ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে আলাস্কায় ট্রাম্প-পুতিন বৈঠক আগামী শুক্রবার

ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে আলাস্কায় ট্রাম্প-পুতিন বৈঠক আগামী শুক্রবার
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশঃ আগস্ট 9, 2025 12:10 অপরাহ্ন

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আগামী শুক্রবার (১৫ আগস্ট) আলাস্কায় বৈঠক করবেন ইউক্রেন যুদ্ধের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করতে।

বিজ্ঞাপন

শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রাম্প এ বৈঠকের ঘোষণা দেন, যা পরে ক্রেমলিনের মুখপাত্রও নিশ্চিত করেন। মুখপাত্র বলেন, আলাস্কার অবস্থান রাশিয়ার তুলনামূলক নিকটে হওয়ায় স্থানটি “খুবই যৌক্তিক”। ইউক্রেন থেকে এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

এ বৈঠকের ঘোষণা আসে কয়েক ঘণ্টা পরই, যখন ট্রাম্প ইঙ্গিত দেন যে, যুদ্ধ শেষ করতে ইউক্রেনকে কিছু এলাকা ছেড়ে দিতে হতে পারে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার পূর্ণাঙ্গ আগ্রাসনের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া এ যুদ্ধে তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে দুই পক্ষের হাজার হাজার সৈন্য নিহত হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, “এখানে কিছু এলাকা আমরা ফেরত পাব, কিছু এলাকা অদলবদল হবে। উভয় পক্ষের কল্যাণে কিছু বিনিময় হবে।” তবে তিনি বিস্তারিত প্রস্তাব প্রকাশ করেননি।

বিজ্ঞাপন

মার্কিন গণমাধ্যম সিবিএস নিউজের বরাত দিয়ে জানা গেছে, হোয়াইট হাউস ইউরোপীয় নেতাদের এমন এক সমঝোতা মেনে নিতে রাজি করানোর চেষ্টা করছে, যাতে রাশিয়া সম্পূর্ণ দনবাস অঞ্চল ও ক্রিমিয়া নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখবে। তবে খেরসন ও জাপোরিঝিয়া অঞ্চল, যেগুলোর আংশিক দখল রাশিয়ার হাতে, তা ছেড়ে দেবে।

ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের খবরে বলা হয়েছে, সম্প্রতি মস্কোতে ট্রাম্পের দূত স্টিভ উইটকফের সঙ্গে এক বৈঠকে পুতিন অনুরূপ প্রস্তাব দিয়েছেন। তবে ইউক্রেন ও তার মিত্ররা এ ধরনের সমঝোতায় রাজি হবে কি না, তা এখনো অনিশ্চিত। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি পূর্বেই যে কোনো ভূখণ্ড ছাড় দেওয়ার শর্ত নাকচ করেছেন।

হোয়াইট হাউসের এক সিনিয়র কর্মকর্তা সিবিএসকে জানিয়েছেন, আগামী শুক্রবারের বৈঠকের পরিকল্পনা এখনো চূড়ান্ত হয়নি এবং জেলেনস্কিরও এতে কোনোভাবে সম্পৃক্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

২০২২ সালের আগ্রাসনের পর থেকে রাশিয়া ইউক্রেনের প্রায় ২০ শতাংশ ভূখণ্ড দখল করে রেখেছে। ইউক্রেনের পাল্টা আক্রমণেও রাশিয়ার সেনাদের পিছনে ঠেলে দেওয়া সম্ভব হয়নি। ইস্তাম্বুলে ইউক্রেন-রাশিয়ার মধ্যে তিন দফা সরাসরি আলোচনায়ও যুদ্ধ শেষ করার কোনো অগ্রগতি হয়নি।

রাশিয়ার শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে—ইউক্রেনকে নিরপেক্ষ রাষ্ট্রে পরিণত হওয়া, সামরিক বাহিনী উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করা, ন্যাটোতে যোগদানের আকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করা এবং পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া। এছাড়া দক্ষিণ-পূর্ব ইউক্রেনের আংশিক দখলকৃত চার অঞ্চল থেকে ইউক্রেনীয় সেনা প্রত্যাহার ও সেনা সদস্যদের অবসরে পাঠানোর দাবি করেছে মস্কো।

তবে ট্রাম্প শুক্রবার জোর দিয়ে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এখনো ত্রিপক্ষীয় শান্তি চুক্তির সুযোগ আছে। “ইউরোপীয় নেতারা শান্তি চান, প্রেসিডেন্ট পুতিন শান্তি চান, আর প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিও শান্তি চান বলে আমি বিশ্বাস করি,” বলেন তিনি।

গত মাসে বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প জানান, তিনি চারবার ভেবেছিলেন রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধের অবসান ঘটাতে চুক্তি হতে পারে। “আমি তার (পুতিনের) ওপর হতাশ, কিন্তু এখনো তার সঙ্গে সম্পর্ক শেষ করিনি,” বলেন ট্রাম্প।

সম্প্রতি ক্রেমলিনের প্রতি অবস্থান আরও কঠোর করে ট্রাম্প রাশিয়াকে ৮ আগস্টের মধ্যে যুদ্ধবিরতিতে রাজি হওয়ার সময়সীমা দেন, নতুবা আরও কড়া নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দেন। তবে সময়সীমা ঘনিয়ে আসতেই এ অর্থনৈতিক চাপ আড়াল হয়ে যায় ট্রাম্প-পুতিন সরাসরি বৈঠকের পরিকল্পনায়। শুক্রবার হোয়াইট হাউস থেকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞার কোনো ঘোষণা আসেনি।

উল্লেখযোগ্যভাবে, এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে ট্রাম্প ও পুতিনের মধ্যে টেলিফোনে প্রথম সরাসরি কথা হয় ২০২২ সালের আগ্রাসনের পর। সর্বশেষ কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট ২০২১ সালে পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন, যখন জো বাইডেন সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় তার সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন।

তথ্যসূত্র: BBC News

0%
0%
0%
0%