নিরাপদ আশ্রয়ের ঘরে হঠাৎ নিস্তব্ধতা: ফটিকছড়িতে মা-মেয়ের লাশ উদ্ধার

নিজস্ব প্রতিবেদক ফটিকছড়ি
প্রকাশঃ 30 অক্টোবর 2025, 02:54 অপরাহ্ন
নিরাপদ আশ্রয়ের ঘরে হঠাৎ নিস্তব্ধতা: ফটিকছড়িতে মা-মেয়ের লাশ উদ্ধার

রাতটা ছিল একদম সাধারণ—যেমন প্রতিদিনের মতোই। রাতের খাবার খেয়ে দেড় বছরের কন্যা আকিয়া আয়েশাকে বুকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন আফরোজা আক্তার অ্যানি। মায়ের বুকের ওপর মাথা রেখে নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছিল ছোট্ট মেয়ে। কিন্তু সেই ঘুম আর কোনোদিন ভাঙেনি—না মায়ের, না মেয়ের।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (২৯ অক্টোবর) দুপুরে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলা সদরের বিবিরহাট বাজারের কামাল ভবনের নিচতলার ঘর থেকে উদ্ধার হয় মা ও মেয়ের নিথর দেহ।
নিহতরা হলেন—আফরোজা আক্তার অ্যানি (২৫) এবং তাঁর একমাত্র সন্তান আকিয়া আয়েশা (১৫ মাস)। অ্যানির স্বামী আনোয়ার হোসেন বিপুল কর্মসূত্রে বাঁশখালীতে থাকতেন। অ্যানি শ্বশুর কামাল উদ্দিনের সঙ্গে ফটিকছড়ির ওই বাসায় থাকতেন।

পরিবারের সদস্যরা জানান, সকালে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ঘুম থেকে না ওঠায় শ্বশুর কামাল উদ্দিন ডাকাডাকি করেন। কোনো সাড়া না পেয়ে জানালা দিয়ে উঁকি দিলে দেখেন, সিলিং ফ্যানে ওড়না পেঁচিয়ে ঝুলছেন অ্যানি। পরে প্রতিবেশীদের সহায়তায় দরজা ভেঙে ঘরে প্রবেশ করলে বিছানায় নিথর অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায় ছোট্ট আকিয়াকে।

ফটিকছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নুর আহমদ বলেন, “দরজা ভেতর থেকে বন্ধ ছিল। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, অ্যানি মেয়েকে বালিশচাপা দিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে নিজে আত্মহত্যা করেছেন। অ্যানির লাশ সিলিং ফ্যানে ঝুলন্ত অবস্থায় এবং শিশুটির লাশ বিছানায় পাওয়া গেছে।”

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও জানান, অ্যানির মানসিক সমস্যার বিষয়টি পরিবারের পক্ষ থেকে জানা গেছে। তবে ঘটনাটির পেছনে অন্য কোনো কারণ রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মা ও মেয়ের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

এ বিষয়ে ফটিকছড়ি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রফিকুল ইসলাম বলেন, “আমাদের ধারণা, আত্মহত্যার আগে গৃহবধূ অ্যানি শিশুটিকে বালিশচাপা দিয়ে হত্যা করেছেন। সব দিক যাচাই করে তদন্ত চলছে।”

এই মর্মান্তিক ঘটনার পর বিবিরহাট বাজারে নেমে এসেছে গভীর শোকের ছায়া। প্রতিবেশীরা বলছেন, অ্যানি ছিলেন শান্ত, হাসিখুশি ও বিনয়ী স্বভাবের মানুষ। কেউ ভাবতেও পারেননি—যে নারী প্রতিদিন শিশুকে কোলে নিয়ে হাসতেন, সেই মা একদিন এমনভাবে নিঃশব্দে চলে যাবেন, রেখে যাবেন অবিরাম কান্না আর শূন্যতা।

সম্পর্কিত- উদ্ধার মৃত্যু
0%
0%
0%
0%