মার্কিন শুল্ক আলোচনায় সাফল্য: অন্তর্বর্তী সরকারের বড় অর্জন — প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব

প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক আলোচনায় বাংলাদেশের ২০ শতাংশ শুল্ক নিশ্চিত করা অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম বড় অর্জন।
আজ শনিবার সকালে রাজধানীর ফার্মগেটের ডেইলি স্টার ভবনে আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন। “বাংলাদেশ অ্যান্ড ট্রাম্প ট্যারিফস: ইকোনমিক ডিপ্লোমেসি ইন আ ওয়ার্ল্ড আফটার ট্রেড রেজিম” শীর্ষক এ আলোচনার আয়োজন করে বাংলাদেশ রিসার্চ অ্যানালাইসিস অ্যান্ড ইনফরমেশন নেটওয়ার্ক (ব্রেইন)। অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. রাশেদ আল তিতুমীর, অর্থনীতিবিদ জ্যোতি রহমান ও জিয়া হাসান বক্তব্য রাখেন।
শফিকুল আলম বলেন, “অনেকে দাবি করেছিলেন অন্তর্বর্তী সরকার দুর্বল ও অভিজ্ঞতাহীন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভালো চুক্তি করতে অক্ষম। কিন্তু আমরা প্রমাণ করেছি সঠিক প্রস্তুতি ও আত্মবিশ্বাস থাকলে একটি অন্তর্বর্তী সরকারও বড় সাফল্য অর্জন করতে পারে।”
তিনি জানান, শুরু থেকেই সরকার জানত এর মেয়াদ সীমিত। তাই এমন খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে যেখান থেকে তাৎক্ষণিক ও বাস্তবসম্মত ফল পাওয়া সম্ভব।
প্রেসসচিব উল্লেখ করেন, রোহিঙ্গা সংকট ও যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতি — দুটোই সরকারের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ ছিল। “অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই প্রতিবেশী একটি দেশের গণমাধ্যম বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করেছিল। কিন্তু কূটনৈতিকভাবে প্রস্তুতি নিয়ে বাংলাদেশ তা মোকাবিলা করেছে,” তিনি বলেন।
তিনি আরও জানান, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় বুঝতে পারেন ট্রাম্প প্রশাসন বৈশ্বিক ঐকমত্য থেকে সরে গিয়ে একতরফা শুল্কনীতি নিচ্ছে। এরপর বাংলাদেশ প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেয়।
আলোচনায় তিনি বলেন, এই সাফল্যের পেছনে তিনটি শক্তি ভূমিকা রেখেছে— প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের যুক্তরাষ্ট্রে ব্যক্তিগত যোগাযোগ ও গ্রহণযোগ্যতা, ড. খলিলুর রহমানের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা এবং বাণিজ্য উপদেষ্টা এসকে বশির উদ্দিনের বৈশ্বিক বাজার সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা।
বাংলাদেশের প্রধান সুবিধার বিষয়েও তিনি আলোকপাত করেন: “কটন, তেল, মুরগির খাদ্য বা ভোজ্যতেল—প্রায় সব খাতেই এখন বাংলাদেশ বৈশ্বিক বাজারে গুরুত্বপূর্ণ ক্রেতা। আলোচনায় এ বাস্তবতাকে আমরা কাজে লাগিয়েছি।”
তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ব্রাজিল, দক্ষিণ আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি দ্রুত বাড়ছে। এজন্য বাজার বহুমুখীকরণের দিকেও সরকার নজর দিচ্ছে।
চট্টগ্রাম বন্দর ও লজিস্টিক ব্যবস্থার সংস্কারকে বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধির শর্ত হিসেবে উল্লেখ করে শফিকুল আলম বলেন, “চট্টগ্রাম বন্দর যদি সিঙ্গাপুরের মতো দক্ষ করা যায়, বিদেশি বিনিয়োগ থামানো যাবে না।”
অর্থনীতির বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের পদক্ষেপে মুদ্রাস্ফীতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়েছে এবং অর্থনীতি স্থিতিশীল হয়েছে। “আমরা হয়তো ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারিনি, কিন্তু আন্দোলন-উত্তর সময়ে ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি পাওয়া ছোট সাফল্য নয়।”
ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে শফিকুল আলম বলেন, শুল্ক আলোচনায় সাফল্যের ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি নতুন সম্ভাবনার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক আরও গভীর হবে।
“আমরা চাই বিশাল মার্কিন বাজারে আরও প্রবেশাধিকার। জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান বা ভিয়েতনামের মতো আমরাও বিশ্বাস করি, যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি বাড়াতে পারলে বাংলাদেশ সমৃদ্ধির নতুন পথে এগিয়ে যাবে,” তিনি যোগ করেন।
তথ্যসূত্র: BSS