যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ঘোষণাঃ ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় ব্যাপক হামলা, “সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস”

ডোনাল্ড ট্রাম্প
আজ ভোররাতে হোয়াইট হাউস থেকে জাতির উদ্দেশে এক জরুরি ভাষণে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন যে, মার্কিন সামরিক বাহিনী ইরানের তিনটি প্রধান পারমাণবিক স্থাপনায় ব্যাপক ও নির্ভুল হামলা চালিয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একে “ব্যতিক্রমধর্মী সামরিক সাফল্য” আখ্যা দিয়ে বলেন, “ইরানের মূল পারমাণবিক সমৃদ্ধিকরণ সুবিধাগুলো সম্পূর্ণরূপে ও সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করা হয়েছে।”
তিনি জানান, লক্ষ্য ছিল ইরানের পরমাণু কর্মসূচি সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করা এবং বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ সন্ত্রাসী পৃষ্ঠপোষক রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আসা পারমাণবিক হুমকি বন্ধ করা।
লক্ষ্যবস্তু ও হামলার ফলাফল
তিনি উল্লেখ করেন, “নাটানজ (Natanz) এবং ইসফাহান (Esfahan)—এই দুটি নাম বহু বছর ধরে শোনা গেছে। এই ধ্বংসাত্মক স্থাপনাগুলো নির্মাণ করে তারা যা করেছে, তা মানবতার জন্য হুমকি।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা ৪০ বছর ধরে শুনেছি ‘আমেরিকার মৃত্যু’ এবং ‘ইসরায়েলের মৃত্যু’ স্লোগান। roadside বোমায় আমাদের সেনারা প্রাণ হারিয়েছে, হাত-পা হারিয়েছে। আমরা তা আর মেনে নেব না।”
নেতাদের প্রশংসা ও হুঁশিয়ারি
তিনি ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “আমরা একটি টিম হিসেবে কাজ করেছি, সম্ভবত ইতিহাসের সবচেয়ে শক্তিশালী টিম হিসেবে।”
তিনি মার্কিন সেনাবাহিনী ও বিমানবাহিনীর প্রশংসা করে বলেন, “তারা আজ রাতে এমন এক অভিযান সম্পন্ন করেছে যা বহু দশকেও দেখা যায়নি।”
এর পাশাপাশি তিনি চিফ অফ স্টাফ জেনারেল ড্যান রেইসন কেইন এবং মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসিথসহ সকল সামরিক পরিকল্পনাকারীদের প্রশংসা করেন।
তবে ট্রাম্প সতর্ক করে বলেন, “যদি ইরান শান্তি না আনে, তাহলে ভবিষ্যতের আক্রমণ হবে আরও বৃহৎ এবং সহজ। আজকের লক্ষ্য ছিল সবচেয়ে কঠিন, কিন্তু এখনও বহু লক্ষ্য বাকি আছে।”
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া ও বিতর্ক
হোয়াইট হাউসের সংবাদদাতা কিম্বারলি হ্যালেট বিশ্লেষণ করে বলেন, প্রেসিডেন্টের ভাষণে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর কোনও তাৎক্ষণিক বা আসন্ন হুমকির কথা উল্লেখ ছিল না, যা সংবিধান অনুযায়ী বৈধতার প্রশ্ন তোলে।
তিনি আরও বলেন, “প্রেসিডেন্ট বারবার ইসরায়েলের নিরাপত্তার কথা বলেছেন, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিয়ে তেমন কিছু বলেননি। এতে করে অনেক আমেরিকান মনে করছেন, এই হামলা মূলত ইসরায়েলের স্বার্থে পরিচালিত হয়েছে।”
ট্রাম্পের প্রশাসনের ভিতরেও মতপার্থক্য রয়েছে। ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসিথ অতীতে বিদেশি সংঘাতে জড়ানোর বিরোধিতা করলেও, এখন তাঁরা প্রেসিডেন্টের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এর ফলে রিপাবলিকান দলের মধ্যেও বিভাজন দেখা দিতে পারে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজেকে এমন একটি রাজনৈতিক অবস্থানে নিয়ে গেছেন যেখানে তাঁকে ভবিষ্যতে জবাবদিহি করতে হতে পারে। যদিও রিপাবলিকান-নিয়ন্ত্রিত কংগ্রেসে তাৎক্ষণিকভাবে অভিশংসনের সম্ভাবনা কম, তবে পরিস্থিতি দ্রুত পরিবর্তন হতে পারে।
পরবর্তী পদক্ষেপ
আগামীকাল সকাল ৮টায় পেন্টাগনে প্রেস ব্রিফিংয়ে হামলার বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরবেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসিথ ও জেনারেল রেইসন কেইন। হামলার প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি, ইরানের প্রতিক্রিয়া এবং ভবিষ্যতের কৌশল নিয়ে আরও তথ্য পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
শেষ কথা
ট্রাম্পের ভাষণের শেষাংশে ছিল ধর্মীয় আহ্বান ও সেনাবাহিনীর প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ—
“গড, আমরা তোমাকে ভালোবাসি। গড ব্লেস দ্য মিডল ইস্ট। গড ব্লেস ইসরায়েল। গড ব্লেস আমেরিকা।”
বিশ্ব এখন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে ইরানের প্রতিক্রিয়ার জন্য। এই হামলার মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে, যা আঞ্চলিক যুদ্ধের দিকে গড়াতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশ্লেষকরা।