শরীয়তপুরে পেপে ছিঁড়ে ফেলার জেরে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে নিহত ১, গুরুতর আহত ২

নিহত মোহাম্মদ ঈমান হোসেন সরদার
শরীয়তপুরের গোসারহাট উপজেলার কোদালপুর ইউনিয়নের সরকারপাড়া গ্রামে পেপে ছিঁড়ে ফেলার মতো তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঘটে গেছে এক মর্মান্তিক ও হৃদয়বিদারক ঘটনা। এতে ছুরিকাঘাতে নিহত হয়েছেন মোহাম্মদ ঈমান হোসেন সরদার । আহত হয়েছেন তার ছেলে আলামিন, পুত্রবধূ এবং আরও অন্তত চার থেকে পাঁচ জন।
ঘটনাটি ঘটে গত ৫ জুলাই। আলামিনের পরিবারের এক শিশু রাজিবদের বাড়ির পেপে গাছ থেকে একটি ছোট পেপে ছিঁড়ে ফেলে। এ নিয়ে রাজিবদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা-কাটাকাটি হয়। পরিবার সূত্রে জানা যায়, প্রথমে বিষয়টি নিয়ে সামান্য উত্তেজনা থাকলেও বিকেলে তা ভয়াবহ সংঘর্ষে রূপ নেয়।
অভিযোগ অনুযায়ী, বিকেলে রাজিব ও তার সহযোগী সুমন ধারালো অস্ত্র নিয়ে আলামিনদের বাড়িতে হামলা চালায়। তারা আলামিন, তার স্ত্রী এবং বাবা ঈমান হোসেন সরদারকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে। এই হামলায় গুরুতর আহত হন ঈমান হোসেন, আলামিন এবং তার স্ত্রী। আহতদের প্রথমে গোসারহাট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়, পরে শরীয়তপুর সদর হাসপাতাল এবং সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় মোহাম্মদ ঈমান হোসেন সরদারের।
নিহত মোহাম্মদ ঈমান হোসেন সরদারের স্ত্রীর বর্ণনা অনুযায়ী, রাজিব ঘরে ঢুকে শিশুটাকে গলা চেপে ধরে উঠানে ফেলে দেয় এবং তাকে মারধর করে। বাধা দিতে গেলে তাকেও চড়-থাপ্পড় মারে। এরপর সুমন ও রাজিব দুজনেই ছুরি নিয়ে এসে আলামিন এবং তার বাবার ওপর হামলা চালায়। তারা আলামিনকে ঘিরে ধরে পেটে ছুরিকাঘাত করে এবং ঈমান হোসেনকে ও ছুরিকাঘাত করে । পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ হয়ে পড়ে যে আশপাশের মানুষজনও ভয়ে এগিয়ে আসতে পারেনি।
নিহত ঈমান হোসেনের মেয়ে জানান, প্রথমে শিশুদের মধ্যে পেপে ছিঁড়ে ফেলার ঘটনা নিয়ে সামান্য বাকবিতণ্ডা হয়। এরপর বিকেলে রাজিব তার ছেলে রোবেলকে মারধরের অভিযোগ তুলে এসে তাদের ওপর হামলা চালায়। তার বর্ণনায় উঠে আসে কীভাবে রাজিব ঘরে ঢুকে শিশুকে গলা চেপে ধরেছে এবং পরে ঈমান হোসেন ও পরিবারের অন্য সদস্যদের ওপর দফায় দফায় হামলা চালানো হয়েছে।
ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত রাজিব ও সুমন পলাতক রয়েছেন। নিহতের পরিবার গোসারহাট থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
নিহতের ভাতিজা সাংবাদিকদের জানান, “একটা পেপে ছিঁড়ে ফেলার মতো ছোট একটা বিষয়কে কেন্দ্র করে যারা এভাবে একজন মানুষকে হত্যা করলো, একটি পরিবারকে ধ্বংস করে দিলো, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। আমরা প্রশাসনের কাছে আবেদন করছি – এই হত্যাকাণ্ডের সঠিক বিচার এবং দ্রুত আসামিদের গ্রেপ্তার নিশ্চিত করা হোক। আমরা চূড়ান্ত শাস্তি, ফাঁসি চাই।”
তিনি আরও বলেন, “আজকের এই প্রযুক্তির যুগেও তিনদিন পেরিয়ে গেলেও পুলিশ একজন আসামিকেও গ্রেপ্তার করতে পারেনি। এটা প্রশাসনিক ব্যর্থতা। আমরা চাই আইন সবার জন্য সমান হোক, যেন কোনো পক্ষপাতিত্ব না হয়।”
এই নির্মম ঘটনার পর গোটা সরকারপাড়া গ্রামে শোক ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকেই এখনো মুখ খুলতে ভয় পাচ্ছেন, অভিযুক্তদের দাপট ও হুমকির ভয়ে। এলাকাবাসী ও নিহতের স্বজনরা দ্রুত ন্যায়বিচার দাবি করেছেন।