বৃদ্ধা মাকে কাঠফাটা রোদে ফেলে রাখলেন তিন সন্তান, স্থানীয়দের চাপেই মিলল সাময়িক আশ্রয়

বৃদ্ধা মাকে কাঠফাটা রোদে ফেলে রাখলেন তিন সন্তান, স্থানীয়দের চাপেই মিলল সাময়িক আশ্রয়
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশঃ জুন 18, 2025 9:44 পূর্বাহ্ন

বগুড়া জেলার বড় কুমিরা এলাকায় ঘটে যাওয়া এক হৃদয়বিদারক ঘটনা সামাজিক ও মানবিক অনুভূতিকে নাড়া দিয়েছে। বিমলা রাণী নামের এক বৃদ্ধা মাকে কাঠফাটা রোদের মধ্যে বাড়ি থেকে দূরে ফেলে রেখে আসার অভিযোগ উঠেছে তার তিন ছেলের বিরুদ্ধে। দীর্ঘসময় অনাহারে, পানিবিহীন অবস্থায় দিন কাটে ওই অসহায় মায়ের। বিষয়টি জানাজানি হলে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান স্থানীয়রা এবং পরে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় সেনাবাহিনীর একটি দল।

তিন বছর আগে স্বামী হরিপদ সরকার মারা যাওয়ার পর থেকে অসুস্থ ও বার্ধক্যজনিত দুর্বলতায় ভোগা বিমলা রাণীর দেখভালের দায়িত্ব পড়ে তার তিন ছেলের—অষ্ট সরকার, লব সরকার ও শিপন সরকারের ওপর। কিন্তু সন্তানেরা দায়িত্ব পালনের পরিবর্তে মাকে যেন বোঝা মনে করে তাকে উপেক্ষা ও অবহেলা করতে শুরু করে।

প্রতিদিন সকালে ছেলেরা তাকে বাড়ি থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে এনে ফেলে রেখে যেতেন। অনেক সময় সন্ধ্যা পার হলেও ফিরিয়ে নেয়া হতো না, এমনকি জুটতো না একবেলা খাবারও। সোমবার রাতে মেজো ছেলে লব সরকার বৃদ্ধা মাকে বাড়ি থেকে বের করে দেন। স্থানীয়দের চাপে সেদিন রাতেই ফিরিয়ে নিলেও পরদিন সকালে আবারও ফেলে আসেন।

স্থানীয়রা বলেন, এক বৃদ্ধা নারী যেখানে নিজের পায়ে চলতেও কষ্ট পান, সেখানে তাকে ঘুড়ির মতো ছুড়ে ফেলা হয় রোদে-ধুলায়। মঙ্গলবার দুপুর গড়িয়ে বিকাল হলেও বিমলা রাণীর মুখে একফোঁটা পানি পর্যন্ত ওঠেনি। অতি কষ্টে জীবন রক্ষা করেন তিনি।

স্থানীয়রা বিষয়টি সেনাবাহিনীর নজরে আনলে, একটি টহলদল ঘটনাস্থলে যায় এবং বৃদ্ধাকে খাবার কিনে দেয়। এরপর এক সেনা কর্মকর্তা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন এবং এমন অমানবিক ব্যবহারের কারণ জানতে চান। সন্তানরা প্রথমে নানা অজুহাত দিলেও পরে ভুল স্বীকার করে মাকে ঘরে ফেরান।

সেনা কর্মকর্তা পরিবারকে বলেন, “আপনাদের উঠানে পর্যাপ্ত জায়গা আছে। যদি ভিতরে রাখতে কোনো অসুবিধা হয়, তাহলে অন্তত উঠানে ছায়ার জায়গায় রাখুন যেন প্রয়োজন হলে আপনারা সহজেই তাকে সহযোগিতা করতে পারেন। যদি একার পক্ষে না হয়, আমাদের জানাতে পারেন।”

জানা গেছে, বিমলার তিন ছেলের মধ্যে দুজন কাঠমিস্ত্রী এবং একজন দর্জির কাজ করেন। অথচ সেই পরিশ্রমী সন্তানরাই মায়ের পরিশ্রম ও ত্যাগকে ভুলে গিয়ে এমন অমানবিক আচরণে লিপ্ত হন।

স্থানীয়রা আশা করছেন, সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপের পর বিষয়টি স্থায়ীভাবে সমাধান হবে এবং মাকে অবহেলার চেয়ে যত্ন ও ভালোবাসার সঙ্গে দেখা হবে—যেমনটা প্রতিটি সন্তানের কর্তব্য।

তথ্যসূত্র: সময় টিভি

সম্পর্কিত-
100%
0%
0%
0%