আইডাহো বিশ্ববিদ্যালয়ের চার ছাত্রছাত্রী হত্যাকাণ্ড: ব্রায়ান কোহবার্গার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে রাজি, মৃত্যুদণ্ড থেকে রেহাই পাচ্ছেন

২০২২ সালের নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের আইডাহো বিশ্ববিদ্যালয়ের চার শিক্ষার্থীকে নির্মমভাবে হত্যা করার অভিযোগে অভিযুক্ত ব্রায়ান কোহবার্গার অবশেষে সব অভিযোগে দোষ স্বীকার করতে সম্মত হয়েছেন। এই সিদ্ধান্তের ফলে তিনি মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি হচ্ছেন না, তবে প্রাপ্ত হচ্ছেন চারটি ধারাবাহিক যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং একটি চুরির অভিযোগে সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ড।
মামলার প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে নিহতদের পরিবারের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে জানানো হয়েছে, আসন্ন বুধবার (২ জুলাই) কোহবার্গার আনুষ্ঠানিকভাবে দোষ স্বীকার করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এরপর জুলাই মাসের শেষ দিকে তার সাজা ঘোষণা হতে পারে।
🔪 ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড ও অভিযোগ
ব্রায়ান কোহবার্গারের বিরুদ্ধে চার শিক্ষার্থী—কেইলি গনকালভস, ম্যাডিসন মোজেন, জানা কার্নোডল এবং কার্নোডলের প্রেমিক ইথান চ্যাপিন—কে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছিল। তারা একই ছাদের নিচে থাকতেন। হত্যাকাণ্ডটি ঘটে ২০২২ সালের ১৩ নভেম্বর, গভীর রাতে, মেয়েদের অফ-ক্যাম্পাস বাড়িতে।
প্রসিকিউটরদের মতে, কোহবার্গার চারটি প্রথম-ডিগ্রি হত্যা এবং একটি চুরির অভিযোগে অভিযুক্ত ছিলেন। DNA পরীক্ষায় তার নমুনা একটি KA-BAR ছুরির খাপে পাওয়া যায়, যা এক ভুক্তভোগীর দেহের কাছে ছিল।
⚖️ চুক্তির শর্ত
প্লি চুক্তি অনুযায়ী:
- তিনি চারটি ধারাবাহিক যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাচ্ছেন হত্যা মামলায়।
- চুরির অভিযোগে সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ড হবে।
- তিনি আপিল করার সব অধিকার ত্যাগ করছেন।
- রাষ্ট্র ক্ষতিপূরণ দাবি করবে ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর জন্য।
🧑⚖️ বিচার পিছিয়ে গেল, পরিবার ক্ষুব্ধ
আগামী ৪ আগস্ট থেকে এই মামলার জুরি নির্বাচন শুরু হওয়ার কথা ছিল এবং ১৮ আগস্ট থেকে মূল বিচারপর্ব। কিন্তু তার আগেই আসামী পক্ষ থেকে প্রসিকিউটরদের সঙ্গে যোগাযোগ করে দোষ স্বীকারের প্রস্তাব দেয়।
প্রসিকিউশন চিঠিতে লিখেছে—
“এই চুক্তি আপনাদের পরিবারের জন্য ন্যায়বিচার পাওয়ার আন্তরিক চেষ্টা। এটি নিশ্চিত করবে যে আসামি দোষী সাব্যস্ত হবে, বাকি জীবন কারাগারে কাটাবে, এবং আপনাদের আর কোনো দীর্ঘ আপিল প্রক্রিয়ার মুখোমুখি হতে হবে না।”
তবে গনকালভস পরিবার এই সিদ্ধান্তে চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। তাদের অভিযোগ, লাটাহ কাউন্টির প্রসিকিউটর অফিস চুক্তির বিষয়ে তাদের যথাযথভাবে জানায়নি।
এক বিবৃতিতে তারা বলেন—
“শুক্রবার শুধু সম্ভাব্য প্লি ডিলের কথা হালকা ইঙ্গিতে জানানো হয়, আর রবিবারই সেটি চূড়ান্ত করে ফেলেছে প্রসিকিউশন। আমাদের মতামত নেয়নি কেউ। এমন একটি বড় সিদ্ধান্তের ব্যাপারে একটি সাধারণ ইমেইলের মাধ্যমে জানানো হয়েছে।”
তারা আরও বলেন—
“দুই বছরেরও বেশি সময় পরে, এই মামলার এমন গোপনীয় এবং তড়িঘড়ি নিষ্পত্তি আমাদের পরিবারকে ব্যথিত করেছে। আমরা হতাশ, কিন্তু একসাথে এই বাস্তবতা মেনে নিয়ে এগিয়ে যাব।”
🧬 কীভাবে ধরা পড়েছিলেন কোহবার্গার?
হত্যাকাণ্ডের সাত সপ্তাহ পর, ২০২২ সালের ডিসেম্বরে, কোহবার্গারকে পেনসিলভানিয়ায় তার পরিবারের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। সে সময় তিনি আইডাহোর সীমান্তে অবস্থিত ওয়াশিংটন স্টেট ইউনিভার্সিটির একজন অপরাধবিজ্ঞান পিএইচডি শিক্ষার্থী ছিলেন।
আদালত নথি অনুযায়ী, ঘরের ভেতর থাকা এক রুমমেট মাঝরাতে এক অপরিচিত পুরুষকে হেঁটে যেতে দেখেছিলেন। তার বর্ণনা অনুযায়ী, লোকটির গায়ে বেশি মাংসপেশি ছিল না, তবে ছিল অ্যাথলেটিক গঠন ও গোঁফের মতো গাঢ় ভ্রু। এই বর্ণনার সঙ্গে DNA প্রমাণ মিলে যায় কোহবার্গারের সঙ্গে।
🎓 বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিক্রিয়া
আইডাহো বিশ্ববিদ্যালয় এক বিবৃতিতে বলেছে—
“এই রায়ের ফলাফলের সঙ্গে প্রতিটি পরিবার নিজের মতো করে মানিয়ে নিচ্ছে। কোনো বিচারই তাদের হারানো সন্তানদের ফিরিয়ে দিতে পারবে না। আমরা কখনোই এই চারটি অসাধারণ জীবনকে ভুলবো না।”
📌 সারসংক্ষেপ:
- কোহবার্গার দোষ স্বীকার করছেন, ফলে মৃত্যুদণ্ড এড়াচ্ছেন।
- চারটি হত্যাকাণ্ডে ধারাবাহিক যাবজ্জীবন এবং চুরির অভিযোগে ১০ বছরের কারাদণ্ড হবে।
- আপিলের অধিকার ত্যাগ করেছেন তিনি।
- ভুক্তভোগীদের পরিবারগুলোর কিছু অংশ এই রায়ে ক্ষুব্ধ।
- আইডাহো বিশ্ববিদ্যালয় বলছে—চার তরুণ প্রাণের হারানোর শোক তারা কখনো ভুলবে না।
এই মামলার নিষ্পত্তি হয়তো আইনি প্রক্রিয়া শেষ করছে, তবে ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর হৃদয়ে ক্ষত রেখে গেলো চিরস্থায়ীভাবে।