২০২৫ সালের রসায়নে নোবেল পুরস্কার পেলেন যে তিন বিজ্ঞানী

২০২৫ সালের রসায়নে নোবেল পুরস্কার পেলেন যে তিন বিজ্ঞানী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশঃ অক্টোবর 8, 2025 5:23 অপরাহ্ন

রসায়নের জগতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে ২০২৫ সালের নোবেল পুরস্কার অর্জন করেছেন তিন বিজ্ঞানী— সুসুমু কিটাগাওয়া , রিচার্ড রবসন এবং ওমর এম. ইয়াগি
তাঁরা যৌথভাবে এই সম্মান অর্জন করেছেন “মেটাল–অর্গানিক ফ্রেমওয়ার্ক ” নামের এক যুগান্তকারী রাসায়নিক কাঠামো উদ্ভাবনের জন্য।

বিজ্ঞাপন

কেন তাঁরা এই পুরস্কার পেলেন

এই তিন গবেষকের আবিষ্কৃত মেটাল-অর্গানিক ফ্রেমওয়ার্ক হচ্ছে এক ধরনের অতি সূক্ষ্ম ও ছিদ্রযুক্ত পদার্থ, যা ধাতব আয়ন ও জৈব যৌগের সমন্বয়ে গঠিত।
এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো— খুব সামান্য জায়গার মধ্যে বিপুল পরিমাণ গ্যাস, তরল বা অণু সংরক্ষণ করা যায়।

এই প্রযুক্তি ভবিষ্যতের জ্বালানি ও পরিবেশ সমাধানের সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, MOF ব্যবহার করে—

  • বাতাস থেকে জল আহরণ করা সম্ভব, যা মরুভূমি অঞ্চলে বিশুদ্ধ পানির সরবরাহে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখতে পারে।
  • কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে তা সংরক্ষণ বা পরিবেশে নির্গমন কমানো সম্ভব হবে।
  • বিষাক্ত গ্যাস বা রাসায়নিক পদার্থ পরিশোধনের কাজে এটি ব্যবহার করা যাবে।

নোবেল কমিটির এক সদস্য বলেন,

বিজ্ঞাপন

“তাঁদের আবিষ্কার এমন এক পদার্থ উপহার দিয়েছে, যা ক্ষুদ্র হলেও ধারণক্ষমতায় বিশাল— যেন হ্যারি পটার গল্পের হারমায়োনির ব্যাগের মতো, বাইরে ছোট কিন্তু ভেতরে অসীম।”


বৈজ্ঞানিক প্রভাব ও ভবিষ্যৎ প্রয়োগ

এই আবিষ্কারের প্রভাব রসায়ন ছাড়িয়ে এখন উপাদানবিজ্ঞান , জ্বালানি, পরিবেশ সংরক্ষণ এবং ফার্মাসিউটিক্যাল গবেষণায় ব্যাপকভাবে বিস্তৃত হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মেটাল-অর্গানিক ফ্রেমওয়ার্ক প্রযুক্তি ভবিষ্যতে পরিষ্কার জ্বালানি সংরক্ষণ, কার্বন নিরপেক্ষতা এবং পরিবেশবান্ধব রাসায়নিক উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।


পুরস্কার মূল্য ও ঘোষণা

২০২৫ সালের রসায়ন নোবেলের মোট পুরস্কারমূল্য ১১ মিলিয়ন সুইডিশ ক্রোনা , যা তিনজনের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হবে।
পুরস্কার ঘোষণা করেন সুইডিশ রয়্যাল একাডেমি অব সায়েন্সেস, বুধবার ৮ অক্টোবর স্থানীয় সময় দুপুরে স্টকহোমে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে।


পুরস্কারজয়ীদের সংক্ষিপ্ত পরিচয়

  • সুসুমু কিটাগাওয়া – জাপানের কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক।
  • রিচার্ড রবসন – অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক।
  • ওমর এম. ইয়াগি– যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বার্কলের অধ্যাপক।

তাঁরা ১৯৯০-এর দশক থেকেই পৃথকভাবে মেটাল-অর্গানিক ফ্রেমওয়ার্ক কাঠামোর তাত্ত্বিক ও প্রয়োগমূলক গবেষণায় নিয়োজিত ছিলেন।


বিশ্বজুড়ে প্রতিক্রিয়া

পুরস্কার ঘোষণার পর বিশ্বজুড়ে বিজ্ঞানীরা এই আবিষ্কারকে “সবচেয়ে প্রভাবশালী রাসায়নিক স্থাপত্যের উদ্ভাবন” হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও প্রযুক্তি কোম্পানি ইতোমধ্যেই মেটাল-অর্গানিক ফ্রেমওয়ার্ক-ভিত্তিক গ্যাস সংরক্ষণ ও জল আহরণ প্রযুক্তির পেটেন্ট এবং বাণিজ্যিক উৎপাদনে আগ্রহ দেখাচ্ছে।


তথ্যসূত্র: নোবেলপ্রাইজ ওয়েবসাইট

0%
0%
0%
0%