শরীয়তপুরে ইউএনওর বিরুদ্ধে ঘুষের অভিযোগ, অভিযোগ অস্বীকার করলেন কর্মকর্তা

শরীয়তপুরে ইউএনওর বিরুদ্ধে ঘুষের পাল্টা অভিযোগ: চাল বিতরণে অনিয়ম ধামাচাপার অভিযোগও উঠল

শরীয়তপুরে ইউএনওর বিরুদ্ধে ঘুষের অভিযোগ, অভিযোগ অস্বীকার করলেন কর্মকর্তা
নিজস্ব প্রতিবেদক নড়িয়া
সংশোধনঃ অক্টোবর 8, 2025 6:44 অপরাহ্ন

শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ঘড়িষার ইউনিয়নের নোয়াদ্দ বাংলাবাজারে সরকারি খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল বিতরণে অনিয়মের তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়াকে কেন্দ্র করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আব্দুল কাইয়ুম খান এবং স্থানীয় বিএনপি নেতা ও ডিলার মতিউর রহমান সাগরের মধ্যে পাল্টাপাল্টি অভিযোগের ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে এলাকায় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে, আর প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মধ্যে বিরাজ করছে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা।

বিজ্ঞাপন

চাল বিতরণে অনিয়ম ও অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ

উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নোয়াদ্দ বাংলাবাজার এলাকায় সাগর ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নামের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলারের বিরুদ্ধে চাল বিতরণে অনিয়ম ও অতিরিক্ত অর্থ নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি কার্ডধারীকে মাসে ৩০ কেজি চাল দেওয়ার কথা থাকলেও সেখানে মাত্র ২৬–২৭ কেজি করে চাল দেওয়া হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পাশাপাশি কার্ডধারীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ৩০০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছিল বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।

২০ আগস্ট বিভিন্ন অনলাইন ও প্রিন্ট পত্রিকায় এই বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলে বিষয়টি ইউএনও আব্দুল কাইয়ুম খানের নজরে আসে। তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে অনিয়মের প্রমাণ পান। পরদিন ২১ আগস্ট তিনি ডিলার মতিউর রহমান সাগরকে লিখিতভাবে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন এবং চার দিনের মধ্যে ব্যাখ্যা দিতে বলেন।

পরবর্তীতে ২৭ আগস্ট ইউএনও স্থানীয় সুবিধাভোগীদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় পাঁচজন কার্ডধারী লিখিতভাবে জানান, তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হয়েছে। ২৮ আগস্ট ইউএনও সাগর ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের বিক্রয়কেন্দ্রে গিয়ে মজুদ যাচাই করে ৩৫৫ কেজি চাল কম পান। এরপর তিনি উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তাকে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বলেন এবং ডিলারশিপ বাতিলের সুপারিশসহ বিস্তারিত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।

বিজ্ঞাপন

ওয়াস ব্লক নির্মাণে কাজ না করে বিল তোলার অভিযোগ

উপজেলা প্রশাসনের আরেকটি সূত্র জানায়, এর আগে বিএনপি নেতা মতিউর রহমান সাগর ঘড়িষার ইউনিয়নের নোয়াদ্দ বাংলাবাজার এলাকায় একটি ওয়াস ব্লক নির্মাণের ঠিকাদারি কাজ পান। কিন্তু কাজ সম্পূর্ণ না করেই বিল তুলতে ইউএনওর ওপর চাপ প্রয়োগ করেন তিনি। ইউএনও প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন কাজ অসম্পূর্ণ। পরে ইউএনও স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন, কাজ শেষ না হলে বিল পরিশোধ করা হবে না। এতে ক্ষুব্ধ হন মতিউর রহমান সাগর এবং পরবর্তীতে ইউএনওর বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন মন্তব্য করতে থাকেন।

ঘুষের পাল্টা অভিযোগ

এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মতিউর রহমান সাগর অভিযোগ করেন যে, ইউএনও আব্দুল কাইয়ুম খান তার কাছ থেকে ঘুষ নিয়েছেন। তিনি সোমবার ৬ অক্টোবর ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন এবং সেই চিঠির কপি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন।

অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, ২৮ আগস্ট সন্ধ্যা ৭টার দিকে ইউএনওর সঙ্গে দেখা করে উপজেলা পুকুরঘাটের সামনে খামে ভরে ২ লাখ টাকা দেন এবং বাকি ৩ লাখ টাকা পরে দেবেন বলে জানান। পরবর্তীতে ইউএনও বাকি টাকা না পেয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেন, ৩৫৫ কেজি চাল কম পাওয়ার অজুহাতে ৪১ হাজার ৪০৬ টাকা জরিমানা করেন এবং তার ডিলার লাইসেন্স স্থগিত করেন।

তবে উপজেলা প্রশাসনের সূত্র বলছে, ২৮ আগস্ট বিকেল ৪টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ইউএনও কার্যালয়ের পুকুরপাড় এলাকার সিসিটিভি ফুটেজে মতিউর রহমান সাগরের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি।

স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া

বাংলাবাজারের স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. জামাল হোসেন বলেন,
“সরকারের দেওয়া চাল অসহায় মানুষের জন্য। সেখানে অনিয়ম হলে ইউএনও ব্যবস্থা নিয়েছেন, এতে দোষের কিছু নেই। বরং তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন।”

আরেক স্থানীয় দোকান মালিক আবদুল কুদ্দুস বলেন,
“এই এলাকায় চাল বিতরণে আগে থেকেই অনিয়ম চলছিল। ইউএনও বিষয়টা ধরেছেন বলেই এখন অনেকে ভয় পেয়েছে। কিন্তু এখন উল্টো তাকেই হুমকি দেওয়া হচ্ছে, এটা লজ্জার।”

বিএনপি নেতার বক্তব্য

বিএনপি নেতা ও খাদ্যবান্ধব ডিলার মতিউর রহমান সাগর বলেন,
“নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমার কাছ থেকে ঘুষ নিয়েছেন, তাই আমি বিভাগীয় কমিশনার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। তিনি আমার ডিলার বাতিল করে রাজনৈতিকভাবে আমাকে ছোট করেছেন। ইউএনও আমাকে জরিমানা না করলে আমি অভিযোগই দিতাম না।”

ইউএনওর বক্তব্য

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল কাইয়ুম খান বলেন,

“আমি রাষ্ট্রের দায়িত্ব পালন করেছি। তদন্তে যা পেয়েছি সেটাই প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছি। এজন্য কেউ ক্ষুব্ধ হলে সেটা তার বিষয়। প্রশাসনিক কাজে কোনো রাজনৈতিক প্রভাব বা ভয়ভীতি আমি মেনে নেব না। আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে, তা এখনো অফিসিয়ালি পাইনি।”

জেলা প্রশাসকের বক্তব্য

শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক তাহসিনা বেগম বলেন,
“আমি এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।”

তথ্যসূত্র: যুগান্তর, বার্তা বাজার

33.3%
33.3%
0%
33.3%