাসপাতালে নেওয়া হয় তাঁকে, কিন্তু আর ফিরিয়ে আনা যায়নি।
পাসপোর্ট অনুযায়ী তাঁর বাড়ি শরীয়তপুরে। খবর পেয়ে সেখানকার গ্রামজুড়ে নেমে আসে শোকের ছায়া। কালামের ” স্ত্রী শুধু বলছেন, “ওর দুই বাচ্চার দিকে এখন আমি তাকাই কীভাবে?”
দুর্ঘটনার পর মেট্রোরেলের কার্যক্রম কিছু সময়ের জন্য বন্ধ রাখা হয়। পুলিশ ও প্রশাসন আসে, তদন্ত শুরু হয়। কর্তৃপক্ষ জানায়, নিহতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে, পরিবারের কারও চাকরির ব্যবস্থাও করা হবে। কিন্তু অর্থ দিয়ে কি একজন বাবার অভাব পূরণ হয়?
যে মানুষটা প্রতিদিন পরিবারকে হাসিখুশি রাখতেন, আজ সে নিথর দেহে শুয়ে আছে মর্গে। যেই সন্তানরা বাবার হাত ধরে স্কুলে যাওয়ার স্বপ্ন দেখত, তারা আজ বাবাহীন হয়ে গেছে।
মানুষ এখন প্রশ্ন করছে—এমন দুর্ঘটনা কেন ঘটবে? এত গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার অংশ কীভাবে খুলে পড়ে যায়? এই একটি ভুল, একটি অবহেলা, একটি জীবনের সমাপ্তি টেনে নিলো।
শরীয়তপুরের গ্রামের বাতাস এখন ভারী হয়ে আছে কান্নায়। প্রতিবেশীরা বলছেন, “কালাম ছিল পরিশ্রমী, হাসিখুশি ছেলে। নিজের ঘাম ঝরিয়ে পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছিল। কিন্তু সেই হাসি আজ চিরতরে নিভে গেল।”
ঢাকার আলো-আঁধারিতে হারিয়ে গেল শরীয়তপুরের এক স্বপ্নবাজ তরুণের জীবন। বাকি রইল শুধু আহাজারি, স্ত্রীর নিরব কান্না আর দুই শিশুর অনন্ত প্রতীক্ষা — “বাবা, তুমি কবে ফিরবে?”
