শহীদ জসিমউদ্দিনের মেয়ে লামিয়ার আত্মহত্যা: বিচার না পাওয়ার হতাশা ও সামাজিক যন্ত্রণা ঘিরে শোকের ছায়া

পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার পাঙ্গাসিয়া ইউনিয়নে জুলাই আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত শহীদ জসিমউদ্দিনের মেয়ে লামিয়া ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর অবশেষে আত্মহত্যা করেছেন। শনিবার রাতে এই মর্মান্তিক ঘটনায় ভেঙে পড়েছে লামিয়ার পরিবার ও স্বজনরা।
গত ১৮ই মার্চ বাবার কবর জিয়ারত শেষে নানাবাড়ি যাওয়ার পথে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন লামিয়া। সাহসিকতার সঙ্গে থানায় গিয়ে তিনি ধর্ষকদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিলেন। কিন্তু এরপর থেকেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন তিনি। সামাজিক লজ্জা, চাপ এবং অভিযুক্ত ধর্ষকদের জামিন পাওয়া ও বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতার আশঙ্কা তাকে চরম হতাশায় নিমজ্জিত করে।
পরিবারের সদস্যরা জানান, সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতি ঘৃণা এবং বিচার না পাওয়ার ধিক্কার জানিয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন লামিয়া। তাঁর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে রাতেই শহীদ সফরাদি হাসপাতালে ছুটে যান বিএনপি, এনসিপি ও জুলাই ফাউন্ডেশনের নেতাকর্মী ও কর্মকর্তারা। সবাই দ্রুত সময়ের মধ্যে অভিযুক্তদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানান।
এ প্রসঙ্গে এক নেতা বলেন, “নিজের লজ্জা ঢাকার জন্য একজন মেয়েকে নিজের জীবন দিতে হয় — এটা কোনো সভ্য রাষ্ট্রে কল্পনাও করা যায় না। এই ঘটনায় প্রমাণিত হলো, রাষ্ট্র তার নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে।”
নেতারা আরও বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারসহ আগামীতে যারা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেবেন, তাদের প্রধান দায়িত্ব হবে ধর্ষকদের প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ডের ব্যবস্থা করা।
পুলিশ জানিয়েছে, ইতোমধ্যে লামিয়ার সুরতহাল সম্পন্ন হয়েছে। ডাক্তারদের পরামর্শ অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। লাশের পোস্টমর্টেম (PM) করা হবে এবং রাতেই সম্ভব হলে তা সম্পন্ন করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
এদিকে লামিয়ার স্বজনরা অভিযোগ করেছেন, অভিযুক্ত ধর্ষকদের পরিবার থেকে তারা এখনও হুমকি-ধমকির মুখে রয়েছেন, ফলে তাঁরা চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।
লামিয়ার মৃত্যু শুধু একটি পরিবারের নয়, পুরো জাতির জন্য এক গভীর ক্ষত ও দুঃখের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ মৃত্যু রাষ্ট্রের বিচারহীনতার বাস্তব চিত্র সামনে এনে দিয়েছে।