রাজধানীতে প্রকাশ্য দিবালোকে ব্যবসায়ী সোহাগকে পিটিয়ে হত্যা

রাজধানীতে প্রকাশ্য দিবালোকে ব্যবসায়ী সোহাগকে পিটিয়ে হত্যা
নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকা
সংশোধনঃ জুলাই 13, 2025 5:16 অপরাহ্ন

রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিডফোর্ড হাসপাতালের কাছে ৯ জুলাই দুপুরে ঘটে গেল এক হৃদয়বিদারক হত্যার ঘটনা। ভাঙারি পণ্যের ব্যবসায়ী চান্দমিয়া ওরফে লাল চাঁদ সোহাগকে টেনে হিচড়ে তার দোকান থেকে বের করে এনে রাস্তায় নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। আশপাশের সাধারণ মানুষ আতঙ্কে দূর থেকে দাঁড়িয়ে থেকে সেই মর্মান্তিক দৃশ্য দেখতে বাধ্য হন।

প্রাণভিক্ষা চেয়ে হত্যাকারীদের পায়ে লুটিয়ে পড়েছিলেন নিহত সোহাগের কর্মচারী মোহাম্মদ ইসমাইল ও মোহাম্মদ বাবুল। বারবার কাকুতি-মিনতি করেও থামানো যায়নি খুনিদের। প্রকাশ্যে, দিনে-দুপুরে, শত লোকের সামনে সোহাগকে পিটিয়ে, কুপিয়ে এবং মাথা থেতলে নিশ্চিত মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়।

ঘটনার পরদিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয় একটি সিসিটিভি ভিডিও, যা মুহূর্তেই সারা দেশে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দ্রুত অভিযানে নামে। এ ঘটনায় মূল হোতা হিসেবে পরিচিত মাহমুদুল হাসান ওরফে মহিন এবং চকবাজার থানা যুবদলের তৃতীয় নম্বর ওয়ার্ডের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক তারেক রহমান ওরফে রবিনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। অপরদিকে র‍্যাব আরও দুইজনকে গ্রেফতার করে। এ নিয়ে মোট চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যাদের মধ্যে দুজনকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।

তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, হত্যাকাণ্ডে সরাসরি নেতৃত্ব দিয়েছে চকবাজার থানার যুবদল নেতা পদপ্রার্থী মহিন এবং ছাত্রদলের সদস্য সচিব পদপ্রার্থী অপু দাস। স্থানীয় একাধিক ব্যবসায়ীর দাবি, ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর থেকেই মহিন-অপু দাস মিলে চকবাজার এলাকায় একটি চাঁদাবাজি সিন্ডিকেট গড়ে তোলে। ওই চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসায়ীদের জিম্মি করে রেখেছিল। কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে হুমকি, হামলা এবং অস্ত্র উঁচিয়ে ভয় দেখানো হতো।

এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের বোন মঞ্জুয়ারা বেগম বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় মাহমুদুল হাসান মহিন, অপু দাসসহ অজ্ঞাতনামা আরও ১৫ থেকে ২০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

এদিকে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে জাতীয়তাবাদী যুবদল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক জলবায়ু বিষয়ক সহসম্পাদক রজ্জুব আলী ওরফে পিন্টু এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সাবা করিম ওরফে লাকি। সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয়, এই দুজনের বিরুদ্ধে দলীয়ভাবে কোনো ধরনের সহানুভূতি দেখানো হবে না এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিও জানানো হয়েছে।

ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল থেকেও বহিষ্কার করা হয়েছে হত্যাকাণ্ডে জড়িত চকবাজার থানা ছাত্রদলের সদস্য সচিব অপু দাস এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের কালু ওরফে স্বেচ্ছাসেবক কালুকে।

ঘটনার পর দেশজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে গভীর ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, সিপিবি, গণসংহতি আন্দোলন, এবি পার্টি, গণঅধিকার পরিষদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন। অনেকে এটিকে “ফ্যাসিবাদের পদধ্বনি” হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের প্রকাশ্য নির্মম হত্যাকাণ্ড কেবল ব্যক্তি নয়, সমাজ ও রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, অপরাধীদের কেউই রেহাই পাবে না। তদন্ত দ্রুতগতিতে চলছে, এবং অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

সম্পর্কিত-
0%
0%
0%
0%