বাংলাদেশে আন্দোলনের এক বছর: পরিবর্তনের পথে এখনও অনেক দূর – আলজাজিরার প্রতিবেদন

বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনের এক বছর পূর্তিতে দেশজুড়ে পালিত হচ্ছে নানা কর্মসূচি ও র্যালি। ২০২৪ সালের ৫ জুন হাইকোর্ট সরকারী চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের জন্য ৩০% কোটা পুনর্বহাল করে, যা ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাতিল করেছিলেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শুরু হয়, যা ধীরে ধীরে রূপ নেয় দেশব্যাপী রক্তক্ষয়ী বিক্ষোভে।
আন্দোলনের সূত্রপাত ও সংঘর্ষ
জুলাইয়ের মাঝামাঝি আন্দোলন সহিংস রূপ নেয়। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে সরকারি দল আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ’ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংঘর্ষ ঘটে। আলজাজিরার তথ্য অনুযায়ী, এসময় অন্তত ১৮৭ জন নিহত এবং প্রায় ১,০০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার
চরম সংকটের মধ্যেই আগস্টের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশত্যাগ করেন, যার মাধ্যমে তার টানা ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। এরপর তিনদিনের মাথায় শান্তি প্রতিষ্ঠা ও নির্বাচনের প্রস্তুতির লক্ষ্যে গঠিত হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, যার নেতৃত্বে আসেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
প্রথম বার্ষিকী: উৎসবমুখর ঢাকার চিত্র
আন্দোলনের এক বছর পূর্তিতে ঢাকার রাজপথে উৎসবমুখর পরিবেশ লক্ষ্য করা গেছে। শহরের বিভিন্ন প্রান্তে র্যালি ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্র সমাবেশের প্রস্তুতি চলছে, যা থেকে ‘জুলাই ঘোষণা’ ও ‘জুলাই সনদ’ প্রকাশের প্রত্যাশা রয়েছে।
আলজাজিরার সাংবাদিক তামীম চৌধুরী জানাচ্ছেন, “এই ঘোষণার মাধ্যমে আন্দোলনকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া হবে এবং সুশাসন, প্রশাসনিক সংস্কার ও নির্বাচন সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে দিকনির্দেশনা থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।” এছাড়া আজকের সমাবেশে নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা হওয়ারও জোর সম্ভাবনা রয়েছে।
রাজনীতিক রুমিন ফারহার মন্তব্য
সাবেক সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা আলজাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “২০২৪ সালের আগস্টে শেখ হাসিনার দেশত্যাগ আমাদের জন্য ১৯৭১ সালের পর দ্বিতীয় বিজয় ছিল। আমরা আশা করেছিলাম মানবাধিকার, ভোটাধিকার এবং আইনের শাসন ফিরে আসবে। কিন্তু এখনো অনেক ক্ষেত্রে সেই স্বপ্ন বাস্তব হয়নি।”
তিনি আরও বলেন, “যদিও বর্তমান সরকার চেষ্টা করছে, তবে এক বছরের মধ্যে ১৫ বছরের স্বৈরশাসনের ক্ষত মেরামত করা কঠিন। নতুন সরকারের আরও সময় প্রয়োজন। তবে তারা যদি দ্রুত নির্বাচনের দিন ঘোষণা করে এবং জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে, তবে জনগণ আরও আশাবাদী হবে।”
শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন বিষয়ে প্রশ্ন
শেখ হাসিনা বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন। তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন রুমিন ফারহানা। তিনি অভিযোগ করেন, “তিনি শুধু আন্দোলন দমন করেননি, আহতদের চিকিৎসাও বন্ধ রাখতে আদেশ দিয়েছিলেন। তাকে ফিরিয়ে এনে জবাবদিহির আওতায় আনা জরুরি।”
সামনে কী?
আন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন আয়োজনের জন্য সময়সীমা নির্ধারণ করলেও এখনও সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করা হয়নি। তবে আজকের সমাবেশে তার ঘোষণা আসতে পারে বলে অনেকে প্রত্যাশা করছেন।
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এক বছরের মধ্যে নাটকীয় পরিবর্তন ঘটলেও স্থিতিশীলতা এখনও আসেনি। আন্দোলনের জয় উদযাপন হলেও, সামনে এখনো একটি অনিশ্চিত রাজনৈতিক লড়াই অপেক্ষা করছে।
তথ্যসূত্র: আলজাজিরা