বাবাকে ঘরেই কুপিয়ে হত্যা করেছে বড় ছেলে: ভোলায় চাঞ্চল্যকর ঘটনা

ভোলায় শণি বার ১৩ সেপ্টেম্বর এক ধর্মপ্রাণ শিক্ষকে ঘরে ঢুকে কুপিয়ে হত্যা করার অভিযোগে অভিযুক্ত তার বড় ছেলে রেদোয়ান হককে পুলিশ গ্রেপ্তার করে এবং জিজ্ঞাসাবাদে ওই হত্যার বিষয়টি স্বীকার করেছে। পরিবার, এলাকায় উত্তেজনা ও শোক নেমে এসেছে।
মৃতকের পরিচয় মাওলানা আমিনুল ইসলাম (নোমানী হুজুর) — তিনি স্থানীয় মসজিদের খতিব ও মাদ্রাসার শিক্ষক ছিলেন। পরিবার ও কয়েকজন সাক্ষীর বর্ণনায় তিনি বিধিবদ্ধ ও কঠোর শাসক ছিলেন। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শনিবার রাতে দুর্বৃত্তরা ভেসে এসে নোমানী হুজুরকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করেছে—পরবর্তীতে ঘটনার তদন্তে জানা যায় হত্যাকারী তারই বড় ছেলে রেদোয়ান হক।
পুলিশ বলছে, ৯ সেপ্টেম্বর জিজ্ঞাসাবাদে রেদোয়ান হত্যাকাণ্ড স্বীকার করে। পরে ১৩ সেপ্টেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ এই চাঞ্চলকর তথ্য প্রকাশ করে। পুলিশি বর্ণনায় ঘটনার পেছনে অনলাইন গেম আসক্তি, উশৃঙ্খল জীবনাচরণ ও বাবার কঠোর শাসনের কারণে রেদোয়ানের মনে জন্ম নেওয়া ক্ষোভ প্রধান কারণ হিসেবে ধরা পড়েছে।
জানা যায়, রেদোয়ানকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাবা নোমানী কঠোর ছিলেন; এর ফলে ১৭ বছর বয়সী কিশোর রেদোয়ানের মধ্যে বিরূপ মনোবৃত্তি তৈরি হয়—নিজেকে পরাধীন মনে করে সে আত্মহত্যা বা বাবাকে হত্যা করার পরিকল্পনা করতে শুরু করে। পুলিশি তথ্য অনুযায়ী সে সিনেমা দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে ধীরে ধীরে হত্যার কৌশল রপ্ত করেছিল এবং ২ সেপ্টেম্বর অনলাইনে একটি ধারালো ছুরি অর্ডার করেছিল।
পুলিশের বিবরণ অনুযায়ী ঘটনা এভাবে ঘটেছে: ৬ সেপ্টেম্বর রাতের এশার নামাজের পর মাওলানা নোমানী বাসায় ফেরেন। রেদোয়ানের মা তখন নানা বাড়িতে গিয়েছিলেন; সুযোগ বুঝে রেদোয়ান বাবার কক্ষে নক করে—দরজা খুলেই ছুরি দিয়ে নোমানীর বুকে আঘাত করে। আহত অবস্থায় নোমানী ছুরিটি ধরার চেষ্টা করেন এবং সন্তানের কাছে প্রাণভিক্ষা চান; তবুও রেদোয়ান আরও চারবার ছুরিকাঘাত করে তাকে হত্যা নিশ্চিত করে। পাশের বাড়ির লোকজন চিৎকার শুনে এগিয়ে এলে রেদোয়ান দ্রুত ঘর থেকে বের হয়ে অটোরিকশায় করে নানা বাড়িতে চলে যান।
ঘটনার পর পুরো ভোলা জেলায় শোক ও বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এলাকার আলেম-ওলামারা দ্রুত খুনিকে গ্রেপ্তার না করলে জেলা অচল করে দেওয়ার হুশিয়ারিও দেন। পুলিশ কার্যক্রমে মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে ঘটনাটির ক্লু ধরে খুনিকে গ্রেফতার করে এবং জিজ্ঞাসাবাদে তাকে হত্যার অপরাধে স্বীকার করিয়েছে—এই তথ্য ১৩ সেপ্টেম্বর পুলিশের সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরা হয়।
এই মর্মান্তিক ঘটনার ফলে ভোলা জেলার মানুষ গভীরভাবে স্তব্ধ ও হতবাক। একজন আদর্শ চরিত্রের আলেম যখনই নিজের সন্তানের হাতেই প্রাণ হারান, তখন সমাজে যে ধাক্কা লাগে তা ওতপ্রোতভাবে প্রকাশ পেয়েছে—এমন মর্মান্তিকতায় অনেকেই দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়া আর আশার উপায় দেখছেন না।
তথ্যসূত্র: ATM Bangla