ইরান-যুক্তরাষ্ট্র পারমাণবিক আলোচনা: খামেনির প্রত্যাখ্যান

ইরান-যুক্তরাষ্ট্র পারমাণবিক আলোচনা: খামেনির প্রত্যাখ্যান
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশঃ জুন 5, 2025 8:04 পূর্বাহ্ন

মধ্যপ্রাচ্য থেকে পাওয়া অন্যতম বড় খবর হচ্ছে, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি আবারও যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে একটি অন্তর্বর্তী প্রস্তাব পাঠানো হয়, যাতে ইরানকে সীমিত মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ (enrichment) করার অনুমতি দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। তবে খামেনি স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, কোনো অবস্থাতেই ইরান তার শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কার্যক্রমের অধিকার থেকে বিচ্যুত হবে না। তিনি বলেন, যদি যুক্তরাষ্ট্র চায় ইরান পারমাণবিক অস্ত্র না রাখুক, তাহলেই আমরা একটি সমঝোতায় পৌঁছতে পারি। কিন্তু যদি তারা আমাদের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কার্যক্রমের অধিকার কেড়ে নিতে চায়, তাহলে কোনো ধরনের আলোচনার সুযোগ নেই।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার প্রশাসন ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ পুরোপুরি বন্ধ করতে বারবার জোর দিয়েছে। যদিও আলোচনাগুলো সাধারণত গোপন বৈঠকে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, তাই ঠিক কী পরিমাণ প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে তা এখনও নিশ্চিত নয়। তবে সংযুক্ত তথ্য থেকে জানা যায়, প্রথম পর্যায়েও ইরানকে কেবলমাত্র অতীব স্বল্পমাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার সুযোগ দিতে চেয়েছিল ওয়াশিংটন। মার্কিন মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ প্রথম প্রস্তাব প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।

ইরানের বিদেশ মন্ত্রী (Foreign Minister) জওয়াদ জারিফ জানান, শিগগিরই ইরান মার্কিন প্রস্তাবের ওপর আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিক্রিয়া দেবে। তিনি উল্লেখ করেন, “যদি আমাদের শতটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রই থাকুক, তবে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ না থাকলে সেগুলো আমাদের জন্য কাজে লাগবে না। যদি আমাদের এই অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়, তাহলে আমরা বিন্দুমাত্র সমঝোতায় যেতে চাইব না।” বর্তমানে ইরান ৬০% পর্যন্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে, যা কারিগরি দিক থেকে অস্ত্রগুণসম্পন্ন ইউরেনিয়ামের খুব কাছাকাছি (weapons-grade)।

খামেনি যদিও ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার দরজা সম্পূর্ণ বন্ধ করেননি, তবে তিনি পুনর্বার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধ করা হবে না। এর ফলে মার্কিন প্রশাসনকেও আনুভূমিকভাবে কিছুটা নমনীয় হতে হয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। তারা বলছেন, “মুখে যতই কড়া হুমকি দিলেও, বাস্তবতা ও ইরানের অনড় অবস্থার কারণে ট্রাম্প প্রশাসনকে এই সীমাবদ্ধ প্রস্তাবই দিতে হয়েছে।”

এদিকে ইসরায়েল এখনও পর্যন্ত এই বিষয়ের বিষয়ে কোনও আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেনি। তবে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে, ইরান যদি মার্কিন প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে, তাহলে ইসরায়েলি প্রশাসন ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ বিবেচনা করতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি, তবে শীঘ্রই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁর Truth Social পেজে এই বিষয়ে পোস্ট করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।


গাজার সাম্প্রতিক সংঘর্ষ: ইসরায়েলি সৈন্যের গুলিতে হতাহত ফিলিস্তিনিরা

ইরানের বর্ণিত ঘটনাবলোর পাশাপাশি, গাজার সীমান্ত অঞ্চলে তীব্র সংঘর্ষেরও খবর পাওয়া গেছে। শুক্রবার সকালে ইসরায়েলি সৈন্যরা গাজা উপত্যকার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান অব্যাহত রাখে। সেই সময় শরণার্থীদের জন্য বরাদ্দকৃত একটি মানবিক সাহায্য বিতরণ কেন্দ্রে কিছু লোক কাছে গিয়ে সাহায্য নিতে চাইলে, দূর থেকেই গুলি চালানো হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। খবর অনুযায়ী, ইসরায়েলি সেনারা গাজা উপত্যকার উত্তরপূর্ব অংশে একটি চিহ্নিত রাস্তা থেকে বিচ্যুত হওয়া প্রায় ত্রৈতাংশ মাইল দূরে দাঁড়ানো স্বাভাবিক পোশাকধারী বেশ কিছু ফিলিস্তিনি নাগরিকদের লক্ষ্য করে ফাঁকাগুলি ছুঁড়ে বলে বলা হচ্ছে। এতে অন্তত কয়েকজন নিহত ও আধা ডজনেরও বেশি আহত হয়েছেন; আহতদের মধ্যে রয়েছে নারী ও শিশু ও বয়স্কদেরাও।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (IDF) এক বিবৃতিতে জানায়, তারা আহত হওয়ার খবর পেয়েছে এবং বর্তমান পরিস্থিতি তদন্তের কাজ চলছে। একইসঙ্গে দাবি করা হয়েছে, নিজেদের নিয়মিত চিহ্নিত রুট থেকে বিচ্যুত হওয়ায় এই ঘটনা ঘটেছে। তবে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, আহত ও নিহতদের অধিকাংশই নিরস্ত্রী পর্যায়ে সাধারণ পোশাকের মধ্যে ছিল—এমনকি তারা ওই দিন কোনো সামরিক গিয়ারও বহন করছিলেন না।

ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আরও দাবি করেছেন, “ইসরায়েল গাজার মানুষের মানবিক সহায়তা গ্রহণে কোনও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে না। আর IDF কখনোই শরণার্থী সহায়তা কেন্দ্রের আশেপাশে থাকা নিরস্ত্রী শিশু, নারী বা অন্য কারও ওপর গুলি করেনি।” কিন্তু স্থানীয় হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, আহতদের বেশিরভাগকে সামরিক পোশাকবিহীন অবস্থাতে দ্রুত চিকিৎসার জন্য নেয়া হয়েছে।

এদিকে গত সপ্তাহান্তে গাজার উত্তরে হামাসের একজন সক্রিয় সদস্যের স্থানে রাখা বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে, जिसमें তিনজন ইসরায়েলি সৈন্য নিহত হন। হামাস এই বিস্ফোরণের দায় স্বীকার করেছে। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে গাজার অন্তর্গত হিউম্যানিটারিয়ান করিডোরের আশপাশে বারবার এই ধরনের গোলাগুলির খবর পাওয়া যাচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন এক বিবৃতিতে আহ্বান জানিয়েছে, “এই এড়িয়ে চলার মতো পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় কূটনৈতিক সমাধান। যাতে গাজার সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ থামুক এবং হামাসের দায়ী থাকা বন্দীরা মুক্তি পায়।” তবে কোনও স্থায়ী উপরোক্ত সমঝোতায় এখনও দেখা মেলে নাই—যদিও উভয় পক্ষই কিছুটা আলাদা সমঝোতা প্রস্তাব নিয়ে আলোচনায় বসেছিল।

বর্তমানযুগে গাজা উপত্যকার এই চলমান সংঘর্ষে পক্ষ–প্রতিপক্ষের দাবি-প্রত্যাখ্যান, আর ঘটনার নিরপেক্ষ সত্য উদঘাটন প্রত্যেকবারই আন্তর্জাতিক মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার নীরব থাকছে না; তাদের অভিমত, যদি দ্রুত কোনও দৃশ্যমান উপায়ে সংঘাত কমানো না যায়, তবে এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষের দুর্দশা আরও তীব্র প্রকৃতি ধারণ করবে।


উপরোক্ত উভয় ঘটনাই নির্দেশ করছে, মধ্যপ্রাচ্যে পারমাণবিক আলোচনা থেকে শুরু করে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার পথ এখনও আবছা, এবং কোথায় কোথায় সংঘাত সীমাবদ্ধ থাকবে তা নির্ধারণে আন্তর্জাতিক মহল সবসময় যুক্ত থাকতে হবে।

0%
0%
0%
0%