ইরান-ইসরায়েল সংঘর্ষে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়ে বিরোধ—ট্রাম্প বলছেন “আমরা জড়িত নই”, কিন্তু ইরানের হাতে রয়েছে “প্রমাণ”

ইরান ও ইসরায়েলের চলমান সংঘর্ষ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে। একদিকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পরিষ্কারভাবে বলেছেন, ইরানে ইসরায়েলের সামরিক হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সরাসরি সম্পৃক্ততা নেই। অন্যদিকে, ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দাবি করেছেন—তাদের হাতে মার্কিন সম্পৃক্ততার শক্ত প্রমাণ রয়েছে।
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশঃ জুন 15, 2025 10:07 অপরাহ্ন

ইরান ও ইসরায়েলের চলমান সংঘর্ষ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে। একদিকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পরিষ্কারভাবে বলেছেন, ইরানে ইসরায়েলের সামরিক হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সরাসরি সম্পৃক্ততা নেই। অন্যদিকে, ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দাবি করেছেন—তাদের হাতে মার্কিন সম্পৃক্ততার শক্ত প্রমাণ রয়েছে।

ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আমাদের দৃঢ় প্রমাণ রয়েছে যে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা ঘাঁটি ও বাহিনী অঞ্চলটিতে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর হামলাকে সমর্থন ও সহায়তা করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সম্মতি ও সহায়তা ছাড়া ইসরায়েলি শাসকদের পক্ষ থেকে এই ধরনের আগ্রাসন সম্ভব হতো না।”

মার্কিন প্রতিক্রিয়া ও অভ্যন্তরীণ বিবেচনা

ওয়াশিংটনে আল জাজিরার প্রতিবেদক রোজলিন জর্ডান জানান, যদিও প্রকাশ্যে যুক্তরাষ্ট্র এই সংঘর্ষে জড়িত নয় বলে দাবি করছে, তবে কিছু নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে—মার্কিন সেনাবাহিনী ইসরায়েলের ভূখণ্ডে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধে ‘প্যাট্রিয়ট’ ও ‘থাড’ (THAAD) প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পরিচালনায় সহায়তা করেছে।

এছাড়াও, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প স্বীকার করেছেন যে, ইরানে ইসরায়েলের সামরিক হামলা চালানো হবে—এমন পরিকল্পনার বিষয়ে তিনি আগে থেকেই অবগত ছিলেন। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে গত সোমবার তাঁর কথোপকথন হয়েছিল বলে জানান ট্রাম্প। এরপর শুক্রবার হামলা শুরুর দিন তিনি তাঁর সামাজিক মাধ্যমে বলেন, “ইরানকে পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে কোনো সমঝোতায় পৌঁছাতে ৬০ দিন সময় দেওয়া হয়েছিল, হামলার দিন ছিল ৬১তম দিন।” ফলে মার্কিন প্রশাসনের ‘সচেতনতা’ ছিলো বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

ইসরায়েলের প্রত্যাশা এবং ট্রাম্প প্রশাসনের কৌশলগত দ্বিধা

তবে পরিস্থিতি এখন আরও জটিল হয়ে উঠেছে। হাইফা শহরে সরাসরি সম্প্রচারের সময় সাইরেন বেজে ওঠে, যেটি ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের তৃতীয় দিনে বাস্তব পরিস্থিতির একটি ইঙ্গিত দেয়। এই সময় রোজলিন বলেন, “ইসরায়েল চায় যুক্তরাষ্ট্র যেন সরাসরি ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানে সম্পৃক্ত হয়। তবে ট্রাম্প প্রশাসন এমন পদক্ষেপ নেওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।”

তিনি জানান, ট্রাম্প বারবার প্রচারে বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রকে বিদেশি যুদ্ধ থেকে সরিয়ে আনবেন এবং নতুন কোনো যুদ্ধে জড়াবেন না। এমনকি, তিনি তাঁর আগের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন ওয়াল্টকে বরখাস্ত করেছেন কারণ জন ওয়াল্ট গোপনে নেতানিয়াহুর সঙ্গে ইরানে আক্রমণ জোরদারের বিষয় নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। তাঁর জায়গায় আপাতত নতুন দায়িত্বে এসেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও।

যুক্তরাষ্ট্রে যুদ্ধবিরোধী মনোভাব

রোজলিন বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে যুদ্ধ নিয়ে ব্যাপক অনীহা রয়েছে। ইরাক ও আফগানিস্তানে ২০ বছরের যুদ্ধের অভিজ্ঞতার পর জনগণ আর কোনো নতুন যুদ্ধ চায় না।” ফলে দেশটির জনগণের মধ্যেও ইরান-ইসরায়েল সংঘর্ষে সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের অংশগ্রহণের বিরুদ্ধে প্রবল আপত্তি রয়েছে

এই মুহূর্তে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের পেছনে কারা কোনভাবে জড়িত, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি সম্পৃক্ত নয় বলেই দাবি করছে, তবে বাস্তবতা ও কূটনৈতিক সূত্র থেকে এর বিপরীত আভাস পাওয়া যাচ্ছে। পরিস্থিতির পরবর্তী মোড় কোন দিকে গড়ায়, তা সময়ই বলবে। তবে মার্কিন প্রশাসন আপাতত এই যুদ্ধে সরাসরি সম্পৃক্ত না হওয়ার পথেই হাঁটছে বলে মনে করা হচ্ছে।

100%
0%
0%
0%