লাদাখে ভয়াবহ সহিংসতা, চারজন নিহত, উত্তেজনা চরমে

ভারতের অন্যতম শান্তিপূর্ণ এলাকা হিসেবে পরিচিত লাদাখে হঠাৎ করেই ভয়াবহ সহিংসতার বিস্তার ঘটেছে। গতকাল বুধবার বিকেলে লেহ শহরে ব্যাপক সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও পাথর নিক্ষেপের ঘটনায় অন্তত চারজন প্রাণ হারিয়েছেন এবং ৭০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় পুরো এলাকা জুড়ে এখনো উত্তেজনা বিরাজ করছে।
র্যালি ও মিছিলে নিষেধাজ্ঞা
প্রশাসন জানিয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে লেহ শহরে কোনো ধরনের র্যালি, মিছিল বা গণজমায়েতের অনুমতি দেওয়া হবে না। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে অতিরিক্ত চার কোম্পানি সিআরপিএফ মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি আইটিবিপি ও স্থানীয় পুলিশও কড়া পাহারা দিচ্ছে।
ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ
সহিংসতায় বিক্ষোভকারীরা বিজেপির আঞ্চলিক কার্যালয়সহ একাধিক ভবনে হামলা চালায়। লাদাখ হিল ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিলের প্রধান কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ করা হয়। সরকারি গাড়ি ও নিরাপত্তা বাহিনীর যানবাহনেও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পুরো এলাকায় ভাঙা কাচ ও পাথর ছড়িয়ে আছে। ভবনের জানালা-দরজা ভাঙচুর করা হয়েছে।
গ্রাউন্ড রিপোর্টে দেখা গেছে, লাদাখ হিল ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিল ভবন সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়েছে। একাধিক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সহিংসতার মাত্রা এতটাই ভয়াবহ ছিল যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রশাসন বিএএনএস-এর ধারা ১৬৩ জারি করেছে, ফলে এখন বড় আকারে জমায়েত নিষিদ্ধ।
তদন্ত শুরু, অভিযোগ সোনম ওয়াংচুকের বিরুদ্ধে
সহিংসতার নেপথ্যে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র আছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে তদন্ত শুরু করেছে প্রশাসন। তবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রাথমিকভাবে পরিবেশবাদী নেতা সোনম ওয়াংচুককে দায়ী করেছে। মন্ত্রণালয়ের অভিযোগ, ওয়াংচুকের একাধিক উসকানিমূলক বক্তব্যের কারণে জনতা উত্তেজিত হয়ে সহিংস বিক্ষোভে জড়িয়ে পড়ে।
আতঙ্কে স্থানীয়রা
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সহিংসতার পর থেকে শহরে কার্যত কারফিউ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। রাস্তাঘাট প্রায় ফাঁকা, বাজার ও দোকানপাট বন্ধ। মানুষ ঘরে অবস্থান করছেন। সকাল-সন্ধ্যা নিরাপত্তা বাহিনী টহল জোরদার করেছে, যাতে নতুন করে কোনো সংঘর্ষ না ঘটে।
কী ঘটেছিল গতকাল
চোখে পড়ার মতো দৃশ্য ছিল পাথর ছোড়া, গাড়ি ভাঙচুর, ভবনে আগুন লাগানো এবং পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ। সাংবাদিক আদিত্য রাজ কল জানিয়েছেন, বিক্ষোভকারীরা কয়েকটি সরকারি ভবন একেবারে ধ্বংস করে দিয়েছে। তার ক্যামেরায় ধরা পড়া চিত্রে দেখা গেছে, রাস্তায় ইটপাথর ছড়িয়ে আছে, ভবনের জানালাগুলো ভাঙা এবং নিরাপত্তা বাহিনী চারদিকে মোতায়েন রয়েছে।
পরিস্থিতি উত্তপ্ত
চারজনের মৃত্যু এবং বহু মানুষের আহত হওয়ার ঘটনায় উত্তেজনা আরও বেড়েছে। প্রশাসনের আশঙ্কা, সহিংসতার পেছনে বড় কোনো সংগঠিত পরিকল্পনা থাকতে পারে। তবে সরকার বলছে, যেকোনো মূল্যে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা হবে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তথ্যসূত্র: সিএনএন , এনডি টিভি , এ এন আই